অমর একুশে বইমেলা- ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে ‘সুষুপ্ত পাঠক এর কথোপকথন’। এটি মূলত ইতিহাসখ্যাত মনীষীদের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে কল্পিত সাক্ষাৎকার।
লিখেছেন ব্লগার ও লেখক সুষুপ্ত পাঠক। তিনি মূলত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী ক্ষণিক স্ফূলিঙ্গ ‘গণজাগরণ মঞ্চ’-এর একজন নেপথ্য নায়ক।
দেশে একসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি কোনো কথা বলতে পারতো না। এর বিরুদ্ধে দেশের একদল তরুণ প্রজন্ম ব্লগ লিখে মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের চেতনা, ’৭২-এর সংবিধান, বিজ্ঞানমুখি শিক্ষাব্যবস্থা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সপক্ষে জনমত গড়ে তোলা চেষ্টা করেন।
তারা শহিদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হাতে কলম তুলে ধরেন।
তাদেরই একজন সুষুপ্ত পাঠক। ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের যখন একের পর এক হত্যা করতে থাকে মৌলবাদী শক্তি, তখন অনেকেই জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়েন। কেউ কেউ ব্লগ লেখা বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান।
কিন্তু ব্যতিক্রমদের একজন সুষুপ্ত পাঠক। তার কলম যেন আরো ক্ষুরধার হয়ে ওঠে। আজ পর্যন্ত তাঁর কলম থেমে থাকেনি। তাঁকে একের পর এক হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি কখনো থেমে যাননি।
২০২৪ সালেও তাঁর লেখা বহমান। তাঁর লেখা পাণ্ডলিপি কোনো প্রকাশক আগে প্রকাশ করতে সাহস করেননি জীবনহানি ও হয়রানির আশঙ্কায়। তবে ২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে ‘সব্যসাচী প্রকাশনী’র প্রকাশক শতাব্দী ভব সুষুপ্ত পাঠকের পাণ্ডলিপি ‘সুষুপ্ত পাঠক এর কথোপকথন’ বই আকারে প্রকাশ করেছে।
বইটির ভূমিকায় সুষুপ্ত পাঠক লিখেছেন- ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে গল্প উপন্যাস নতুন কিছু নয়। সেসব চরিত্রদের মুখে লেখক যেসব সংলাপ যোগান তার সবই ইতিহাসে মেলে না। এটুকু স্বাধীনতা লেখক পেতেই পারেন। কিন্তু কিছুতে যেন ইতিহাস বিকৃত না হয়, সেদিকে লেখক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
এই বইতে আমি ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের মতো করে আলাপ করেছি। পারতপক্ষে তাদের মুখে এমন কিছু বলাইনি যেটা তাদের জীবন ও কর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক্। আমাদের সময়কাল নিয়ে তাদের দু-একটি উক্তি নিতান্তই ফিকশন হিসেবে ধরতে হবে।
এরকম আলাপ চলতিপথে আমার মাথার মধ্যে দুটি কণ্ঠস্বর হয়ে আমাকে প্রায়ই আনমনা অন্যমনস্ক করে তোলে। এই বদ অভ্যাস থেকে কিছু লেখা বের হবার পর পাঠকদের বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়।
ইতিহাসের রসকষহীন পৃষ্ঠার চাইতে গল্পের মতো করে ইতিহাস পাঠ যে, তাদের আগ্রহের হেতু বলাই বাহুল্য। সেই অনুপ্রেরণায় অনেকগুলো লেখা জমে যাবার পর সবগুলো লেখা এক মলাটে রাখার সিদ্ধান্ত নিই।
‘সব্যচাষী’র শতাব্দী ভব সেই ইচ্ছাকে বাস্তব করতে এগিয়ে আসেন। নিঃসন্দেহে দুঃসাহসের একটি কাজ।
এমন সব মানুষদের নিয়ে কথা বলেছি, যাদের কয়েকজন মনীষী হিসেবে ইতিহাস স্বীকৃত। তাদের সঙ্গে আমার কথোপকথন কখনো সীমা লঙ্ঘন করেছে কিনা জানি না। তবে আমি নিজের কাছে সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। সত্যনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ থাকার চেষ্টা করেছি। বাকিটা পাঠক বিবেচনা করবেন।
বইটিতে সূচি হিসেবে রয়েছে- গৌতম বুদ্ধ; ঈশ্বর বিদ্যাসাগর; রোকেয়া, শ্রীচৈতন্যদেব; অ্যাটম বোমার খলনায়ক; সিরাজ সিকদার; গজনীর সুলতান মাহমুদ; সম্রাট আকবর, মীর মোশাররফ হোসেনের মন; বাবুরনামা ও ভারতের ইতিাস; ভারতের দাসজীবন; কবি জসীম উদদীনের ‘জীবনকথা’ ও গ্রামবাংলার জীবনে ওহাবিজমের থাবা; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতার বিরোধিতা করেছিলেন; বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনী।
বইয়ের মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ১১২। প্রচ্ছদ এঁকেছেন- আল নোমান। মুদ্রিত মূল্য- ৪০০ টাকা। বইমেলায় ২৫% ছাড়ে ৩০০ টাকা। প্রথম প্রকাশ- একুশে বইমেলা ২০২৪। বইটি পাওয়া যাচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব্যসাচী প্রকাশনীর স্টলে।