১.
প্রবল উদ্দীপনার সহিত, আমার বন্ধু রাজু একদিন আমাকে খাদ্যবস্তুরটির কথা বলল; যা নাকি খুবই লোভনীয় এবং উদ্দীপক। বেশ কিছু সময় আড্ডা না হইতে হইতে হঠাৎই আবির্ভূত হয়া তার এই প্রস্তাবনা। সেই সময়টিতে সে যে উক্ত খাদ্যবস্তুটির উদ্দীপনার ভার বহন কইরাই আমাকে ফুঁসলাইতেছে, এই মূলক ভাবনার অভ্যুদয় ঘটা সত্ত্বেও আমি আমার ইন বিল্ট কিউরিয়াসিটিকে অস্বীকার করতে পারলাম না। বরং ভাবলাম, এই সংযমী চিন্তাপ্রক্রিয়ার ফলেই তো আমি নিজেকে অবদমনের পথ থেকা বাঁচাইতে সক্ষম হই নাই এতটা দিন। রাজুর সাথে বিভিন্ন পর্বে না থাকলে আমি এখন কোথায়ই বা থাকতাম সেইটা কি আর বলি কাউকে। তথাপি বস্তুটি যে কিছুটা হইলেও ইলিগ্যাল সেইটা বুঝতে তার ভাবভঙ্গি আমাকে খুবই সহযোগিতা করল।
ক্লাস এইটে পড়া সময় স্কুলের পেছনটায় একটা পুকুরঘাট ছিল, পাশেই একটি পরিত্যক্ত সিনেমা হল। ভাইঙ্গাচূইড়া অলমোস্ট মাটি হয়া গেছে তা। সেইটার একটা ভগ্ন দেয়ালের ওপর বইসা রাজু আমাকে প্রথম সিগ্রেটে টান দেওয়া শেখায়। প্রথম টানে কাশি দেওয়ার, মিথের মতো যেই ব্যাপারটা, তা না ঘটায় রাজু খুবই আশাবাদী হয়া উঠছিল আমাকে নিয়া। আমাকে দিয়াই নাকি হবে।
তারপর রফিক স্যারের ক্লাস ফাঁকি দিয়া আমরা সিগ্রেট খাইতে যাইতাম নিয়মিত। তার আগের বাংলা ক্লাসেও চাইলে যাওয়া যাইত। কিন্তু বাংলার ম্যাডাম তার রূপ গুণ ইত্যাদিতে আমাদের পছন্দের শীর্ষে থাকায়; আবার একইসাথে রাজুকে তিনি অপছন্দ করা সত্ত্বেও, তার ক্লাসে বেরটা হওয়া হইত না কারোই।
রাজু কুলসুম নামের এক মেয়েকে ভালোবাসত। একচুয়ালি ভালোই বাসত কিনা জানি না। কিন্তু তার সেই ভালোবাসার প্রদর্শন ক্রমেই উত্যক্তকরণে পর্যবসিত হইল। আমি এতে প্রচণ্ড বিরক্ত ছিলাম। এবং রাজুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে স্কুলের অন্যান্য মেয়েদের সামনে যাইতেও আমার অস্বস্তি ফিল হইতেছিল।
আমি কুলসুমের আসার পথে একদিন অপেক্ষা করতে থাকলাম যাতে তার সাথে বিষয়টা নিয়া বিস্তারিত আলাপ করতে পারি। এবং অতি অবশ্যই একটা নিউট্রাল পজিশনে থাইকা। যেহেতু রাজুর পারসেপশন আমি কিছুটা জানিই। আমার মনে হইল কুলসুমের সাথে বিষয়টা নিয়া কথা বললে হয়তোবা একটা বিহিতমূলক পরিবেশ আমি তৈরি করতে পারব। সাথে আমিও এই ঘটনা থেকে বাহ্যিকভাবে মুক্তি পাব। আর যদি ঘটতেই থাকে এই ঘটনা, তবে অন্তত বায়াসনেস থেকা তো আমার নিষ্কৃতি। সার্বক্ষণিক একরকম ম্রিয়মাণ ক্রোধ পালন আমাকে ক্লান্তই কইরা তুলতেছে।
কিন্তু ঘটনার যে এতই দুর্গতি হবে তা কি আর জানতাম আমি। কুলসুম রাজুকে বইলা দিল আমার ব্যাপারে যেন সে সাবধান থাকে। সময়কালে আমি কতটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারি রাজুর জন্যে; এমনকি কুলসুমেরও জন্যে—তার মাত্রার বিষয়েও নাকি কুলসুম তার সাথে দীর্ঘ আলাপ সাইড়া নিছে।
পরদিন রাজুর সাথে সিগ্রেট খাওয়ার তালে সেই দেয়ালের ওপর যথারীতি মিলিত হইলাম। প্রতিদিনের মতো সে সিগ্রেট ধরানোর নাম নিয়া যেই প্রভাব বিস্তারের আয়োজন ঘটায়ে থাকে, তা আর আজকে ঘটাইতে আগ্রহী দেখা গেল না। আমাকে ম্যাচও বের করে দিলে—আমি সিগ্রেট ধরায়ে আকাশের দিকে ছুঁড়লাম। সূর্যের দিকে তাকানোর ভাব কইরা নার্ভাসনেস হয়তো কাটাইতে চাইতেছি। আচমকা ঘটল কেমন, রাজু আমাকে লাত্থি দিয়া ফালায়ে দিল। স্থলভাগের উষ্ণ আবরণ পুকুরে পড়ার চোটে নাই হয়া গেল। আমি অবাক এবং স্থির।
তারপর তো বইয়া গেল কতগুলা দিন। আজকে আমি আবারও নার্ভাস আমার বন্ধুর বিষয়ে। আমাদের সাততলা আন্ডার কনস্ট্রাকটেড বিল্ডিং জুইড়াই এখন অস্থিরতা। পার্টির হেড অফিস থেকা অর্ডার আসছে লালমাইয়ের এই রেপ কেসের আসামিদের শনাক্ত কইরা প্রশাসনের হাতে তুইলা দিতে। এর সাথে সংযুক্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেকের নাম প্রত্যেকের জানা সত্ত্বেও, পূর্বের কিছু কেসের সূত্র ধইরা বর্শি এখন রাজুর গলায়।
২.
এই পর্বে রাজুর সাথে আড্ডাবাজিতে অন্যান্যবারের মতো মেয়েকেন্দ্রিক ব্যস্ততা কমই ছিল। অবশ্য পুরাপুরি তাও বলা যায় না। কারণ এখন নানান যৌগিক ব্যস্ততা ঘইটা থাকতে থাকলেও মৌলিক ব্যস্ততাগুলো সেই মেয়েকেন্দ্রিকই। কিংবা সকল ব্যস্ততার পরিণতি বা সমাপ্তিতে সেই মেয়ে। বাট তার মাত্রা চেঞ্জ হইছে। প্রেম নিবেদন বিবর্তিত হয়া ভায়োলেন্স আসছে।
অ্যাম্ফেটামিনের পরশ নিয়া, রাজু অন্যান্য বন্ধুদের ইশারা দিলেই, আট নয় সদস্যের একটা টিম প্রস্তুত হয়া যাইত প্রণয়রত যুগলের খোঁজে। আমাকেও যাইতে হইত তার ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসাবে।
আমার এতোদিনের বড় হওয়া—বুঝতে থাকা—দেখতে থাকা ইত্যাদিতে নৈতিকতার যে আঁচড় পড়ছিল, আমি তা নিয়া সন্দিহান হয়া তার নতুন মাপকাঠি তৈরিতে মনোনিবেশ করলাম এক পর্যায়ে। কারণ সুস্থতার বর্তমান মানদণ্ডে আমার এই সমস্ত কার্যক্রম চালানো এতই মুশকিল হয়া পড়ল, মানে এতই যে, আমি আতঙ্কে ঘুমটুম একপ্রকার ছাইড়াই দিলাম। আর আমার নয়া নৈতিকতার ফুয়েল হিসাবে বর্ডার পার হয়া আসতে থাকা সুঘ্রাণযুক্ত গুটিগুলা। আহা!
এই বস্তুটার জন্য আমি কি রাজুর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব নাকি আল্লাহর কাছেই কৃতজ্ঞ থাকি তা নিয়া দ্বিধায় কাটলাম। অধিকন্তু এমনও হইছে যে আজকে অন্তত তিনটা আল্লা হইলেই বাঁচি।
৩.
আমাদের হাতে দীর্ঘদিন যাবত কোনো কাজকর্ম নাই। আমরা বলতে আমাদের এই সাত তলা বিল্ডিংয়ের যারা তৃতীয় তলায় অবস্থান করতেছি গত বণ্টনের পর থেকা। রাজু একসময় সাততলায় ছিল। আমার সাথে যখন আবারও তার যোগ তৈরি হইল তখন সে পাঁচে। মানে আপগ্রেডেড হইছিল দুই তলা। এই প্রমোশনটুকু প্রত্যেকে পায়া থাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধুর বদৌলতে। কিছুজন হয়তোবা পায় তার বিচক্ষণতা, কর্মপদ্ধতির অগ্রগতি বা তার টুলস হইবার অধিকতর যোগ্যতার মধ্যে দিয়া। যেমন রাজু।
বেশকিছু ঘটনায় আমাদের চতুরতার আশীর্বাদস্বরূপ আমি আর আমার বন্ধু রাজুসহ পাঁচজন তৃতীয় তলায় উন্নীত হই মাস তিনেক আগে। গ্রাউন্ড ফ্লোরের কাছাকাছি যাইতে যাইতে আমাদের ক্ষমতার যেই সিলসিলা, তার সম্পর্কে আমাদের একটু একটু কইরা সচেতন করা হইছে বোধ করি। আগে যেমনটা উদাসীনতার সুযোগ পাওয়া যাইত অবসরে, এখন অবচেতনেই তার আর অস্তিত্ব নাই। অর্থাৎ আমরা নৈতিকভাবে কনশাসনেসের মধ্য দিয়া আমাদের সিলসিলা লালন করতে শিখছি।
প্রথমত আমরা স্নেহ ও শাসনের বন্ধনে আবদ্ধ দ্বিতীয় তলার বড় ভাইদের তরে। অতঃপর এমনিভাবে প্রথম তলা, গ্রাউন্ড ফ্লোর— এবং পরবর্তীতে আমাদের প্রিয় শহরটির এমপি। (এর মাঝে পুলিশদের নানান কর্মকর্তা ক্ষণে ক্ষণেই আসবে। তাদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া চলবে না আদর্শিক পাটাতনে দাঁড়ায়ে।) এই কইরা আমাদের সিলসিলাটি পরম স্পিডি মুডে চইলা যাবে একবারে রাষ্ট্রপ্রধানের দোরগোড়ায়। আমাদের এলাকা থেকা উদগত স্যুটেড ব্যুটেড বিক্রমশালী দারোয়ান সাহেবটি যেইখানে দণ্ডায়মান। সেই দরজা পেরুলেই আমাদের মুক্তি।
তবে আমাদের সব রকম অর্থের উৎসই যে সেই দরজা, তা ভাবাটা মস্ত ভুল কাজ। কর্মের বিনিময়ে বাঁচার মাহাত্ম্যও আমাদেরকে উৎসাহিত করে পদে পদে। রাজু সপ্তাহখানেক আগে একজন সম্মানিত প্রবাসীর থেকা অর্থ গ্রহণ করল। নগ্ন দাঁড়ায়ে জনাব প্রবাসী বারবার আমার দিকে দেখতেছিলেন। কোনো স্মৃতি হাতড়ায়ে মনে করার চেষ্টা কিনা কে জানে। আমি চিনি নাই তেমন। আমি কেবল তাকে প্রত্যেকের মতোই চিনি। একজন মাইকেল তিনি। এইতো।
মাইকেলরা বিদেশ থেকা যেই অর্থ নিয়া আসতেছেন আমাদের জন্য, তার পাওনা বাস্তবায়ন করতেই আমাদের এত চেষ্টা সাধনা ঘইটা থাকে প্রায় প্রতি মাসে। রাজুর সুন্দরী বান্ধবীগণ, শরীরের নানা ভঙ্গি এবং আকারের কারণে যারা শহরময় বিখ্যাত। তাদের কল্যাণেই আমরা এই সকল মাইকেলগণের সাক্ষাৎ পায়া থাকি নগ্ন ও নিবিড় অবস্থায়। এই মৌলিক শারীরিক গঠনে যেহেতু টাকার অংশ নাই, সুতরাং অর্জিত অতিরিক্ত বস্তুগুলাকে তিনারা আমাদের হাতে তুইলা দিবেন না কেন!
তাছাড়া প্রশাসনের লোকগুলারও তো বেতনের বাইরের কত আয়েশ দরকার এক জীবনে। আমরা কি তাও অস্বীকার করি?
৪.
বিকাল সন্ধ্যা সময় হইলে আমরা মাঝেমধ্যে অদূরে ঘুরতে যাইতাম। শাহরের আশপাশেই। যেইখানে বসতি একটু কম। কিন্তু সময়ের পরম্পরায় শহর বড় হইতে হইতে একসময় ভইরা যাবে এই স্পেসগুলাও। শহরের ছেলেমেয়েরা এদিক ওদিক প্রেম করতে যায়। আমাদেরও আছে বটে প্রেম করার সাধ্য, তবে তা লালন করবার সময় কই। ফলে ভাঙচুরই আমাদের পছন্দের ক্ষেত্রে আগায়ে থাকে। গড়তে থাকার যেই প্রবৃত্তি, আমরা নির্বাণ লাভের পর তা ফালায়ে আসছি গোমতির পাড়ে। ওই বস্তু আমাদের প্রিয় নাই আর।
এই বিষয়ে আমার পূর্বের নৈতিকতা ভাঙতে সাহায্য করছিল রাজুই। তবে তার সবচাইতে বড় বেগটা মনে হয় পোহাইতে হইছে আমারই। এই ত্যাগ, আমার মতো আর রাজু কি বুঝবে?
ও আমাকে যেইটা বুঝাইতে চাইছিল, এই যে শহরের নীরব নির্জনে প্রেম করতে থাকা মেয়েগুলাকে; সূর্য নেভার পবিত্র সময়ে সঙ্গী থেকা সাময়িক কাইড়া নিয়া সেক্স করা, এইটাকে আধুনিক মনমানসের ধর্ষণ টার্ম দিয়া ডিল করাটা খুবই গরিবি কাজ কারবার এবং এতে বোল্ড মানসিকতা লুপ্ত হয়। সেইটা প্রকৃতির কখনোই কাম্য হইতে পারে না। প্রকৃতি তো এইসব ভাবালুতা কিছুতেই গায়ে মাখবে না। সে বোল্ড এবং ভায়োলেন্ট।
তাছাড়া, মূলত বাস্তবিক অর্থে মেয়েগুলাতো চায়ও সেক্স করতে নাকি? অথচ তার অথর্ব সঙ্গীটা তাকে দেখাইতেছে গাছ এবং লতাপাতা। বাতাসে কইরা কোনো গাছ কি তখন সেক্স কইরা ফেলল নাকি তার গল্পে গল্পে, সেই প্রেমিক কি তা জানে? এইটাকে তুই বরং লিফট হিসাবে দেখতে পারিস। ধর স্বর্গে যাইবার লিফট দিল তোকে মেয়েটা। কিন্তু সে এক্টিভ হইল না বোকা ছেলেটার মোহে পইড়া। প্যাসিভ লিফট।
আমি তখন যা ভাবতে থাকলাম, এবং পরবর্তীতে দেখতেও থাকলাম, তা হইতেছে উক্ত বস্তুটির ক্রিয়া। মানে যেই বস্তু খাইয়া আমরা মাঠেঘাটে নাইমা পড়তেছি ও আমার নাইমা পড়া লাগতেছে।
তা মোটেই ছোট কোনো ঘটনা নয়।
এই অমৃত গ্রহণের ফলে আমরা প্রত্যেকেই প্রবলভাবে আমাদের কনফিডেন্স দ্বারা তাড়িত হইতেছি। এবং বাস্তবিকই আমাদের সকলের কনফিডেন্স ও করতে চাওয়া, এক ধরনের না। সেইক্ষেত্রে সে ফোকাস করার জায়গাটা ধরায়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কে। ফলে ক্রিয়াশীল রাজু এবং প্রতিক্রিয়াশীল অন্যান্যরা নব নব উদ্যমে তাদের নৈতিকতা ও সঠিকতা এই পৃথিবীর বুকে লেপ্টাইয়া বেড়াইতেছে। এবং ক্রমেই বেড়াইতেছি।
কিন্তু এর মধ্যে স্থিতি থাকার বিষয়টা নিয়া আমি সন্দিহান। আগে ঘোর বিরোধীই ছিলাম যদিওবা এই হিপোক্রেসির। সেক্স যখন আমাদের নিকট এতই মহাজাগতিক হয়া ধরা দিল যে আমরা সপ্তাহে দুই তিনবার কইরা স্বর্গে লিফট নিতেছি। তথাপি এক ক্ষমতাধর মাইকেল যখন আমাদের কথা ফাঁস কইরা দিল ভদ্রসমাজে, তখন আমরা সমাজের বিদ্যমান নৈতিকতারই শেল্টার নিলাম। সংরক্ষণ কইরা রাখা তার ফুটেজসমূহ দোকানে দোকানে থেকা জুম্মার মসজিদের বারান্দায়ও পৌঁছায়া গেল সুপরিকল্পিতভাবে।
অতঃপর অতিব্যস্ততার সাথেই জনগণ তাদের বসতিস্থল থেকা এই ব্যভিচারিকে বাইর কইরা দিল। এবং আমাদেরকে মসজিদে ডাইকা বলা হইল, তোমরা খারাপ নিয়তে করলেও যা করছো ভালোই করছো। আল্লাহর জমিনে এইসব ব্যভিচারী দম্ভ নিয়া বাস করতে পারে না। তাদের স্থান জাহান্নামে। আল্লাহ নিজগুণে এই কাজে তোমাদের ভুল ত্রুটিসমূহ ক্ষমা কইরা দিবেন। আশা রাখতে পারো।
৫.
তবে এবার বোধহয় ঘইটা গেল একটু ভিন্ন ঘটনা। আমি আর রাজু গুটি খায়া আবেগতাড়িত অবস্থায় বাইর হইলাম। উদ্দেশ্যে ছোটার পর যা ক্রমেই আগ্রাসে রূপ নিতেছিল। যুগল খুঁইজা পাওয়ার পর দেখা গেল, রাজু অন্যান্য সময় যা করে তার কিছুই সে করতেছে না। চরম উত্তেজিত ডিরেকশন দিতে লাগল। আমি কিছুই বুইঝা উঠতে পারতেছিলাম না। ফলে আচরণে একটা আড়ষ্ট ভাব গোপন হইতেছিল না কিছুতেই। পিস্তল বাইর কইরা রাজু প্রেমিকটার মাথায় বুকে এলোপাথাড়ি গুলি করল। মেয়েটা অজ্ঞান হয়া পইড়া যাইতেছে। কিন্তু আকস্মিক কোনো এক বিহবলতায় সে জাস্ট টলতেছে। খুব আস্তে বলল, রাজু আমি চইলা যাব ঢাকায়। আমাকে মাফ কইরা দেও।
আমি তখনও হা কইরা দেখতেছি আর একটু আধটু রাজুর নির্দেশ পালন করতেছি। কী হইতেছে কেন হইতেছে। সে কি রাজুর কোনো প্রেমিকা নাকি।
আমাকে এমন হতবিহ্বল অবস্থায় দেখতে রাজুর মেবি অস্বস্তি এবং প্রচণ্ড রাগ হইতেছিল। সে মেয়েটার মুখ চাইপা ধইরা আমার দিকে পিস্তল তাক করল। বলল, হারামজাদা হা কইরা আছোস ক্যান, চোদ!
৬.
আস্তানায় পরদিন আসতে সময় দেখি শহরে তুলকালাম কাণ্ড। দুইটা মানুষ মারা গেছে প্রেম করতে গিয়া। তারা দুইজনই অবিবাহিত ছিল। তাহলে লালমাই এলাকায় ওরা ক্যান ফষ্টিনষ্টি করতে গেল? তার নিকাশ করতেও অনেককে ব্যস্ত দেখলাম। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে আমার মনে হইতেছে এই জনমতটিই হয়তো আবারও আমাদের রক্ষা করবে। আশার আলো দেখতে পাইলাম। কিন্তু অস্বস্তি ঝাড়তে পারলাম না পুরাপুরি।
কিন্তু এই জাজমেন্ট ফুরানোর পর পার্টির বিরোধী শক্তির তোলপাড় চোখে পড়ল। আমাদের বিল্ডিংয়ের সব গেট লাগানো। নিচ তালার বড় ভাইরা আসেন নাই। উপরে গিয়া দেখি পোলাপান গাঞ্জা খাইতেছে আয়েশ কইরা। পৃথক পৃথকভাবে রাজু আর আমি একই বিল্টিংয়ে আশঙ্কার দোলাচলে দুলতেছি।
রাত নামতে নামতে পরিস্থিতি বেশ ভয়ানক হয়া উঠল আমাদের জন্য। পার্টির সুনাম এবং কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্নতা ঘটছে। এতে বড় ভাই থেকা শুরু কইরা দলের প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ। জাতীয় পর্যায়ে অভিযুক্তদের নিয়া আলাপ উঠল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের পালানোর কোনো আদেশ আসে নাই। সুতরাং আমরা পলায়ে পূর্বেকার রীতি ভঙ্গ করতে পারি না। এবং এই অনুমতি ব্যতীত পলানোর যা শাস্তি হবে সেইটার মাশুল অনেক বড়। এবং ভয়ানক।
আমার ভাবনায় কোনো সুষ্ঠু সঠিকতাই খুঁইজা পাইতেছিলাম না এইসব ঘটনার। আমরা যাদের তরে, অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের নানাবিধ কর্মকাণ্ডের যারা ভোক্তা, তাদের কেনইবা এতটা দায়মুক্তি থাকবে এই ঘটনা থেকা। সময়ে সময়ে আমাদের ভালো এবং মন্দ কর্মকাণ্ড তো সমানতালেই আলোচিত ছিল। যেগুলার ইমপ্যাক্ট তারা ভোগ করছেন স্থানীয় ও জাতীয় পরিসরে। আমরা তো তাদের পাওয়ার ব্যবহার করবার ফলেই এইখানে। নাইলে তো আমরা থাকতাম আমাদের মায়েদের মতোন ভালো আর কোমল।
রাত কিছুটা গভীর হইলে বড় ভাইরা একজন একজন আসতে লাগলেন নিচ তালায়। আমি আর রাজু ছাদে। উপর থেকা দেখতেছি ক্রিমিনালদের। পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিতেছে, তা আমাদের কাছে একেবারেই পরিষ্কার। আমরা আর কারো ওপরই ভরসা রাখতে পারতেছি না। রাজুকে দেখলাম খুব ঋজু হয়া আছে। আমার ছোটবেলার সেই বন্ধুটা। আমি কি আরেকবার তার সাথে গুটি খাব কিনা সে জানতে চাইল। আমারও মনে হইল এতে হয়তো একটু রিলিজ পাওয়া যাবে এই অস্থিরতম সময়ে।
আমি আর রাজু। ছাদে গুটি খাইতেছি। আকাশে চাঁদ উঠছে একটা একেবারে গোল। মনে পড়ল ছোটবেলায় দৃশ্য আঁকতে গিয়া যখন চাঁদটা ডিমের মতো হয়া যাইত, রাজু আমাকে পানির বোতলের ঢাকনা দিত গোল কইরা আঁকতে। তারপর তো অনেক অনেকদিন একই জিনিস দিল গুটি খাওয়ার সময়। আজকে কিছুই নাই। এমনেই খাইতেছি আমরা। আমরা কই যাব একটু পর।
এইসেই ভাবতে ভাবতে আমি আবারও রাজুর লাত্থি খাইলাম। আমাকে ছাদ থেকা ফালায়ে দিল রাজু। কেন দিল। এইটা কি স্কুলের পাশের সেই ছোট্ট দেয়াল নাকি যে এইখান থেকা পইড়া আমি বাঁইচা থাকব। আমার কুলসুমের কথা মনে পড়ল। গতকাল তো সেই মেয়েটা কুলসুমই ছিল। আমি চিনলাম না কেন তখন। একটু মোটা হয়া গেছে তাই হয়তো। আমরাই কেবল হইলাম হাড্ডিসার। শেষ মুহূর্তে আরেকবার রাজুকে দেখার ইচ্ছা হইল। কিন্তু রাজু কি ওপর থেকা তাকায়ে আছে কিনা তাও তো দেখতে পাইতেছি না আমি। কিছুই তো দেখতে পাইতেছি না।