বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: সদ্য সমাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে ফেব্রুয়ারির এক তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এক দিন দেড়িতে পর্দা উঠেছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলার। বইকেন্দ্রিক এত বড় আনুষ্ঠানিকতা ও পাঠক-লেখক আর প্রকাশকদের প্রাণের এই মিলনমেলাটি শেষ হচ্ছে আর কয়েক ঘণ্টা পরই।
রোববার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় আয়োজক বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমাপনী অনুষ্ঠান করলেও পর্দা নামবে রাত নয়টায়। প্রতি বছরের নিয়মিত আয়োজন হলেও এ বছর বেশ কিছু কারণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ বিশেষ হয়ে থাকবে ইতিহাসে।
বিলম্বে শুরু হয়েও ২৮ দিনে বইমেলা: ঐতিহ্য অনুযায়ী এই বইমেলা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির এক তারিখে শুরু হয়। এবার ঢাকা সিটি নির্বাচনের কারণে মেলা শুরু হয়েছে দুই তারিখ। দুই তারিখে শুরু হলেও বইমেলা কিন্তু অন্যান্য বছরগুলোর মতো ২৮ দিনই মেয়াদ পেয়েছে অধিবর্ষের কারণে। শুধুমাত্র চার বছর পর পরই অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২৯ দিনের মেয়াদে হয়। কিন্তু একদিন বিলম্বে শুরু হওয়ায় এবার আর সেটা হলো না। সেক্ষেত্রে অধিবর্ষের গ্রন্থমেলাও এবার হলো ২৮ দিনে।
মেলার পরিসর বৃদ্ধি: এবারসহ ছয় বারের মতো বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও আয়োজিত হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে বিগত পাঁচবারের চেয়ে আরও সম্প্রসারিত করে মেলার পরিসর বাড়ানো হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর ও গ্লাস টাওয়ার সংলগ্ন জলাধার পর্যন্ত। এতে করে শেষ সময়ে উপচে পড়া জনসমাগমে অস্বস্তি কমেছে অনেকটাই।
মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন চত্বরে বাংলাদেশের ইতিহাস: শেকড়, সংগ্রাম, স্বাধীনতাসহ মুক্তি ও অর্জন নামে বিভিন্ন চত্বরের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্ধিত অংশে। এমন আয়োজন এবারই প্রথম।
প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমির বাইরে লিটলম্যাগ চত্বর: বইমেলার ইতিহাসে লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের কথা আলাদাভাবে লেখা হয়। সেই লিটল ম্যাগাজিন চত্বর এবার স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে। এখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ছয়টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেয়া হয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমানকে মেলা উৎসর্গ: ফেব্রুয়ারি শেষেই মার্চের ১৭ তারিখে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী। এদিন থেকেই গণনা শুরু হবে মুজিব বর্ষের। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে এবারের মেলা উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সে অনুযায়ী মেলায় ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা আয়োজন। মহান এই নেতাকে নিয়ে এবারের মেলায় ২৫টি বই প্রকাশ করেছে আয়োজক বাংলা একাডেমি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বইমেলায় এত আয়োজন এর আগে কোনোবারই হয়নি। সে হিসেবেও এবারের মেলা পেয়েছে বিশেষ ও প্রথম অনেক কিছুই।
কথা হয় মেলার আয়োজনের সঙ্গে জড়িত সব থেকে পুরনো ব্যক্তিত্ব ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কম-কে জানান, অধিবর্ষ ও সিটি নির্বাচনের কারণে তারিখ ও দিনের সংখ্যার তারতম্যের কারণে এবারের মেলা একটা বিশেষত্ব তো রাখেই। তবে, বিলম্বে মেলা শুরু হওয়ার ঘটনা বা মেয়াদ বাড়ানোর ঘটনা আগেও ঘটেছে। ১৯৯৮ সালে মেলা শুরু হয়েছিলো ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ। বর্তমানের মেলায় শুরুর দিকের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় ছিলো বইমেলা শুধু ফেব্রুয়ারির ২০-২১ তারিখে হতো। মেলার ইতিহাস নিয়ে আগামী বছর বই প্রকাশ করা হবে সেটা পড়লে আরও ভালো বুঝতে পারবেন সবাই। তবে এবারের মেলা নানা কারণেই বিশেষ হয়ে থাকবে। আর কয়েক দিন পরে থেকেই মুজিব বর্ষ শুরু হবে। তার আগে এটাই শেষ মেলা। আগামী বার আমরা মুজিব বর্ষের মেলা আয়োজন করবো।
মেলার আয়োজন নিয়ে জানতে চাইলে জালাল আহমেদ বলেন, এবার মেলা খুব ভালো হয়েছে। আগামীবার এর থেকেও ভালো হবে আশা রাখতে পারেন।
এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নতুন লেখকের বই এমনটা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি জনসংযোগ ও তথ্য কেন্দ্র। ধর্মীয় উস্কানির কারণ দেখিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে দুইটি বই এবং বিধি ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে একটি স্টলের। সব মিলিয়ে খুব গোছালো ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে ইতিহাসে বিশেষত্ব পাওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০।