নিক্সন বলেছিলো- ‘বাংলাদেশ ছয় মাসও টিকবে না! ভাত তো দূরের কথা আলুটাও
জুটবে না ঐদেশে! যদি দেশটি স্বাধীন হয়ে পড়ে, তাহলে দেশটা একটা আস্ত ভাগাড়ে
পরিণত হবে। ১০০ মিলিয়ন মানুষ, ওখানে জীবনমান হবে এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে।’
আছে এখনো সে!
চোখে দেখে কিনা বা কানে শুনে কিনা- জানি না। এই দুটো ইন্দ্রিয় থাকলে আর
মাথাটা ঠিকঠাক কাজ করলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো এদেশের খেটে খাওয়া
মানুষদের কাছে।
কারণ তাঁরা হার্ভাডে পড়া মানুষটা যে ভুলভাল কূটনীতি করতে পারে তা চোখে
আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন।বাংলা ভাষায় তার নামে এক গালি চালু হয়েছে
সেই ১৯৭১ থেকেই।
আজ বাংলাদেশের অর্ধ শতাব্দী। যে দেশটি জন্মের সময় ছিলো এক ধ্বংসস্তুপ,
ঝড়বন্যা, জলোচ্ছাস, ক্ষুধা রোগশোক ছিলো যাদের নিত্যসঙ্গী তারা আজ
বিশ্বের মধ্যম আয়ের দেশ! স্টেপিংগুলো নজরকাড়া,দীপ্ত আর বলিষ্ট!
১৯৭০ সালে স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৯ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার। আজ প্রায় ৪০৯ বিলিয়ন ডলার।পঞ্চাশ বছরে প্রায় ৪৫ গুন!
১৯৭০-এ মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার।২০২১-এ তা প্রায় ২৬০০, বৃদ্ধি-সাড়ে ১৮
গুন।
১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, আর আজ ৬ লাখ ৩
হাজার ৬৮১ কোটি টাকা! বেশি নয় মাত্র ৭৬৮ গুন।
আজ বাংলাদেশের ১ টাকা পাকিদের প্রায় ২ রুপি!
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ,
সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। চাষের মাছ উৎপাদনে
বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়!
সব করেছে সেই খেটে খাওয়া মানুষগুলো- হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে, দাঁতে দাঁত
চেপে, কষ্টব্যাথা ভুলে। যাঁদের পরিশ্রমে লালসবুজ আরো ঝকমকে হয়- এদের
কুর্ণিশ করতেও যোগ্যতা লাগে!
বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে বাংলার মেহনতী জনতাকে জানাই, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।
সব কিছু তাদের জন্য। সব অর্জন তাদের।
অনেক কিছু আমরা পেয়েছি, কিন্তু সিস্টেম বদলায়নি এতোটুকু।
আর শুধু একটি কথা বলার ছিল-
আর সেটা হল, মহারাজ, ভয়ে বলবো না নির্ভয়ে বলবো?
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক