সাহিত্য মূল্যায়ন হচ্ছে দীর্ঘ অনুশীলনের ব্যাপার। সাহিত্য সম্পর্কিত উৎসাহ ও সাহিত্য মূল্যায়নের ক্ষমতা নিয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে না। ফলে সাহিত্য কেবল একজন পাঠকের কাছে একটি বিশেষ সময় বা পরিবেশের হাতে তুলে দেওয়া ইতিবৃত্ত মাত্র নয়। পাঠকের কাছে সাহিত্যের সম্পর্ক তাই মানবিক অনুশীলন নির্ভর সম্পর্ক। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্ব তাই সাহিত্য চর্চা, সাহিত্য বোঝা এবং সাহিত্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলাকে অনুশীলন হিসেবে গণ্য করে।
সাহিত্য সৃষ্টি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বোঝার জন্য মার্কসবাদের উত্তরসূরি ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের সাহিত্য বিষয়ক চিন্তাসমূহকে উপলব্ধি করা দরকার। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় “সাহিত্য প্রসঙ্গে” শিরোনামে একটি বই সম্পাদনা করেছেন লেখক অনুপ সাদি।
“সাহিত্য প্রসঙ্গে” বইটি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে এবারের ঢাকার একুশে বইমেলায়। বইটিতে রাজনীতিবিদ ভি. আই. লেনিনের মোট সতেরটি প্রবন্ধ বা প্রবন্ধের অংশবিশেষ সংকলিত হয়েছে। বইটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা যুক্ত করা হয়েছে, একটি ভূমিকা লেখা হয়েছে এবং পূর্বকথায় বইটি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা প্রদান করা হয়েছে। এই ভূমিকা ও টিকা রচনা এবং সম্পাদনার দায়িত্বটি সুচারুরূপে করেছেন লেখক অনুপ সাদি। তিনি এর আগেও বেশ কয়েকটি প্রবন্ধের বই লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন। বইটি নির্ভুলভাবে প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা “টাঙ্গন”।
এরকম একটি বইয়ের কেন প্রয়োজন অনুভব করেছেন জানতে চাইলে অনুপ সাদি বলেন, বাংলা সাহিত্য কোথায় অবস্থান করছে এবং এই সাহিত্যকে কোনদিকে নিয়ে যেতে হবে, সেটি আমি দেখতে চেয়েছিলাম। রুশ সাহিত্যে গোগল, চেকভ, দস্তয়েভস্কি এবং তলস্তয়ের নাম অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে তলস্তয়কে লেনিন দেখেছিলেন রুশ বিপ্লবের আয়না হিসেবে। রাশিয়ার স্বৈরতন্ত্রকে বিলুপ্ত করতে লেনিনের অবদানকে স্মরণ করা এবং প্রাচ্য স্বৈরতন্ত্রের রূপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহিত্যকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমি বইটি সম্পাদনা করতে চেয়েছিলাম।
রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী অনুপ সাদির কাজগুলো রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে তিনি সাহিত্যের সাথে রাজনীতির সম্পর্কটিকেও দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সাহিত্য যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক কৃষকের কাজে না লাগে, তবে সেই সাহিত্য টিকবে না। সাহিত্যের প্রধান ধারা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক কৃষকের সেবায় নিয়োজিত সাহিত্য। অন্যান্য সব সাহিত্যই হচ্ছে সমাজের সেই আবর্জনা যা ধ্বংস হবার জন্য অপেক্ষা করছে।”
অনুপ সাদি তাঁর প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, “বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল উপাদানগুলো চিহ্নিত করতে এই বই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সাহিত্যিক, লেখক, মনীষীদের দৃষ্টিভঙ্গি হতে প্রতিক্রিয়াশীল ও পশ্চাৎপদ উপাদানগুলো মুছে ফেলতে এই বই সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলা সাহিত্যের প্রগতিশীল গতিপথে এই বই আরও গতি সঞ্চার করবে এবং প্রগতির ধারায় তার অমোচনীয় চিহ্ন রেখে যাবে।”
সাহিত্য সম্পর্কে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী ধারণা পেতে বইটি পাঠ করা যেতে পারে। বইটি প্রকাশ করেছে টাঙ্গন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এর ৫২৪ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮০ টাকা। বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ থেকেও অর্ডার করা যাবে বইটি।