‘টিপু সুলতানের তরবারি’ বা ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’ ছিল ঔপনিবেশিক ইংরেজ দখলদারদের বিরুদ্ধে উপমহাদেশের স্বাধীনতার শেষ হাতিয়ার। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ নামীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় বাংলা দখল করলেও দক্ষিণের টিপু সুলতানের তরবারি লুটেরা ইংরেজদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।
তবে বাংলার মতো দাক্ষিণাত্যেও চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উপমহাদেশের স্বাধীনতার শেষস্তম্ভ টিপু সুলতানকে হত্যা করে দখলদার ইংরেজরা। ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত দিনটি ছিল ৪ মে, ১৭৯৯ সাল, যেদিন করুণ রাজনৈতিক উপাখ্যানটি সংঘটিত হয়। আর তা ছিল পলাশীর প্রায়-অর্ধশত বছর পরের ঘটনা এবং ইংরেজ-বিরোধী সর্বশেষ সশস্ত্র প্রচেষ্টা।
ফতেহ আলী টিপু সুলতান জন্মগ্রহণ করেন ১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান কর্ণাটকের অন্তর্গত মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা, যে রাজ্য দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রসারিত ছিল।
টিপু ছিলেন প্রকৃতই একজন সাহসী, বীরযোদ্ধা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করেন। তিনি তার শৌর্যবীর্যের কারণে 'শের-ই-মহীশূর' বা 'মহীশূরের বাঘ' নামে সুপরিচিত ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতাকামীতার জন্য তাকে 'ভারতের বীরপুত্র' বলা হয়। তিনি বিশ্বের প্রথম রণাঙ্গনে রকেট আর্টিলারি এবং বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করেছিল। তিনি তার শাসনকালে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা ও ক্যালেন্ডার চালুর পাশাপাশি একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা প্রচলন করেন, যা মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশের সূচনা করেছিল।
টিপুর সংগ্রামী ও স্বাধীনতাকামী জীবন নিয়ে বহু গবেষণা, গ্রন্থ রচনা এবং নাটক, চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এসবের মধ্যে 'দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান' অন্যতম। নাটকটি যে কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হয়, তার মালিক ছিলেন ভারতীয় নির্মাতা ও পরিচালক সঞ্জয় খান। সঞ্জয় খানের ভাই আকবর খান এটি পরিচালনা করেন, যার সঙ্গীত পরিচালনা করেন কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ, 'মুঘল-ই-আজম' খ্যাত নৌশাদ আর চিত্রধারন করেন প্রখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার বশির আলি। সঞ্জয় খান নিজেই টিপু সুলতানের মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন।
ঐতিহাসিক নাটকটি কানাডার মন্ট্রিয়াল-ভিত্তিক লেখক ভগবান এস গিদওয়ানির লেখা একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়। উপন্যাসটি একটি অন্যতম বেস্ট-সেলার বই ছিল, যার প্রায় ২,৫০,০০০ কপি বিক্রি হয়, বহু ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয় এবং পঞ্চাশের অধিক সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। লেখক হওয়ার পাশাপাশি, গিদওয়ানি ৬০ পর্বের একটি স্ক্রিপ্টও লিখেছিলেন। শেষের অল্প কিছু পর্ব অগ্নি দুর্ঘটনার কারণে কয়েক বছর পর ধারণ করা হয়। উক্ত নাটকের জন্য নির্বাচিত অন্যান্য অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন সীমা কেলকার, অনন্ত মহাদেভান, মুকেশ রিশি, শাহবাজ খান, পাপ্পু কেলকার ও দীপিকা ছিখালিয়া। নাটকে নিজের বহুমাত্রিক অবদানের জন্য টিপু সুলতান চরিত্রের সঞ্জয় খান 'দ্য জেম অব ইন্ডিয়া' পুরস্কার লাভ করেন
বর্তমানে অনেকগুলো রাজ্য হলেও (কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ ও মালাবার বা কেরালা) অখণ্ড ডেকান বা দাক্ষিণাত্যের বিশাল এলাকা এবং আরব সাগরের তীরের পশ্চিমঘাট আর বঙ্গোপসাগরের উপকূলের পূর্বঘাট পর্যন্ত সমগ্র বৃহত্তর দক্ষিণ ভারতে অন্যতম শাসক ছিলেন টিপু সুলতান, যার শাসনকেন্দ্র ছিল তৎকালীন মহীশূর রাজ্য ৷ তার পিতা হায়দার আলীও মহীশূর রাজ্যের শাসক ছিলেন এবং ফরাসি বীর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের মিত্র ছিলেন। যে কারণে ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে ফরাসিরা সাহায্য করেছিল।
টিপু সুলতান মহীশূরের শ্রীরঙ্গপত্তনম এলাকাস্থ কাবেরী নদীর ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দুর্গ থেকে রাজ্য শাসন করতেন৷ বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে ১৭৯৯ সালে নিহত হন টিপু। এক সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলানোয় পরাজয় ঘটে টিপুর৷ পরে তার পরিবারের লোকজনকে তামিলনাড়ুর ভেলোরের দুর্গে বন্দী করে রাখে ব্রিটিশ শাসকরা৷
জানা যায়, ভেলোরে রাজ পরিবারের সদস্যদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করার পর ১৮০৬ সালে একটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। সেই বিদ্রোহে ভেতর এবং বাহিরের প্রচণ্ড আক্রমণে শতাধিক ইংরেজ সৈন্য সেদিন নিহত হয়। এমন ঘটনা ইংরেজদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করে। পরবর্তীতে মাদ্রাজ এবং আশপাশের সৈন্য নিয়ে তারা আবার দুর্গটি দখল করে নেয়। ইংরেজরা ওই সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিশোধের নেশায় প্রায় ছয় শতাধিক মানুষকে তারা হত্যা করে।
ইংরেজরা এই বৈপ্লবিক প্রচেষ্টার জন্য টিপুর পরিবার এবং রাজপুত্রদের সন্দেহ করে। পরবর্তীতে টিপু সুলতানের পরিবারের একটি বড় অংশকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর যাদের সন্দেহ করা হয়নি তাদের ভেলোরে রেখে দেওয়া হয়। এখানে যারা নিহত ও মারা যায় তাদেরকে দুর্গ থেকে দুই কিমি দূরের এই টিপু সুলতান গ্রান্ড মসজিদ এর প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সময় টিপু সুলতানের সর্ব কনিষ্ট পুত্র শাহজাদা ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান ঐখান থেকে পালিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ এর সুনামগঞ্জে পরিচয় গোপন করে ওয়াহিদ উল্লাহ নামে সেখানে আশ্রয় নেন । এভাবেই হত্যা, রক্ত আর বিভক্তির ক্ষত নিয়ে টিপু সুলতানের বংশধরেরা ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়। তবে কলকাতার কেন্দ্রস্থলের ধর্মতলায় এবং দক্ষিণের টালিগঞ্জে টিপু সুলতান মসজিদ এবং প্রিন্স আনোয়ার শাহ সড়ক দাক্ষিণাত্যের স্বাধীনতাকামী বীরদের স্মৃতি জাগরিত রেখেছে।
ইতিহাসের বর্ণনায় টিপু সুলতানের অপর নাম 'শের-ই-মহীশূর', যে উপাধি খোদ ইংরেজদেরই দেয়া। তার এই বাঘ (শের) হয়ে ওঠার পিছনে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কিত ছিলো। মূল কারণ ছিলো তার অসাধারণ ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা - বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন টিপু সুলতান। বাবা হায়দার ১৭৪৯ সালে টিপু নামে এক ফকিরের দোয়ায় এক পুত্রসন্তান লাভ করেন এবং আনন্দচিত্তে ঐ ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখেন "টিপু"। মহীশূরের স্থানীয় ভাষায় (কানাড়ী ভাষা) 'টিপু' শব্দের অর্থ হলো 'বাঘ'। হয়তো তাকে 'শের-ই-মহীশূর' ডাকার পিছনে এটাও একটা কারণ ছিলো। তবে ইতিহাসে আরও অনেক কারণের উল্লেখ রয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই টিপু বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তার ব্যঘ্রতার শেষ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করলেন, তখন বাবার পুরোন সিংহাসনটি তিনি ঠিক পছন্দ করলেন না। তাই তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত একটি সিংহাসন বানিয়ে নিলেন, যাকে বরং "ব্যাঘ্রাসন"ই (Tiger throne) বলা যায়। কারণ আট কোণা ঐ আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণে তৈরি দশটি বাঘের মাথা, আর উপরে উঠার জন্য ছিলো দুধারে, রূপার তৈরি সিঁড়ি। আর পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিলো বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা
টিপু সুলতানের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন পণ্ডিত পুরণাইয়া।টিপু সুলতান সামরিক তালিম নেন সরদার গাজী খান এর কাছ থেকে।টিপু সুলতান ছিলেন বহুভাষায় পারদর্শী। আর তার রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তার অনুপ্রেরণার মতো। তার রাজ্যের পতাকায় কানাড়ী ভাষায় লেখা ছিলো বাঘের কথা। তিনি সিংহাসনে বসে মাঝে মাঝেই বলতেন: 'ভেড়া বা শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো'।
টিপু সুলতানের সমস্ত পরিধেয় পোশাক ছিলো হলুদ-কালো রঙে ছাপানো আর বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। তিনি যে তলোয়ার ব্যবহার করতেন, তার গায়েও ছিলো ডোরা দাগ এবং হাতলে ছিলো খোদাই করা বাঘের মূর্তি। তার ব্যবহৃত রুমালও ছিলো বাঘের মতো ডোরাকাটা। তার রাজ্যের সমস্ত সৈনিকের পোশাকে থাকতো বাঘের ছবি। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার, বল্লম, বন্দুকগুলোর নল, কুদো, হ্যামারেও আঁকা থাকতো বিভিন্ন আকারের বাঘের প্রতিরূপ কিংবা মূর্তি। এমনকি তিনি তার রাজ্যের প্রধান প্রধান সড়কের পাশে, বাড়ির মালিকদেরকে বাড়ির দেয়ালে বাঘের ছবি আঁকার নির্দেশ জারি করেছিলেন। তখনও তার বাঘ পোষার বাতিক যায়নি এবং রাজবাড়িতে বেশ কয়েকটি পোষা বাঘ ছিলো। তার কয়েকটি আবার তার ঘরের দরজার সামনে বাঁধা থাকতো বলে কথিত আছে।
১৭৮১ সালে ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর ও তার বাহিনীর কাছে ২য় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে টিপু ও তার বাবা মারাত্মক নাজেহাল হন এবং টিপুর রাজ্যে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়, নিহত হয় অনেক সৈন্য। এমনিতেই তিনি প্রচণ্ড ইংরেজ বিরোধী ছিলেন, তদুপরি এই পরাজয়ে তিনি আরও বেশি তেজদীপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাক্রমে ১৭৯৩ সালে হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্র সুন্দরবনের সাগর দ্বীপে বাঘ শিকার করতে গিয়ে বাঘ আক্রমণে নিহত হয়। এই সংবাদ পেয়ে টিপুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়।
টিপু একটি ধারণা কাজে লাগিয়ে একটি বিচিত্র খেলনা বানিয়েছিলেন, যা সারা দুনিয়ায় "টিপু'স টাইগার" (Tipu's Tiger) নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ফরাসি যন্ত্রকুশলীদের দ্বারা নির্মিত প্রমাণ আকারের এই খেলনাটিতে ক্লকওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। খেলনায় দম দিয়ে ছেড়ে দিলে এর সাথে লাগানো একটি অর্গান পাইপ থেকে রক্ত হীম করা বাঘের প্রচণ্ড গর্জন, আর এক ইংরেজের প্রচণ্ড গোঙানির আওয়াজ বের হতো। পুরো খেলনাটি ছিলো এরকম: একজন ইংরেজ একটি বাঘের থাবার মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে গোঙাচ্ছে আর একটা বাঘ প্রচণ্ড আওয়াজ করে সেই ইংরেজের বুকের উপর চেপে গলা কামড়ে ধরতো। তখন ইংরেজটি তার হাত উঠিয়ে চেষ্টা করতো বাঘের মাথাটি এদিক-ওদিক সরিয়ে দিতে। ভিতরকার অর্গান থেকে আরো বেরিয়ে আসতো মহীশূর সুলতানের প্রিয় গজলের সুর। "টিপু'স টাইগার" বানানোর পিছনে একদিকে যেমন ছিলো তার ইংরেজদের প্রতি উষ্মা, তেমনি অন্যদিকে ছিলো প্রচন্ড ব্যঘ্রপ্রীতি। সময় পেলেই তিনি বাঘটিতে দম দিতেন; কখনও কখনও রাতের পর রাত একই জিনিস দেখে আনন্দ ও বিনোদন উপভোগ করতেন।
টিপু সুলতানের ৪ জন স্ত্রী, ১৫ জন পুত্র এবং কমপক্ষে ৮ জন কন্যা সন্তান ছিল। কন্যাদের পরিচিতি অজানাই রয়ে যায়। ১৮০৬ সালে বিদ্রোহের পর যখন টিপু সুলতানের পরিবার কে ভেলোর থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার সর্ব কনিষ্ট পুত্র শাহজাদা মুহাম্মদ ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন পরে বর্তমান বাংলাদেশ এর সুনামগঞ্জে এসে পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নেন। তাদের পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। ২০১৫ সালে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধরামাইয়ের নেতৃত্বে কর্ণাটক সরকার টিপুর জন্মবার্ষিকীকে 'টিপু সুলতান জয়ন্তী' হিসাবে পালন করা শুরু করে। কংগ্রেস সরকার এই জয়ন্তি বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করেছিল। তবে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদিউরপ্পা, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর সদস্য, এই জয়ন্তী বাতিল করার আদেশ দেন।
ঐতিহাসিকভাবে টিপু সুলতান মহীশূর তথা দক্ষিণ ভারতের এমন একজন শাসক ছিলেন, যিনি স্বাধীনতাকামী ও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তার সময়ে কৃষ্ণ রাজা সাগর বাঁধের ভিত্তি স্থাপন তৈরি হয়েছিল। তিনি শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতিরও চেষ্টা করেছিলেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে টিপু ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। নিয়মিত প্রার্থনা করতেন এবং এবং তার এলাকার মসজিদগুলোর উপর তার বিশেষ নজরদারি ছিল। তবে, একটি হিন্দু রাষ্ট্রের মুসলিম শাসক হিসেবে টিপু সুলতানের শাসনব্যবস্থা সহনশীল ছিল। তার শাসনকালে তিনি ১৫৬ টা হিন্দু মন্দিরে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিতেন। বরাদ্দ পাওয়া এরকম এক বিখ্যাত মন্দির হলো শ্রীরঙ্গপত্তনমের রঙ্গন অষ্টমী মন্দির।
টিপু সুলতান ছিলেন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল প্রজার হিতৈষী ও কল্যাণকামী এবং জন্মভূমির স্বাধীনতার জন্য সাহসী যোদ্ধা ও আত্মউৎসর্গকারী মহান শাসক। ভারতীয় উপমহাদেশের ঔপনিবেশিকতা বিরোধী স্বাধীনতার ইতিহাসে অগ্রণী ও শ্রেষ্ঠতম নাম টিপু সুলতান।