যে সমাজে জিজ্ঞাসা নেই, চিন্তা ও বিবেকের চর্চা নেই; সে সমাজ একটি পশ্চাদপদ সমাজ। সে সমাজে মানুষের মন ও মনন স্থবির। স্বকীয়তাহীন, অপরিণত। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ইমানুয়েল কান্টের কথাকে সমর্থন দিয়ে বলা চলে- অপরিণত সমাজ নিজেরা বুদ্ধি উৎপাদন না করে অন্যের বুদ্ধিতে চলে। সামনে এগুতে গিয়ে পেছনে পড়ে রয়। জ্বলন্ত উদাহারণ আমরা ও আমাদের সমাজ।
কিন্তু এমন অবস্থা কোনোকালেই আমাদের ছিল না। প্রাগৌতিহাসিককাল থেকেই আমাদের এই ঊর্বরভূমির লোকজন চিন্তায়-চৈতন্যে সমৃদ্ধ ছিল। বিবেকের দায়বদ্ধতা ছিল, আমরা ভাবতে জানতাম।
নাতিদীর্ঘ একটা উপনিবেশ আমাদের সব কিছু ভেঙে দিয়েছে। নীতি-নৈতিকতায় এখন আমরা ভঙ্গুর একটা জাতি। চিন্তা-দৈন্যতা আমাদের দূর্বল থেকে দূর্বলতর বানিয়ে দিচ্ছে। কী আমাদের ভবিষ্যত, কোথায় আমাদের গন্তব্য?
এসব নিয়ে যাদের ভাবা দরকার- আমাদের চিন্তক, বুদ্ধিজীবি কিংবা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তারা হাঁটছে একেবারেই উল্টো পথে। ক্ষমতার তোষামোদ, উপনিবেশের প্রতিনিধিত্ব ও রাজনৈতিক ভণ্ডামিই তাদের আবর্তনকেন্দ্র। মন ও মননে হীন এসব বুদ্ধিকর্মীরা নির্দিষ্ট একটা কক্ষ পথের বাইরে কিছুতেই বেরুতে পারছে না। ফলে ‘শিখা গোষ্ঠী’র পুরনো স্লোগানটা এখনো প্রাসঙ্গিক এবং বিশেষ ক্ষেত্রে অপরিহার্যই রয়ে গেছে- ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’।
সত্যিই! মুক্তি আমাদের জন্য অসম্ভব বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা আমাদের অধরা। সত্য ও সততা আমাদের নাগাল পেরিয়ে গেছে। এমনই সময়ে চিন্তাঙ্গনে স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছেন ইবাদ বিন সিদ্দিক।
কৈশোরে কলম ধরা ইবাদ বিন সিদ্দিক প্রায় এক যুগ পর নিজের লেখালেখি ও ভাবনাকে মলাটবদ্ধ করার প্রয়াস দেখিয়েছেন। নিজের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে মুক্তি-আকাঙ্ক্ষায় সমাজ ও তার সঙ্গ-অনুষঙ্গ নিয়ে চিন্তার চর্চা শুরু করেছেন। স্রোতের উজানে গিয়ে তার এই চিন্তা তোষামোদের বিপরীতে দ্রোহ, সুশ্রী মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রকট সত্য, মিহি ভণ্ডামীর জবাবে তীক্ষ্ণ আঘাত।
নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও পঠন-পাঠনের নির্যাসকে ব্যবহার করে জ্ঞান চর্চায় নিবিষ্ট হয়েছেন ইবাদ বিন সিদ্দিক। সমাজস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান- রাষ্ট্র, ধর্ম, পরিবার ও সংস্কৃতি বিষয়ক তার খণ্ড খণ্ড ভাবনাগুলো এতোদিন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সমাজচিন্তা’ নামে প্রকাশ করছিলেন। ক্ষুদ্রকৃতির এসব রচনা পাঠক মহলে সমাদৃত হচ্ছে।
এসব ভাবনাবাক্য অধিকাংশ সময়ই তিক্ত সত্যকে ধারণ করে আসছিল। ফলে আক্রমণাত্মক কিছু সমালোচনা ও অভিযোগকে পাশ কাটিয়েই ভিন্ন ও অতি দরকারী খণ্ডচিন্তা সমূহ- বই আকারে প্রকাশ করার মহৎ সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। বিষয়টি আনন্দের।
বিভিন্ন মাধ্যমে রকমারি বিষয়ে লেখালেখি করে হাত পাকানো ইবাদ বিন সিদ্দিক ইচ্ছে করলেই গল্প-উপন্যাস কিংবা গতানুগতিক প্রবন্ধ-নিবন্ধের মাধ্যমে নিজের আনুষ্ঠানিক উন্মেষ ঘোষণা করতে পারতেন। তা না করে সাহস ও নিষ্ঠা নিয়ে কঠিনতর একটি মননশীল সৃষ্টির অবতারণা করলেন। যা সত্যিই প্রশংসার্হ।
‘আপনার সমীপে যাহা বলিতে চাই’ বইটি সামাজিক মুক্ত বুদ্ধি চর্চার প্ল্যাটফর্মকেে আরো বিস্তৃত করবে। তর্ক ও জিজ্ঞাসায় ভাবনাগুলো প্রাসঙ্গিক। বিশেষত আমাদের এই স্থবির-বন্ধ্যা সমাজের মুক্তি, স্বাধীনতা এবং অগ্রগতির আলোচনায় ইবাদ বিন সিদ্দিকের এই চিন্তাপ্রকল্প অবদান রাখবে।
গ্রন্থটি ভাবনা-চর্চার একটি ব্যতিক্রমী পাঠ্য হবে এমনটিই ধারণা ও প্রত্যাশা।
নাম : আপনার সমীপে যাহা বলিতে চাই
লেখক : ইবাদ বিন সিদ্দিক
প্রচ্ছদ : কাজী যুবাইর মাহমুদ
প্রকাশনী : ফেস্টুন পাবলিশার্স
মুদ্রিত মূল্য : ১৫০৳
স্টল নং : ১৫১, লিটলম্যাগ কর্ণার