বজ্র আলোর ফুলকি
মুছতে পারিনি তার সামান্য গর্তের মত দাগ
শুধু দেখি মুগ্ধ হয়ে ঢেকে রাখা তার ঝলকানি
ঝলকফুলের দেহে বয়ে চলেছে অজস্র নদী
মরমী ইশারা থেকে বেজে ওঠে জলের সিম্ফনি।
শোকের মাতম শেষে মুছে গেছে সব ভীতু চোখ
দেখছি কীভাবে মেঘে মেঘে ছলকে ওঠে বিস্ময়
কীভাবে মানুষ বজ্র আলোর ফুলকি থেকে দূরে
সারিয়ে তুলছে ধীরে নষ্ট-ভ্রষ্ট সবুজ প্রণয়।
বিজলি
তুমি ছড়িয়ে পড়েছ মহুয়ার ঘ্রাণে
ভালোবেসে টেনে নিচ্ছে সহস্র মানুষ
লালসাদা কালোজলে ছায়ামুগ্ধবেশে
অনেক রাতের দিকে যখন তাকাই
খোলা আকাশের মত রঙ উড়ে যায়
দূরে থেকে কাছে আসে অচেনা ময়ূর
পেখম নাচাই একা ভোর মখমলে
তোমার জানালা খোলে পাগলা হাওয়া
পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে ফর্সা মেঘ
কচিরোদ খুলে দেয় খোঁপার বাহানা
পর মানুষেরা দেখে আড়চোখি ঢঙে
কেউ কেউ সকাতরে শোক চিহ্ন মোছে
স্কুলড্রেস খুলে রাখা শিশুদের হাসি
সবাই যখন আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করে
তখন মনে হয় লাউ মাচার নিচে
ক্ষত ডোগার ভিতর
তোমার জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষা করছি বহুকাল
উঁচু-নিচু শ্রেণিভেদ
মুছে দিয়ে মফস্বল রোদে তোমাকে সাজাই
স্কুলড্রেস খুলে রাখা
শিশুদের হাসির ভিতর তোমাকে নতুন করে পাই
স্নিগ্ধ জোনাকি ঝলক
তুমি আজ মিশে থাকো
রাধাচূড়া ফুলের শরীরে।
বৃষ্টিহারা মানুষেরা ঠিকই তোমাকে খুঁজে নিবে,
যেন তোমারই মতো
তারাও ফুলের তক্তে বসে
দেখতে পারে নরম চোখি স্নিগ্ধ জোনাকি ঝলক।
সমস্ত ক্ষতদাগের গভীরে হেসে উঠবে তুমি
হেসে উঠবে
সবুজ জানালা ঘেঁষা পাহাড়চূড়া।
ভয়
এ রাষ্ট্রে এখন বইছে শ্রাবণ
হুটহাট করে এদিকে ওদিকে বৃষ্টি হচ্ছে
বিজলি চমকে
গর্তে ঢুকা মানুষেরা
পোষ মানা বিড়ালগুলোর মত লাফিয়ে উঠছে
এ রাষ্ট্রে বৃষ্টি হচ্ছে শ্রাবণে
রিমঝিম রিমঝিম
কোথাও কোনো অ্যাসাল্ট রাইফেল তাক করা নাই
তবু মানুষ ভীতু
ফিসফিস করে কথা বলে আড়ালে আবডালে
ফুলের শরীর থেকে রোদের ঘ্রাণ
পৃথক করতেও ভয় পায়
মানুষ চাপা হাহাকার নিয়ে
প্রতিরাতে ঘুমাতে যায়
মনে হয় রাতে দেখার চশমা দিয়ে
কেউ যেন দেখছে
নজর রাখছে
তাতে ভয় বাড়ছে
শিরদাঁড়া বেয়ে রোদ চুয়ে চুয়ে পড়ছে
হাড়ের গহিনে
এ কারণে আঁধারে মিশে যেতে চায় কেউ কেউ
লুকিয়ে থাকতে চায়
সন্দেহ আর কাঁটা তারের মধ্যে
নিঝুম রাত্রে নষ্ট সাঁজোয়াযানের মত
পড়ে থাকতে চায় অজস্র ভীতু মানুষের দল
নজরদারির ভয় ঘুমের ভিতর ওড়ে
ছোট ছোট ড্রোন উড়ে বেড়ায় ভীতু চক্ষুদেশে
আমার কোনো স্নাইপার রাইফেল নাই
নাই কোনো মেশিনগান
মনের ভিতর গড়ে তুলছি
আত্মঘাতী প্রেম আর বোম্ব স্কোয়াড
কবি পরিচয়
মুক্তি মণ্ডল, জন্ম ২২ জুলাই ১৯৭৬। সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা : গবেষণা। বই- ঘড়ির কাঁটায় ম্যাটিনি শো (কৌরব ২০০৮), পুষ্পপটে ব্রাত্য মিনতি (জোনাকরোড ২০০৯), উন্মাদ খুলির পৃষ্ঠাগুলি (আবহমান ২০১১), ভেল্কিবাজের আনন্দধাম (এন্টিভাইরাস ২০১৫) এবং যাচনার বাঞ্ছাধ্বনি (ছোট কবিতা, ২০১৮)। ই-মেইল : mukte.mandal@gmail.com।