বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সীমানা পেরিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, নীলক্ষেত পলাশী হয়ে বইপ্রেমী প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায়। বাঙালিয়ানা সাজে সদ্য কেনা নতুন বইয়ের ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে, মুখে নির্মল হাসি নিয়ে ঘরে ফিরছেন বইপ্রেমী মানুষ।
চলতি বছর একদিন বিলম্বে শুরু হওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদম শেষ প্রান্তে। একটাদিন বাদেই এক বছরের জন্য পর্দা নামবে বইমেলার। তাই শেষ সময়ে বইপ্রেমী মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মেলা প্রাঙ্গণ। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই বইমেলায় সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বিকেল পাঁচটা বাজতে বাজতেই মেলা প্রাঙ্গণ যেন জনসমুদ্র।
শুধু ঢাকা নয় দেশের নানা প্রান্ত থেকে বইপাগল পাঠকরা এসেছেন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নিজের পছন্দের বই কিনতে। শামসুদ্দিন সোহাগ নামে এমন একজন বইপ্রেমী লালমনিরহাট থেকে মেলায় এসেছেন। উদ্দেশ্য বপছন্দের বইটি কিনবেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতি বছর মেলার শেষের দুই দিন ঢাকার বাহিরে থেকে এসে আমি বই কিনি। বইমেলায় বই কেনার জন্যে আমার আলাদা টাকা বরাদ্দ থাকে। ভালো কাপড়ের মতো ভালো বই কেনা ও পড়া আমার নেশা।
এত ভিড়ের মধ্যে কেন বই কিনতে আসতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শিউলি চন্দ্র পাল বলেন, এইটা আমাদের উৎসব প্রিয় বাঙালীর স্বভাব। বইমেলাটাকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করে এদেশের মানুষ। এক মাসের এই বই উৎসব শেষ হতে চললো বলে তাই শেষ সব কিছুর মতো বইমেলাও ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে।
শুধু যে উৎসব তার জন্য এত ভিড় এমনটা মানতে নারাজ তরুণ পাঠক আহমেদ কাশেস। তিনি বলেন, মেলায় শেষ সময়ে কিছু ভালো বইও আসে। মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক গ্রন্থগুলো প্রতিবারই মেলার শেষ সময়ে প্রকাশিত হয়। এমন বই কিনতে যারা মাস জুড়ে মেলায় আসেন না তারাও এই শেষের দুই দিন আসেন।
কথাপ্রকাশ প্রকাশনীর বিপনণ কর্মকর্তা ইউনুস জানান, খুবই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে এখন। বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাকেও ক্রেতা-পাঠকদের সাথে সময় দিতে হচ্ছে।
আগামীকাল ভিড় আরও বেশি হবে উল্লেখ করে সুলেখা লাইব্রেরির সত্ত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, প্রতিবারই মেলায় শেষের দুই দিন অনেক পাঠক সমাগম হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগামীকাল আরো বেশি লোক হবে।
পুথিনিলয় প্রকাশনীর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জানান, বই বিক্রি তো আসলে বাণিজ্যের অংশ। বইয়ের প্রতি মানুষের এত ভালোবাসা দেখে মনের শান্তি লাগে।
স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের বইয়ের বিক্রি বেড়েছে শেষ সময়ে। তবে কবিতা ও গবেষণাধর্মী বইগুলো গত দিনগুলোর থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মেলার ভিড়ে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত না হয় সে লক্ষে মেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা ও কড়া নজরদারি লক্ষ করা গেছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক শফিউল আলম জানান, শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন ও মেলার শেষ দুই দিন হওয়াতে ভিড় অনেক বেশি। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এই দুই দিন মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এবার একদিন বিলম্বে এই বইমেলা শুরু হওয়ায় অনেকেই ধারণা করছিলেন মেলার সময়সীমা হয়ত বাড়ানো হবে। এমন সম্ভাবনাও নাকোচ করে দিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, না, মেলার সময়সীমা বাড়নোর কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামীকালই মেলার শেষ হবে।
আর তাই লেখক,পাঠক ও প্রকাশকদের এ মিলনমেলায় বাজতে শুরু করেছে ভাঙনের সুর। শেষ সময়ে ভাঙনের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে এ বছরের বইমেলা।