আজ ৩ জুলাই। গত শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাববিস্তারকারী লেখক ফ্রাঞ্জ কাফকার জন্মদিন। কাফকা ১৮৮৩ সালের ৩ জুলাই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের অধীনস্ত প্রাগে (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র) মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ৩ জুলাই ফ্রাঞ্জ কাফকার ১৩৬তম জন্মদিনে বার্তা২৪-এর পাঠকদের জন্য থাকল ফ্রাঞ্জ কাফকা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য—
১. কাফকার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘মেটামরফোসিস’ লেখা হয়েছিল মাত্র তিন সপ্তাহে। ১৯১২ সালে লেখা শেষ হলেও উপন্যাসটি তিনি তিন বছর পর ১৯১৫ সালে প্রকাশ করেন। তিন সপ্তাহে লেখা একটি উপন্যাস প্রকাশ করতে তিনি তিন বছর সময় নিয়েছিলেন।
২. কাফকা বাধ্য হয়ে তিনটি ভাষা শিখেছিলেন। পরিবারে কথা বলার জন্য ইদ্দিশ ভাষা, স্কুলের পাঠ্যক্রম ছিল জার্মান ভাষা আর প্রাগের সাধারণ মানুষ কথা বলত চেক ভাষায়।
৩. ফ্রাঞ্জ কাফকার ছিল মোট ছয় ভাই-বোন। কাফকার দুই ভাই শৈশবে মারা যায়। আর বাকি তিন বোন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলকাস্ট-এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার।
৪. কাফকা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে এক চিঠিতে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে নিজের সব লেখা পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পালিত হলে বিশ্বসাহিত্য কখনোই কাফকাকে পেতো না। জীবদ্দশায় তার খুব অল্প লেখাই প্রকাশিত হয়। কাফকা নিজেই তার অনেক লেখা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন।
৫. ৩২ জন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিকসহ আরো অনেক লেখক কাফকা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, হচ্ছেন। খোদ গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কাফকার ‘মেটামরফোসিস’-এর প্রথম লাইন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং ভেবেছিলেন এভাবেও লেখা যায়!
৬. কাফকা কেনসি প্যালেসে—যেখানে তার পিতার দোকান ছিল, সেখানকার জিমনেশিয়ামে জিম করতেন।
৭. কাফকার মেটামরফোসিসের প্রথম লাইন ছিল গত শতাব্দীর বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী, আলোচিত বিস্ময়কর এক লাইন।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে রসায়নে ভর্তি হয়েও ছেড়ে দিয়ে পরে আইনে ভর্তি হন। কাফকার আইন পড়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ ছিল—১. পিতাকে খুশি করা এবং বৈষয়িক সাফল্যের সম্ভবনা, ২. আইন বিভাগের পড়তে দীর্ঘ সময় লাগবে ফলে ফাঁকে ফাঁকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আগ্রহের বিষয় শিল্পকলা, সাহিত্য, সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ে কোর্স করতে পারবেন।
৯. ‘মেটামরফোসিস’-এ গ্রেগর সামসা পোকা হয়ে যাওয়ার পর আপেল ছুঁড়ে যে পোকাটিকে মারতে চায় সে ছিল মূলত বাস্তবিক জীবনে কাফকার পিতা। ফ্রাঞ্জ কাফকার জীবনীকাররা এমনই জানিয়েছেন—গ্রেগর সামসার পিতা আসলে কাফকার পিতারই রূপক।
১০. পৃথিবীর সব বড় লেখকদের মধ্যে ফ্রাঞ্জ কাফকাই এমন একজন যিনি তার প্রেমিকাদের সবচেয়ে বেশি চিঠি লিখেছিলেন। তিনি তার প্রেমিকা মেলিস বাউয়ারকে পাঁচশোর বেশি চিঠি লিখেছিলেন। আবার আরেক প্রেমিকা মিলেনাকেও চিঠি লিখেছেন অনেক। দুই প্রেমিকাকে লেখা চিঠি নিয়ে ইংরেজিতে দুটি বইও বের হয়েছে।
১১. কাফকা বীমা কোম্পানিতে দীর্ঘ ডিউটির কারণে নিজের লেখার জন্য সময় পেতেন না। এক সময় তাঁকে তাই লেখালেখির জন্য চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
১২. ফ্রাঞ্জ কাফকা ছিলেন লাজুক, স্বল্পবাক। তার বন্ধু সংখ্যা ছিল খুবই কম। ম্যাক্স ব্রডের সাথে তার বন্ধুত্ব হয় ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ারে।
১৩. কাফকার শৈশব কাটে বাসায় একা একা। তার বাবা মা দু’জনই জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়ে যেতেন। গৃহপরিচালিকা তার দেখাশোনা করতেন।