লালনের সুরে দিনারম্ভে যাত্রা শুরু করা ঢাকা লিট ফেস্টের প্রথম দিন শেষ হলো অজস্র আলোচনা ও সহস্র মানুষের পদচারণায়। লালন সঙ্গীতের পর পরই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে শুরু হয় সাধনার নৃত্য। ক্লাসিক্যাল ড্যান্সের সঙ্গে সুরের মূর্ছনায় শুরু হয় এই আয়োজন।
লিট ফেস্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু ও ম্যানবুকার পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া সাহিত্যিক মনিকা আলী। আরো ছিলেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্, কাজী আনিস আহমেদ এবং আহসান আকবর, টাইটেল স্পন্সর বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ও ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ২০১১ সালে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজকে তার নবম আসর। বাংলা সাহিত্যকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজন। আমাদের আশা, একদিন লিট ফেস্ট বাংলাকে নিয়ে যাবে বিশ্বের কাছে। এর আগে হে ফেস্টিভ্যাল ছিল বহির্বিশ্বের সাহিত্যকে বাংলাদেশে পরিচিত করার জন্য। যারা আয়োজক তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এরকম একটা শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। ঢাকা লিট ফেস্টের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করছে। আগামী বছর এই আয়োজনের শ্রী এবং মান আরও বৃদ্ধি করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক, সাহিত্যিক, ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, আমরা ঢাকা লিট ফেস্ট আয়োজন করি একটি চিন্তার উৎসব হিসেবে। দর্শনার্থীদের উপস্থিতি এই উৎসবকে সরব ও সবল করে তোলে। তাই আজকে আমরা আমাদের এই অনুষ্ঠান শুরু করছি তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে। আমাদের গভীর আশা, এই বিশাল বাংলা এবং তার গোটা জনবল একদিন মুক্তচিন্তার বিশাল, সুদৃঢ় পাটাতনে পরিণত হবে।
কবি ও ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক আহসান আকবর বলেন, তিন দিনের এই উৎসবে দেশি ও বিদেশি সাহিত্যকে তুলে ধরা হবে। ঢাকা লিট ফেস্ট ফিকশনের সঙ্গে বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের সঙ্গে কবিতা, কবিতার সঙ্গে কলার মেলবন্ধন ঘটায়। বাক স্বাধীনতা, বহুত্ববাদ এবং রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ও মুক্তচিন্তার গুরুত্ব নিয়ে আমাদের আয়োজন সাজানো হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ঢাকা লিট ফেস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উপলক্ষে উৎসর্গ করেছে। তাই আমি গৌরবের সঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নাম। তিনি না থাকলে এই মঞ্চে বাংলা সাহিত্য নিয়ে, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশকে নিয়ে, বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এই অভিজ্ঞতা আমার হতো না।
এরপরপরই বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটোরিয়ামে ‘প্ল্যানারি ফিকশন: রেজিস্ট্যানস অর রিফিউজ’ নামক সেশন শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন মনিকা আলীসহ পাঁচ দেশের পাঁচ জন নারী লেখক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারতীয় লেখক সুমনা রায়। বাকিরা হলেন ব্রাজিলীয় লেখক মারিয়া ফিলোমেনা বইসো লেপেসকি, ফিনল্যান্ডের মিন্না লিন্ডগ্রেন, ব্রিটিশ-ব্রাজিলীয় জারা রদ্রিগেজ ফাউলার।
বাংলা একাডেমির কসমিক টেন্টে ‘কবিতা আড্ডা: এপার ওপার’ শীর্ষক পরিবেশনায় কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় লেখক কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, জহর সেন মজুমদার, গৌতম গুহ রায়, এপার বাংলার কামাল চৌধুরী এবং মোহাম্মফ সাদিক।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও শিক্ষক শামীম রেজা।
বিকাল ৪টায় আবদুল করিম সাহিত্য মিলনায়তনে দেওয়া হয় জেমকন তরুণ সাহিত্য পুরস্কার।
অভিষেক সরকারের ছোটগল্প ‘নিষিদ্ধ’ এবং রফিকুজ্জামান রণির ‘ধোঁয়াশার তামাটে রঙ’ কবিতার পাণ্ডুলিপির জন্য তাদের পুরস্কৃত করা হয়। জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ তাদের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা ও ক্রেস্ট তুলে দেন। উল্লেখ্য, আহ্বানকৃত পাণ্ডুলিপি থেকে নির্বাচিত পাণ্ডুলিপিকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কৃত পাণ্ডুলিপিটি কাগজ প্রকাশন পরবর্তী বছর বইমেলায় গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে।
শেষ সন্ধ্যায় আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ হলে অভিনয় জীবনের গল্প নিয়ে আলাপে বসেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন মঞ্চকর্মী ও শিক্ষক সামিনা লুৎফা।
শেষ দিনের আয়োজন শেষ হয় মাইজভাণ্ডারির গান দিয়ে।