প্রশাসনিকভাবে ফিলিপাইনের অন্তর্গত মিন্দানাও হচ্ছে আদতে বিশাল একটি দ্বীপ ও অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপমালার সামাহার। ৯৭,৫৩০ স্কোয়ার কিলোমিটারে ব্যাপ্ত, চার-চারটি সমুদ্র ঘেরা মিন্দানাও আকার আয়তনে নেদারল্যন্ডস্ কিংবা অস্ট্রিয়ার চেয়েও বেশ খানিকটা বড়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মিন্দানাও স্থানীয়ভাবে ‘লুপ্যাং পিনানগাকে বা ‘প্রমিজ ল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত। দ্বীপটি মরো বা ফিলিপিনো মুসলমানদের সনাতন বাসভূমি। জনসংখ্যার দিক থেকে মরো সম্প্রদায় ছাড়া এ ভূখণ্ডে বাস করছে কুবুয়ানোস, মারানাও এবং প্রকৃতি উপাসক লুমাদ ও নৌকায় বাস করা সি-জিপসি প্রমুখ সম্প্রদায়। মিন্দানাওয়ে প্রচলিত ভাষার সংখ্যা প্রচুর। এদের মধ্যে কুবুয়ানো, হিলিগেইনন, মাগিন্দানানন উল্লেখযোগ্য। তবে ইংরেজি ভাষা আকাদেমিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মিন্দানাওয়ের কবিরা প্রকাশ মাধ্যম হিসাবে সচরাচর দুটি ভাষা, তথা মাতৃভাষা ও ইংরেজি ব্যবহার করে থাকেন। এ দ্বীপদেশের কবিতার উদাহরণ হিসাবে এখানে চারটি কবিতা ভাষান্তরে উপস্থাপিত হচ্ছে। কবিতাগুলোর রচয়িতারা সকলেই বয়সে তরুণ। এরা কবিতার পাশাপাশি চর্চা করেন সংগীতের, এবং কবিতা-পাঠে গিটার কিংবা অন্য কোনো বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি মেশানো পছন্দ করেন। এদের কবিতা, সংক্ষিপ্ত বায়ো ও অন্যান্য প্রসাঙ্গিক তথ্য ইন্টারনেট থেকে নেওয়া হয়েছে।
বনানীর মধ্যিখানে—খানিকটা খোলামেলা জায়গায়
ছোট্ট এক কুড়েঘর
দাঁড়িয়ে আছে খুঁটিতে ভর দিয়ে কর্দমাক্ত জলাশয়ের
ফুট পাঁচেক উপর
ছাদ জুড়ে মেহগিনির মিনার প্রতিম বিপুল তরুবর
পত্রালির অজস্র— চোখ তাকিয়ে দেখছে
সমস্ত কিছু—নিসর্গ.. নিলিমা ও চরাচর
নিচে ঝরা পাতায় সারাক্ষণ বাতাসের মৃদু গীত গাওয়া
দীঘল-দেহী কগন ঘাসের গন্ধে ভরে উঠছে আবহাওয়া
তবুও বাতাবরণে কী যেন দারুণ খোশ মেজাজী
শত দরিদ্রের মাঝখানে ছুটে মৃত্যুর বেদনাহীন তাজি।
আগুনের চোখগুলো মুদে এসেছে এখন
তিরোহিত হয়েছে অম্লজানের পথ্য,
বিকালের রোদে মিইয়ে আসা ফুলের মতো
ভেঙেচুরে একাকার হয়েছে
শিখার লোহিতে নীলাভ স্থাপত্য।
ক্রমশ শীতল ও ভারী হতে হতে
রূপান্তরিত হয়েছে শূন্যতায়—
ঝরছে নিষ্প্রাণ ছাইয়ের প্রপাত,
যে চোখগুলো ছিল নক্ষত্রের বসতবাড়ি
তারা পড়ে আছে পরিখায় আলো বিবর্জিত অনাথ।
তিরোহিত হয়েছে প্রেরণার ঝলমলে জৌলুশ
তাদের বিজয়ের রুপালি নীলাভ বিচ্ছুরণ,
ওই চোখগুলো এখন চন্দ্রিমার ফানুশ
আঁকড়ে ধরেছে আঁধার যেন যখের ধন।
তোমার দিকে না তাকানোর জন্য
ক্ষমা করো
অথবা ভালো করে বসে পড়ার আগে
তোমার চোখে চোখ রেখে গাঢ়ভাবে তাকানোর জন্য
অথবা তোমার প্রশ্নের উত্তরে চুপ থাকার জন্য
ক্ষমা করো;
তুমি জানতে চেয়েছিলে—
অন্য কারো সঙ্গে আমি ভ্রমণ করছি কি না
ক্ষমা চাইছি ফের
হাত বাড়িয়ে তোমাকে অসাবধানে স্পর্শ করার জন্য
কখনোসখনো আমার মধ্যে এ প্রবণতা জাগে
শুধু জানতে চাই—স্পর্শের অনুভব কেমন।
একবার আমি তোমাকে অন্য কেউ ভেবেছিলাম
অথবা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সত্তা—
আশা করি আমার উপস্থিতিতে তুমি কিছু মনে করোনি
সচরাচর আমি অনেকটা জায়গা জুড়ে বসি
বুঝলে—যা আমার প্রাপ্য নয় কোনোভাবে।
হালকা চালে হেঁটে যেতে যেতে আমরা
অনুভব করি দখিন হাওয়া,
চতুর দিকে ছড়িয়ে আছে অশুভ ছায়া
তুমুল ঘৃণা আমাদের করে পিছু ধাওয়া।
ফিরে তাকাতে বাধ্য হই আমরা
বেজায় ভীতিকর পরিবেশ,
আমাদের প্ররোচিত করে আর্ত চিৎকারে
আতঙ্ক অশেষ।
অনুভব করি—
চক্ষুষ্মান হয় দৈত্যের কবন্ধ শরীর,
তার সুদীর্ঘ শশ্রুতে দোল খায়
দখিনা সমীর।
সিন্দুকের চেয়েও বৃহৎ তার কদাকার দেহ
পুরো বাড়িঘর যেন ঢুকে যাবে পাকস্থলীতে
জানে না কোনো সংবেদন কখনো—প্রাণে জাগে না স্নেহ।
কে যেন শক্ত হাতে আমাদের
চেপে ধরে দেয়ালে,
কাঁপে হৃৎপিণ্ড উৎসর্গের মেষের মতো
জানি না কী আছে দানোটির খেয়ালে,
আমাদের অদৃষ্টে লেখা কী আছে
পারি না বুঝতে,
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে
কেবলই ক্লান্ত হই যুজতে যুজতে।
মুখগহ্বর খুলে ভঙ্গি করে সে
আস্ত মানুষ গিলে খাওয়ার,
মিলিয়ে যায় দিগন্তে
সমুদ্র থেকে ঝড়ো হাওয়া আসে দুর্নিবার,
তড়িতে সমস্ত দেহমন হয়ে ওঠে নিশ্চিত নির্ভার
খুশি হয়ে ওঠে ফের—উপদ্রুত সত্তা আমার।