-- আপনাকে তো আগে দেখিনি এপথে। নতুন বুঝি এ এলাকায়?
হাঁটুঅব্দি লম্বা জ্যাকেটের হুডটা যেমন ছিল তেমনই রইলো। হুডের ভেতর থেকে উত্তর এলো,
-- বলতে পারেন নতুন, আবার না-ও বলতে পারেন।
-- ঠিক বুঝলাম না। আপনি কি আগে এ মহল্লায় থাকতেন?
দুলে দুলে হাসতে লাগলো লম্বা জ্যাকেটের হুডতোলা লোকটা। অদ্ভুত তো! কে এটা? হাইজ্যাকার নয় তো? পঁয়তাল্লিশের জাকির হঠাৎ করেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই তার বাম হাতটা চলে গেলো প্যান্টের পকেটে। ওখানে বেশ কিছু টাকা আছে, আর আছে দামি মোবাইলটা।
লোকটা কি তাকে অনুসরণ করছে? কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে অবশ্য পাশাপাশি। একবারের জন্যও জাকিরের সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। জাকির যে একটু পর পর শঙ্কামিশ্রিত চাহনি ফেলছে তার ওপর সেটাও লক্ষ্য করছে না একেবারেই। আপনমনে হাঁটছে তো হাঁটছেই। দেখতে দেখতে ওরা চলে এলো পাড়ার শেষমাথার বিশাল দীঘিটার কাছে। এই দীঘির ধার ঘেঁষে পথটা একটু বেঁকে গিয়ে মিশেছে অন্য এক মহল্লায়। জাকির প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ আয়েশ করে। আয়েশ করতে করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যখন রাত ছুঁই ছুঁই তখন বের হয় হাঁটতে। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যেস। কারণ সে বেশ স্বাস্থ্য সচেতন। সে চায় একটুও মেদ যেন না জমে তার শরীরে। তাহলে প্রাতঃভ্রমণ না করে সান্ধ্যভ্রমণ কেন?
তার উত্তরও আছে, ওই সামান্য আলসেমিটা তার ছোটবেলা থেকেই, ভোরবেলায় বিছানা ছাড়তে পারে না সহজে। আর এই পৌষের শীতে সেটাতো একেবারেই অসম্ভব। তাই সে অনেক ভাবনা চিন্তা করে এই সান্ধ্যভ্রমণটাই বেছে নিয়েছে। এ সময় কেউ বের হয় না ভ্রমণে, পথটাও নিরিবিলি। তারওপর এখন শীতকাল। লোকজন বাড়িমুখী হয় তাড়াতাড়িই। পাড়ার পথেঘাটে নেমে আসে নিরবতা। সুনসান নিরবতা, মাঝে মধ্যে দুই একটা সাইকেলের টুংটাং কেমন যেন সুখ এনে দেয় মনে।
-- বাহ্, দীঘিটা তো খুব সুন্দর! আসুন , দু'জনে এখানে বসি একটু।
অবাক হয় জাকির এই আহ্বানে। ভয় ভাব তো রয়েছে। একজন সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ, যার চরিত্র নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, চোর না ছ্যাঁচ্চোড় জানা নেই, সে কী না দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ডাকছে জাকিরকে! প্রায় মিনিট বিশেক হয়ে গেলো, একবারও লোকটার জ্যাকেটের হুড নড়েনি একটুও। হুড না নড়লে তো চেহারা দেখার কোনো উপায়ও নেই। লোকটার বয়স সম্পর্কে কোনো ধারনাই করা যাচ্ছেনা। তবে বেশ লম্বা। পরনের ওই লম্বা কালো জ্যাকেটের কারণে কিনা কে জানে, আরও বেশি লম্বা দেখাচ্ছে। ঢেকে রাখা চেহারায় প্রায় রহস্যময় এক অবয়ব। কিন্তু হাইজ্যাক করার ইচ্ছে বোধহয় তার নেই। যদি ইচ্ছে থাকতো, এতক্ষণে সে তা করে ফেলতো। এত সময়ক্ষেপণ করবে কেন সে? এসব ভাবতে ভাবতে দীঘল দীঘিটা পেরিয়ে যাবার উপক্রম। পাশ দিয়ে একটা ফাঁকা রিক্সা চলে গেলো। রিক্সাওয়ালা গান গাইছে গুনগুন করে। ধীরে ধীরে সে মিলিয়ে গেলো সামনের ঘন কুয়াশায়। জাকির যখন বেরিয়েছিল তখন কুয়াশা হালকা ছিল। এখন তা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। ডানহাতে ধরা উলের টুপিটা মাথায় পরে নিলো সে। আর এগোনো কি ঠিক হবে? আজ ফিরে যাই বরং ... ভাবতেই আবার শুনতে পেলো,
-- আসুন না, বসি একটু!
শীতল অথচ গমগমে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো যেন কোনো গভীর কুয়ো থেকে। এই কণ্ঠস্বর জাকিরের ভেতরটা কাঁপিয়ে দিলো একেবারে।
প্রতি লোমকূপ সজাগ হয়ে উঠলো মুহূর্তেই।
লোকটা এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে। এসে জাকিরের মুখোমুখি দাঁড়াতেই যেন একরাশ কুয়াশা এসে পাক খেতে লাগলো ওদেরকে ঘিরে। এভাবে কুয়াশা কেন ঘিরে ধরলো হঠাৎ! কখনও তো কুয়াশার এমন আচরণ চোখে পড়েনি আগে! চোখের সামনে চেনা জায়গাটা কেমন যেন অচেনা মনে হলো। কুয়াশার ভেতর থেকে আবারও ভেসে এলো শীতল কণ্ঠটা।
-- আপনার সাথে আমার কথা হওয়া জরুরি। আর তার জন্য এই জায়গাটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে আমার। কিন্তু বার বার আমার আহ্বান আপনি উপেক্ষা করছেন কেন? আপনি হয়তো জানেন না, আপনাকে বাধ্য করা আমার জন্য খুব সহজ ব্যাপার।
-- কে আপনি? এ..এভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে? জানেন আমি কে? ভয় দেখাতে চাইছেন? এক্ষুণি ফোন করছি দাঁড়ান। থানা বেশি দূরে নয়, পাঁচ মিনিটও লাগবে না পুলিশ আসতে।
আবারও দুলে দুলে হাসতে লাগলো লোকটা। বড় নিষ্ঠুর সেই হাসি। পকেট হাতড়াতে লাগলো জাকির। মোবাইলটা পাচ্ছে না। দু'টো পকেটই তো প্যান্টের, মোবাইলটা পাচ্ছে না কেন সে? হাতড়াতে হাতড়াতে অবশেষে পেলো একসময় ।
হাতে নিয়ে আঙুল ছুঁইয়ে কী-প্যাড বের করার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো, কাজ করছে না মোবাইল। সুস্থ সবল মোবাইল তার। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই দেখেছে, চার্জ ফুল ছিল, এখন কাজ করছে না কেন? যদিও হাতদুটো তার ভীষণরকম কাঁপছে, তবুও আবারও চেষ্টা করলো।
নাহ্, ঠাণ্ডা মেরে আছে একেবারেই!
কিন্তু লোকটা যে একদম নিকটে! পালাতে গেলেও জাপটে ধরবে সাথে সাথে। কেউ তো নেই আশেপাশে! কুয়াশা অসম্ভব রকমের জমাট ধরেছে। দীঘির কাছাকাছি কয়েকটা বাড়িঘর ছিল , সেগুলো কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?
কিছুই দেখতে পাচ্ছে না কেন সে? দীঘিটাই স্পষ্ট শুধু। ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশা দুলছে ঢেউয়ের মতো। দুলছে দীঘির টলটলে জল। লাইটপোস্টের মৃদু আলো জ্যাকেটধারীর লম্বা দেহের ধাক্কায় বেঁকে গিয়ে পড়েছে সেই জলে। নরম সোনালী রঙ ছড়িয়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউয়ের মাঝে।
এতক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়েছিল লোকটা। সামান্য নড়ে উঠলো এবার। দুই হাত দুইদিকে এমনভাবে প্রসারিত করলো যেন উড়াল দেবে এখনই।
শোঁ শোঁ করে বইছে হিমেল হাওয়া। জাকিরের প্রতিটি অঙ্গ কাঁপতে লাগলো ঠকঠক করে। লোকটা এগিয়ে এলো তার দিকে দু'বাহু প্রসারিত করেই। বললো,
-- এসো, সঙ্গী হও আমার, আমি যে তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি!
-- কোথায়?
-- যেখানে গেলে কেউ খুঁজে পাবে না তোমায়!
-- খুঁজে পাবে না!! কেন?
-- খুঁজে পাওয়ার কথা নয় তাই! কেউ খুঁজে পায় না, কেউ ফিরেও আসে না ওখান থেকে।
-- কিন্তু কেন যাবো? আমাকে কেউ খুঁজে পাবে না, এমন জায়গায় আমি কেন যাবো?
-- আমি চাইছি তাই!
-- তুমি চাইবার কে? তোমাকে তো আমি চিনি না! যাদেরকে আমি চিনি, তাদেরকে ছেড়ে যাবো না আমি তোমার সাথে।
-- কাকে চেনো তুমি? কে আছে এমন, যাকে তুমি চিনে গেছো খুব ভালোভাবে?
-- কে নেই? আমার বাবা-মা, একমাত্র বোন, দশবছর আগে বিয়ে করা আমার বউ, আমার ছোট্ট তুলতুলে কন্যাটা, কে নেই! আরও আছে বন্ধু- বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী।
-- এদের সবাইকে চেনো তুমি? কোনো দ্বিধা নেই মনে?
-- দ্বিধা থাকবে কেন? সব্বাইকে চিনি আমি। তোমার সাথে গিয়ে যদি হারিয়ে যাই, খুঁজে বেড়াবে ওরা হন্যে হয়ে।
-- কিছুদিন খুঁজবে, তারপর ভুলে যাবে। তারপর ভুলে যায়। তোমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না।
-- না হোক, তবুও আমি হারাতে চাই না এত তাড়াতাড়ি। চেনার ঘাটতি থাকলেও না। আমার ছোট্ট মেয়েটা যখন হারমোনিয়ামে বসে দুলে দুলে গান করে, দু'চোখ জুড়িয়ে যায় আমার! ওর একমাথা কোঁকড়া চুলে বিলি কেটে কেটে ঘুম পাড়াই আমি। তা নাহলে মেয়েটা যে আমার ঘুমোতেই চায় না!
-- এ সবই মিথ্যে মায়া, তুমি তা ভালো করেই জানো। যত জড়াবে তত বেদনা বাড়বে, বাড়বে মোহ।
-- বাড়ুক! মায়ায় জড়িয়ে যে বেদনা, সে বেদনাতেও সুখ খুঁজে নিতে জানি আমি।
-- হা হা হা! কোথায় সুখ? সে তো অধরা! প্রতিদিন নতুন চাওয়া, না পেলে বেদনা ভর করা, পেয়ে গেলেও আবার নতুন কোনো চাওয়া। সুখ ধরা দেয় কখনও? মিছেমিছি সময় ব্যয়।
-- দেয় দেয়, এসবের মাঝেই সুখ ধরা দেয়। অতি তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয়েও লুকিয়ে থাকে সুখের ঠিকানা।
-- যত্তসব! আর সময় দিতে পারবোনা। তুমি আমার সাথে যাবে কিনা বলো।
-- না যাবো না।
-- অসহ্য দুঃসাহস তোমার।
-- জানি। আমি এও জানি, তুমি ভীতু।
চারিদিক প্রকম্পিত করে বিকট শব্দে হেসে উঠলো লোকটা। মনে হলো তার হাসির শব্দে জমাট কুয়াশারা ভেঙে যাচ্ছে ছোট ছোট টুকরোয়। আর সেই টুকরোগুলো অসহ্য এক যন্ত্রণা হয়ে ঝরে পড়ছে জাকিরের ওপর। লোকটা আরও এক ধাপ এগিয়ে এসে প্রবল তাচ্ছিল্য ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
-- আমি ভীতু!! আমি???
-- অবশ্যই! ভীতু না হলে নিজেকে ওভাবে আড়াল করে রেখেছো কেন?
-- আমাকে দেখলে সাথে সাথে সংজ্ঞা হারাবে তুমি, নির্বোধ কোথাকার!
-- তাহলে দেখাও! ভয়ই তো পাওয়াতে চাইছো তুমি আমাকে!
-- শুধু তোমাকে নয়, সবাইকেই। সবাই ভয় পায় আমায়।
-- আমি পাই না। তোমার মতো মামুলি একটা লোককে ভয় পাওয়ার কি আছে?
-- ওহ্, তাই? শুরুতে তো ভীষণ কাঁপাকাঁপি করছিলে।
-- শুরুতে ওরকম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। তবে যত সময় গেছে, ভয়কে দূরে ঠেলতে সক্ষম হয়েছি আমি, অস্বীকার করতে পারো?
-- না, তা পারি না।
-- তাহলে বিদেয় হও।
-- বিদেয় হবো? দেখবে না আমাকে? হুডে ঢাকা আমার চেহারা নিয়ে তোমার যে সংশয়, দূর করবে না তা?
-- নাহ্
-- কেন?
-- কী হবে সংশয় দূর করে? হয়তো আড়াল সরে গেলেই ভয়াবহ কিছু দেখবো। দেখে হয়তো আতঙ্কে শিউরে উঠবো। দেখতে চাই না আমি তা। যা কিছু ভয়াবহ তা আড়ালেই থাক। সামনে আসুক শুধুই সুন্দর... শুধুই মনোরম কিছু।
-- কিন্তু তোমাকে না নিয়ে যে আমি যেতে পারি না। অযথা সময় নষ্ট করেছো অনেক। চলো এবার!
-- কতবার বলবো? এখনই যাবো না আমি। অযথা সময় তো তুমি নষ্ট করছো। বহু আগেই তোমাকে চলে যেতে বলিনি?
-- বলেছো। তুমি বললেই চলে যাবো ভাবছো কেন? তুমি একটা অতি সাধারণ আজ্ঞাবাহী মানুষ। এই পৃথিবীতে তোমার মেয়াদ শেষ। আর তোমার ইচ্ছে অনিচ্ছেয় তো তোমার যাওয়াটা নির্ভরশীল নয়। যখন ডাকা হবে তখনই যেতে বাধ্য তুমি।
-- বললেই হলো? জীবনের সৌন্দর্য পেখম মেলছে একে একে, এখনই চলে যাবো? বাবা-মা ক্রমশঃ বৃদ্ধ হচ্ছেন। তাঁরা শিশুকাল থেকে যেমন করে আগলে রেখে বড় করেছেন আমায়, আমারও তো কর্তব্য বার্ধক্যে যেন তাঁরা অসহায় বোধ না করেন, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা। চলে গেলে সেটা কে দেখবে শুনি?
-- সেটা জানা আমার কাজ নয়। আমার কাজ তোমাকে নিয়ে যাওয়া। যেভাবেই হোক নিয়ে যেতে হবে । কিন্তু তুমি বড় বেশি অবাধ্য, বড় বেশি সাহস তোমার। জানো, অবাধ্যদের কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা আছে?
-- জানি জানি। জেনেও অবাধ্য হবো। যাও, ভাগো এখান থেকে!
ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে গেলো যেন লোকটা। দু'হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আঘাত করতে লাগলো নিজের বুকে। তারপর এমনভাবে একটা হাত এগিয়ে নিয়ে এলো যেন চেপে ধরবে জাকিরের কণ্ঠনালী। এক ঝটকায় কিছুটা পেছনে সরে এসে জাকির বললো,
-- খবরদার, ছোঁবে না আমাকে! যাও, চলে যাও!
-- ওহ্!! অবাধ্য মানুষ! তুচ্ছ মানুষ! আমার হাতের ছোট্ট একটা ধাক্কায় ছিটকে পড়বে তুমি ওই শান্ত দীঘির জলে। কিছুক্ষণ তোলপাড় উঠে থেমে যাবে সব। একসময় ভেসে উঠবে তোমার নিথর দেহ। কিছুই করতে পারবে না তুমি।
-- পারবো। কারণ আমার আছে ভালোবাসার শক্তি। আমি এই পৃথিবীকে, আমার স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা সবাইকে ভালোবাসি ভীষণ। সেটাই আমার শক্তি। সেই শক্তির কাছে পরাজিত হবেই তুমি। শূন্য হাতেই ফিরে যেতে হবে তোমাকে।
-- কী নির্বোধ! কী ভীষণ নির্বোধ তুমি! আমি আর সহ্য করতে পারছি না তোমার এই নির্বুদ্ধিতা। প্রচণ্ড রাগে জ্বলে যাচ্ছে আমার সারাদেহ। এত সহজে হেরে যাবো ভেবেছো? কেউ হারাতে পারেনি আমাকে কোনোদিন, তুমিও পারবে না।
কোনো কথা বললো না এরপর জাকির। কোনো কথা বলারই আর প্রয়োজন নেই এরপর। পরাজিতরা আড়ালেই থাকে। আড়ালে থাকতে থাকতেই ওরা আরও আড়াল হয়ে যায়, ডুবে যায় অন্ধকারে। জাকিরের দৃষ্টি স্থির। ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি। সে হাসিতে স্পষ্ট, হারবে না সে। লড়ে যাবে শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত। কালো জ্যাকেটের আড়ালে লোকটার দিশেহারা ভাব। হয়তো এই প্রথমবার সে হেরে যেতে বসেছে। হয়তো কেন? অবশ্যই হেরে গেছে সে। নিশ্চিত হার.... নিশ্চিত হার- এ সে এখন ক্ষতবিক্ষত, বিধ্বস্ত!
হঠাৎ যেন মৃদু গুঞ্জন ভেসে এলো কানে। সমবেত গুঞ্জন। ধীরে ধীরে সেই গুঞ্জন নিকটে... আরও আরও নিকটে চলে এলো। কুয়াশা ফুঁড়ে দৃশ্যমান হলো আলোর মশাল। সমবেত গুঞ্জন সেই মশাল হাতে জাকিরের কাছাকাছি এসে থেমে গেলো। জাকির বললো,
-- কোথায় যাও তোমরা, মশাল হাতে?
-- আলো বিলিয়ে বেড়াই। সব কালো দূর করি মশালের আলোয়!
ভালোলাগায় ভরে গেলো জাকিরের মন। ও দাঁড়িয়ে রইল ভালোলাগায় বুঁদ হয়ে। একসময় দেখলো, হুডে ঢাকা লোকটা কোথাও নেই । নেই সমবেত গুঞ্জন আর মশালের আলো কাছাকাছি।ওই আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে দূরে বহুদূরে....ঢেউয়ের মতো।