আইনস্টাইন নাকি বলেছিলেন, চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হলে তা হবে লাঠি আর পাথর দিয়ে। কারণ প্রযুক্তির সর্বাধিক প্রয়োগ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফলে বাকি আর কিছু থাকবে না। পরাশক্তির সংঘাত, শহরের দিকে জনজীবনের কেন্দ্রস্থ হওয়া, ঘাতক রোবটের আবিষ্কার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য বিনষ্টীকরণ কিম্বা হ্যাকিং তথা তথ্যযুদ্ধ, হাইব্রিড যুদ্ধ তথা প্রতিপক্ষকে সবরকমভাবে হেনস্থা করার পর্যায় ইত্যাদির যে প্রকার বাড়-বাড়ন্ত সভ্য সমাজে শুরু হয়েছে ফলে যুদ্ধ যে প্রকারের হোক তা এক নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি যে করবে তাতে সন্দেহ রাখার কারণ নেই।
এমনিতেই বহু রাষ্ট্র তার আন্তরিক আনুগত্য বা সৌহার্দ্যের অভাব নিয়ে সভ্যতায় আসীন। আফগানিস্তান , পাকিস্তান, মিসর, নাইজেরিয়া এসব জায়গার তীব্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ যে রক্তপাত ঘটনোর জন্য সদাব্যস্ত তা প্রতিমুহূর্তে প্রমাণিত। তার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী চীন নিজের যাবতীয় প্রযুক্তি ও মূলধন প্রয়োগে নিজের সামরিক শক্তিকে উন্নত করায় প্রয়াসী; আমেরিকা যে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে এক প্রতিযোগীতায় সামিল তা টের পাওয়া যায়।
এদিকে এই বর্তমান যুদ্ধহীন এক পরিস্থিতির মধ্যেও শোনা যায় উত্তর কোরিয়া এবং মার্কিন শক্তি দু’জনেই পারলে দু’জনকে ধবংস করে। বিংশ শতাব্দীর সে যুদ্ধ ইতিহাস সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে মানুষ কী কখনো অস্বীকার করতে পারবে? এই যুদ্ধ জনজীবনে যে কী বিস্ময়কর প্রভাব ফেলেছিল তা ভাবলে চমকে উঠতে হয়। হয়ত অনেক যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির আবিষ্কার ভবিষ্যতে যুগের হিত করেছে কিন্তু যে মূল্য সেই কারণে চোকাতে হয়েছে তা অপরিমেয়! ব্রিটিশরা ভয়াবহ সেই যুদ্ধট্যাংকার আবিষ্কার করল। তারপর এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই চীনের পদাতিক বাহিনী আনল ফ্লেম থ্রোয়ার। আসলো রাইফেল, বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাস সিলিন্ডার, একে একে যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন তারপর ১৯১২ তে আসলো আশ্চর্যজনক বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ। স্টিফেন হকিংস যুদ্ধে ‘ঘাতক রোবট’ ব্যবহার না করার বার্তা দিয়ে গেলেও যুদ্ধ পরিস্থিতি এতই রক্তলোলুপ পরিস্থিতি যে শেষপর্যন্ত কী হবে বলা যায় না।
প্রথমত মানুষ যা বাঁচিয়ে রাখে সে তার কিয়দংশ জীবতকালে পায়। তবু সে আগামীর কথা ভেবে এগোতে থাকে। সেই নশ্বর জীবনকে, অর্থাৎ যে যাবেই শুধু তাকেই মারার জন্য অন্য কোনো প্রাণী নয় মানুষই পেতেছে ফাঁদ মানুষের বিরুদ্ধে! এই দেহ থেকে নিঃসৃত যে রক্তকে সে কাপড়ে বেঁধে দিচ্ছে সেই রক্তই সে ঝরাবে অন্যের গা থেকে ভাবলে অবাক লাগে! মানুষেরই তৈরি নীতিতে মানুষের কী এক ঘোর যে সে ক্রমাগত ধবংসলীলায় মাততে চায়। তবু যুগ যুগ ধরে নিরাপত্তাকেই স্বীকৃতি দিতে সেনাবাহিনীর আগমন হয়েছে।
সুন্দর, সুষ্ঠকে তো রক্ষা করতেই হয়! কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে এই আধুনিক জনসমাজেও কেন শক্তির পরীক্ষা হয় প্রাণের ভিত্তিতে? যে মানুষ প্রতি পদে পদে প্রমাণ করেছে দেহজ শক্তি শক্তি নয় সেই মানুষই শক্তির পরীক্ষায় নেমেছে প্রাণের বিনিময়ে। পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এক একটি যুদ্ধ কীভাবে সব ধবংস লীলায় মেতেছে বারবার। সেই মঙ্গোলিয়ান যুদ্ধ থেকে দুনগান যুদ্ধ, নাপোলিওনিক যুদ্ধ,রাশিয়ার যুদ্ধ, লুসান রেবেলিয়ন, তাইপিং বিদ্রোহ ,এসব ভয়ংকর যুদ্ধ এক একটা সভ্যাতাকে ছারখার করে দিয়ে গেছে; হ্যাঁ পুরস্কার বেঁচে থেকেছে তা নিশ্চয় সভ্যতার পক্ষে গর্বের কিন্তু মানবসভ্যতার যে ভিত সেই মানুষই ক্রমাগত ধবংস হলে সভ্যতার সত্যি কী কিছু বাঁচে!
ইতিহাসে জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৭ কোটি মানুষ মারা গেছে। কুইঙ্গ সাম্রাজ্যের যুদ্ধে চীনে ২ কোটি মানুষ মারা যান। প্রায় ১৪,০০০ বছর আগে নাকি মেসোলিথিক সেমেট্রিতে ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেখেছিল মানুষ, সেই প্রথম মানুষ যুদ্ধ কী তা জানল এরপর যখন রাষ্ট্র তার ক্ষমতা একীভূত করতে শিখল আনুমানিক ৫,০০০ বছর আগে মিলিটারি সৈন্যদের আগমন শুরু হল। আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষার কবচ মনে হলেও যুদ্ধের দামামা বাজার সূত্রপাত হয়ে গেল। যুদ্ধ যে কী তা আমরা জানি। আমাদের সমঝোতা, অন্যায়-ন্যায় প্রতিবাদ, হিংসা-লালসা, বিজাতীয় রাগ এমন বহু কিছু আছে যা ক্ষুদ্র ঘরের কোণ থেকেই শুরু হয়; সেখানে সাম্রাজ্য রাষ্ট্রের যুদ্ধ অনেক পরে আসে।
যুদ্ধ নিয়ে কথাবার্তা অসম্পর্ণ রয়ে গেল, এখানেই পরবর্তীতে কখনও বলব...