ক্রেজি গ্লু

অনুবাদ গল্প, শিল্প-সাহিত্য

এটগার কেরেট | 2023-08-31 14:18:33

অনুবাদ তানভীর মাহমুদ গাজী

এটগার কেরেট ইজরাইলি গল্পকার, স্ক্রিপ্টরাইটার ও ফিল্মমেকার।
লেখায় চলতি ও আঞ্চলিক ভাষা ইউজ করেন। স্লাঙও থাকে।
ইংরেজি ভালো না জানার অভিযোগ করলে সাংবাদিকদের হালকা বকাঝকা করেন ও বুঝে নিতে বলেন।

ও বলল, ধইরো না।
কী এইটা? আমি জিগাইলাম।
গ্লু, খুবই স্পেশাল গ্লু, সুপার গ্লু।
গ্লু কিনছো ক্যান? আমি জিগাইলাম।
লাগবে। কত কিছু যে জোড়া দেওয়া লাগে!
জোড়া দেওয়ার তো কিছু নাই। আমি বুঝি না এইসব বালছাল ক্যান্ কেনো তুমি! চেইতা গেলাম এইবার।
ও বলল, বিয়া করছি তোমারে যে কারণে, টাইম পাস।
ঝগড়া করতে ইচ্ছা করতেছিল না দেইখা চুপ থাকলাম, ওও চুপ থাকল।
এই গ্লু যে কিনছো, এইটা ভালো? আমি জিগাইলাম একটু পরে।
ও প্যাকেটের ছবিটা দেখাইল, এক লোক সিলিংয়ে ঝুলতেছে, উল্টা হইয়া, তার পা’য় কেউ এই গ্লু লাগাইয়া দিছে—এই রকম একটা ছবি।
গ্লু দিয়া এইভাবে কেউরে আটকায়ে রাখা যায় না। ওরা উল্টা করে ছবিটা তুলছে। লোকটা ফ্লোরে দাঁড়ানো। ওরা কী করছে—ওরা ফ্লোরে একটা লাইট এমনে রাখছে যে দেখলে মনে হয় এইটা সিলিং। জানলাটা দেখলেই বুঝবা, সিটকানিগুলা উল্টা লাগানো, দেখো।
ও দেখল না।
আটটা বাজে, আমার ভাগতে হবে, বইলা আমি ব্রিফকেস নিলাম আর ওর গালে কিস করলাম, আসতে দেরি হবে, আমি..
ও কথা টাইনা নিয়া বলল, জানি জানি, তুমি তো ডুবছো।

অফিসে বইসা মিনডিরে কল দিলাম
আজকে পারব না, বাসায় যেতে হবে তাড়াতাড়ি।
কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে?
না, জানি না ঠিক, ও মনে হয় কিছু একটা সন্দেহ করতেছে।
ওইপাশ দিয়া কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না, শুধু মিনডির নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাইলাম।
অনেকক্ষণ পরে ও ফিসফিসাইয়া বলতে শুরু করল, আমি বুঝি না তুমি ওর সাথে কেন থাকো। তোমরা তো কিছুই করো না, এমনকি তোমরা ঝগড়াও করো না আর। আমি বুঝতে পারি না তোমরা এভাবে কেন চালিয়ে যাচ্ছো। কিসের টানে আটকে আছো একসাথে, আমি বুঝি না, আমি আসলেই বুঝি না, বলতে বলতে ও কানতে শুরু করল।
কান্নাকাটি করো না, শোনো একটা এপয়েন্টমেন্ট আছে আমার—মিথ্যা বললাম আর কি। কালকে অবশ্যই আসব। তখন কথা বলব নে।

বাসায় আগেআগেই আসলাম। দরজা দিয়া ঢুকতে ঢুকতে ওরে ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নাই। সব রুমে খুঁজলাম, কোথাও নাই। খাবার টেবিলের উপ্রে গ্লু’র টিউবটা, পুরাই খালি। একটা চেয়ার টাইনা বসতে গেলাম, চেয়ার নড়ে না। আবার টান দিলাম, একই অবস্থা। চেয়ার ফ্লোরের সাথে গ্লু দিয়া আটকানো। ফ্রিজ খোলে না, দরজায় গ্লু মারছে। ও এরকম ক্যান করল মাথায় ঢুকতেছে না। ওর মাথায় কোনো ঝামেলা আছে এরকম মনে হয় নাই কখনো। ও তো এমন না। ফোন করতে লিভিং রুমে গেলাম। আমি ভাবলাম ও হয়তো ওর মায়ের বাসায় গেছে। ফোনের রিসিভার টাইনা উঠাইতে পারলাম না, এইটাতেও গ্লু মারছে। প্রচণ্ড মাথা গরম হইল, রাগে ফোনের টেবিলটায় লাত্থি মারলাম, অল্পের জন্য আমার পা ভাঙল না। টেবিলও নড়ে না।

হঠাৎ কইরা ওর হাসির শব্দ পাইলাম, উপ্রে দিয়া আসতেছিল। তাকায়াই দেখলাম উল্টা হইয়া ঝুলতেছে ও, উঁচু সিলিঙে ওর খালি পা, টাইট কইরা লাগানো। দেইখাই আমি চমকায়া উঠলাম, আরে বাল! মাথা আউলায়া গেছে নাকি পুরা!
ও কোনো জবাব দিল না, খালি হাসল। ওর হাসি এত নরমাল লাগতেছিল, যদিও ও ঝুলতেছিল কিন্তু মনে হইতেছিল ঠোঁট দুইটা ঠিকঠাকই আছে।
টেনশান কইরো না আমি নামাইতেছি তোমারে, বইলা আমি শেলফের উপর দিয়া কয়টা বই নামাইলাম। কয়টা এনসাইক্লোপেডিয়া পাইল দিয়া তার উপ্রে দাঁড়াইলাম। ব্যালান্স রাখতে রাখতে বললাম, একটু ব্যথা পাইতে পারো। ও হাসতেই থাকল। আমি সমস্ত শক্তি দিয়া ওরে টানতে থাকলাম, কিন্তু একটুও নড়াইতে পারলাম না। না পাইরা সাবধানে নাইমা আসলাম, বললাম, টেনশন কইরো না তুমি, আমি পাশের বাসায় ফোন করতে যাইতেছি।
আচ্ছা যাও, আমি তো আর পলাইতেছি না, মনে হইতেছিল হাসতে হাসতে গড়ায়া পড়তেছে ও, কিন্তু ও তো ঝুলতেছিল, ওরে খুবই সুন্দর আর উদ্ভট লাগতেছিল। ওর লম্বাচুলগুলা নিচের দিকে ঝুলতেছিল, সাদা টিশার্টের নিচে ওর দুধদুইটারে মনে হইতেছিল একদম দুইফোঁটা চোখের পানি, অদ্ভুত সুন্দর! আমি বইগুলার উপ্রে উঠলাম আবার, ওরে কিস করলাম। ওর জিভ আমার জিভের মধ্যে ঢুইকা যাইতেছিল। আমার পায়ের তলা দিয়া বইগুলা সইরা গেল আর আমি বাতাসে ভাসতে থাকলাম। কিছু না ধইরা খালি ওর ঠোঁটে ঝুলতে থাকলাম আমি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর