দেখা হলে দেখে যাব
ধরে নেব, হৃদয়গ্রাহী আগন্তুক ইনি
যে আমার শরীর খসে যাওয়া
অ্যালগরিদম জানে
ধরে নেব—
কার্তিকের ভোরে পা ডুবাইনি আমি কোনো
হিম রক্তের পায়ে
যেন আমি ঘুমজেগে শ্মশানের নদীঘাটে একলাই;
বড়জোর হাতে নিয়ে আগন্তুক এক সুবাস—
ছুটে গেছি বারেবারে
ধরে নেব
শেষতক
আমার অতীত—
জাহাজের ভেঁপু শুনে প্রেম থেকে সরে কিঞ্চিত সতর্ক হয়ে জেগে থাকা ভোর
আমার ভিড়ের রাস্তায়
মেটাফোর হয়ে আছে অবিরাম
এ তব ফ্যাকাশে চাউনি
ঘেমো ক্লান্তির পর দু ফোঁটা জল
মেঘজর্জর বিষণ্ন বাতায়নে আমার
থাকবার ছাত্রী-হল মাথা তুলে চেয়ে আছে
জানি বেরোলেও কোনো চাকরি তো আমি
করছি না
রাস্তা ধ’রে এগোলে পরপর কিছু রাস্তাই এখানে দেখা যায়
বিদেশি সিমেন্ট আর বালিচকে মনে হয় চিবুকে গড়ে উঠছে খৃশ্চানতা
এদের পেরিয়ে আমি চলে যাব বটে
তবে কোনো চাকরি আমি করছি না
এখন
বুকে প্রেক ঠুকে ঠুকে শীতল দাহের পর
কবেকার প্রেমপত্রখানি চোখে পড়ে
চোখে পড়ে তোমার ফ্যাকাশে চাউনি
কোন ঝড় থেকে এলে এখন
কোন কাঁটাতারে মম হৃদয় বিঁধে এলে—
জানি না
এখনই তোমাকে কী জানাব—
আমি বেরিয়ে গেছি রাস্তায়
জলকাদায় ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটছি
কর্মের ভারহীন থেকে
বেকার—
বেকারত্ব
বুকে প্রেক ঠুকে ঠুকে তোমাকে পাওয়ার
পর
আমি কোনো চাকরি করছি না—কোনো চাকরি
করাই আমার পক্ষে সম্ভব না
লুপ্ত হইলে আমার বাহন
দেখবা—
ক্রুদ্ধ চোখগুলি তোমার প্রতি
সদয় হইয়া আসছে
কোনোকালে ঈগলের তীক্ষ্ণতায় তাকানো ঈগল
ছিল না তারা যেন
তারা চিরায়ত মানুষ, আর মানুষের মতোই সদয়
প্রেমময় বুক পাতা ছিল ও
আছে তোমার জন্য
সেইসব বুকে চোখ গুজরান হইলে
মুহুর্মুহু তারা কুশল জিজ্ঞাসা করতে থাকবে তোমারে
আমি মূর্চ্ছা গিয়া শুইয়া আছি তোমার ভেতর—
আমি পৃথিবীর ওলান বাইয়া
সদ্য জন্মানো বোবা জড়
বইলা দিও সব অস্তিদের
বিন্দু বিন্দু আগুনে
রুটি সেঁকা হইতেছে তোমার ভেতরে
তুমি নিষ্প্রয়োজন মনে করো এইসব রুটি
তবু সবচেয়ে পুরনো যে রুটি—তা সেঁকা হইয়া
ওঠার অপেক্ষা তোমার
ওই রুটি কি আমি?
তোমার অচল হওয়া সব চলাচল
তোমার দিকে ফিইরা থাকা জলেদের বুকেপিঠে বিঁইধা আছে
তুমি-আমি বা
আমি-তুমি
এরা সব ভিন্ন
রাত্তির ক্ষণিমতি তাই অন্ধকারের শান্তি স্থির হইয়া
দেহের নালাখন্দে জইমা থাকে
আলো ফুটলে সব গড়ায়ে যায়
শুকায়ে আসে
আমি মূর্চ্ছা গিয়া শুইয়া আছি তোমার ভেতর—
আমি পৃথিবীর ওলান বাইয়া
সদ্য জন্মানো বোবা জড়
আরম্ভের আলো—
তার
উচ্চ নিয়মতান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা
আমার ভয় হয়
ওদের আলো জ্বালায়ে
দ্ব্যর্থহীনভাবে কোনোদিন বইল না—
গোলকের অধীনস্ত প্রেমের কথা আনুপূর্বের পাপের কথা
অস্বীকার কইরো না
সবচেয়ে পুরনো রুটির মতো জুড়ায়ে আসা প্রেম।
চারটা ফুটনোট ঘুইরাফিইরা এ-ওরে প্রদক্ষিণ করতেছে
যত অস্থির হইয়া ওঠা তোমার পায়ে
আমার তা নাই
আশ্চর্য স্থির প্ল্যাটফর্মে অত কেন উদ্বেগ তোমার
এই তো ব্রহ্মাণ্ড একচক্ষু লণ্ঠন জ্বালায়ে দেবে ট্রেন আইসা গেলে
আমার প্রেম হিঁয়াসে ট্রেনের মতো পালাইতে পারে না
ঊর্ণনাভে যারা আটকা পড়ছে তোমার হইয়া
ওরা স্বেচ্ছায় থাকতেছে—
আমার ত্বকের গন্ধে
কবে নিছিলা বাঁকানো সমর্পণের
অনর্গল যত্নে পড়তে থাকা
শরীর; যেন আজকে তা আস্বাদের আশায়
প্ল্যাটফর্মের পিঁপড়ারা একলাইনে চলতেছে
ওরা আর কী জানে
গনগনে আগুনের পাশেও আমার কাচের প্রেম গলতেছে না মোটেও
তাই দাঁড়ায়ে এখনো
তোমার ট্রেনের অপেক্ষায়
তোমারে বিদায় দেওয়ার পর
আমি ফিইরা যাব বৃষ্টিতে
মেদুর দিনগুলিতে
সেই দিনগুলিতে কোনো প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসা দেখব না
আমার কর্কশ লাগে ওই শব্দ—
আমি শুনব না
যাওয়ার আগে ফিইরা তাকাইয়ো না
খোয়াব এমন ছিল, যেমন এখন হইতেছে
দেখো প্ল্যাটফর্মে ভিড় নাই
এমনই কথা ছিল
ট্রেন ছাড়ার পর আমিও ফিইরা যাব
আমি হইয়া আমার মানচিত্রটুকু প্ল্যাটফর্মে ছড়ায়ে পড়ার ঠিক পরেই
উজানগাঁ আর রাইখাল পার হইয়া সে আসে
সে আসে আমার ক্লান্ত ছায়ার মতো—
যেন আমি বইসা আছি একলা
এ পৃথিবীর ’পরে স্থির কোনো অকুস্থলে
ফিইরা আসে কেন
কেন অতীত বৃত্তান্তের সমীরণ আবার গায়ে মাখা
কেন সে আমারেই বাসে ভালো
বা একান্তই বাসে না—
সে আমি জানি না
শতশতবার সে যেন এমনই আসে দূর দেশ হইতে
পিদিম নিইভা যাওয়া সন্ধ্যায়—
যেন এক লহমায় আমি তারেই দেখার জন্যি
ধূসর শরীরের সমস্ত অন্ধ আলিঙ্গন জমা রাখি মিছে অভিলাষে
সকল দুপুর আর তার আলো ফুরায়ে গেলেও
তবু চাই ঘোরঘন আঁধারে প্রতিবার প্রদোষে
মূর্ত হোক দ্বিধা—
‘ভালোবাসে না সে আমারে
বা খুব করে বাসে’