যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নাকি মৃত্যুদণ্ড কোনটি তুলনামূলক নৈতিক এবং মানবিক? তিলে তিলে বছরের পর বছর ধরে কোনো মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করার মত কোন ঘটনা সমর্থনযোগ্য নাকি রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের সুযোগ অব্যাহত রেখে মৃত্যুদণ্ডের মত কোন সিস্টেম চালু রাখা উচিৎ সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলে নাটক ‘দ্যা বেট’।
সোমবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের ছয় দিনব্যাপী নাট্য পার্বণের দ্বিতীয় দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের পরিবেশনায় এবং জুবায়ের টিপুর নির্দেশনায় আন্তন চেকভ এর গল্পের অনুসারে নাটক ‘দ্যা বেট’ মঞ্চায়িত হয়।
নাটকের দৃশ্য সংলাপে দেখা যায়, শরতের এক অন্ধকার রাত। বুড়ো ব্যাংকার হাঁটছিলেন তার পড়ার ঘরে আর মনে করছিলেন ঠিক পনের বছর আগের এক শরতের সন্ধ্যার কথা। সে সন্ধ্যায় পার্টি দিয়েছিলেন তিনি। পুরো পার্টিজুড়ে আধিক্য ছিল ব্যাংকার, সাংবাদিক, আইনজীবী, অভিনেত্রী এবং বুদ্ধিজীবী। হঠাৎ গুরুত্বহীন আড্ডায় যুক্ত হয় অতি-গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সেটা হলো ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কোনটা নৈতিক এবং মানবিক। এই প্রশ্নের মুখে অধিকাংশ মত দেন যাবজ্জীবনের পক্ষে। অনেকে মত প্রকাশ করেন ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদণ্ড অনেকটা সেকেলে শাস্তি এটা অনৈতিক আর ক্রিশ্চান দেশের জন্য অনুপযুক্ত।
তবে তাদের মধ্যে অনেকেরই মত এমন ছিল যে সবখানেই মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রচলন করা উচিত। আড্ডার অন্যতম সদস্য ‘ব্যাংকার’ চেঁচিয়ে বলে উঠেন যাবজ্জীবন নয় বরং মৃত্যুদণ্ড অনেক বেশি নৈতিক এবং মানবিক। ব্যাংকার মত উত্থাপন করলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নিমিষেই মরে যায় কিন্তু যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামির মৃত্যু হয় খুব ধীরে।
তুমুল তর্ক একপর্যায়ে বাজিতে রূপান্তরিত হয়। এবার বাজিই নির্ধারণ করবে আসলে মৃত্যুদণ্ড নাকি যাবজ্জীবন শাস্তি তুলনামূলক নৈতিক। ব্যাংকার তরুণ আইনজীবীকে পাঁচবছর বন্দিদশায় থাকা স্বরূপ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন দুই মিলিয়ন টাকা দেওয়ার। তবে পাঁচ বছরের চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখান করে আইনজীবী পনের বছরের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং মনে করেন মৃত্যুদণ্ডের থেকে বরং যাবজ্জীবন নৈতিক।
নিঃসঙ্গ সময়ের মধ্যে দিয়ে পনের বছরের বন্দিজীবন পার করেন তরুণ আইনজীবী। অন্যদিকে আইনজীবীর কাছে হেরে যাওয়া এবং দুই মিলিয়ন টাকা হারানোর শঙ্কায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেন ব্যাংকার । ব্যাংকার সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীর মুক্তির সময়ের পূর্বেই তাকে হত্যা করে ফেলার। তবে হত্যার উদ্দেশ্য ব্যাংকার যখন আইনজীবীর কাছে যান তখন একটি চিরকুট দেখতে পান। যেখানে তরুণ আইনজীবী পূর্বে ধরা বাজির টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং ইহজাগতিক স্বর্গকে মিথ্যা হিসেবে অভিহিত করেন। অন্যদিকে ব্যাংকার আইনজীবীর লেখা চিরকুট পড়ে হত্যা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন আর এভাবে এগিয়ে যায় নাটকের দৃশ্যপট।
জুবায়ের টিপু নির্দেশিত নাটকটিতে অভিনয় করেন ফারহান সাকিব সক্রেটিস, মাহফুজ আলম মেঘ, শতাব্দী রায় সেতু, জাহিদ হাসান, জান্নাতুননেসা, পরশ হাসান, ওমর ফারুক বান্না, ফজলে রাব্বী, অন্তর আলম মহসীন, অমিত রায়। এছাড়া শব্দ সঞ্চালনায় ছিলেন নুরুল ইসলাম সাইমুম এবং আশিক রহমান রিকি। আলোকসজ্জায় ছিলেন ফারুক মাহমুদ অভি।
প্রসঙ্গত, ‘কালের করাঘাতে জেগে উঠুক দ্রোহের লাল’ স্লোগানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে নাট্য পার্বণ ২০২০। ছয় দিনব্যাপী নাট্য পার্বণের প্রথম দিন মঞ্চায়িত হয় নাটক ‘লেট মি আউট’। আজ (২ মার্চ) জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের পরিবেশনায় নাটক ‘দ্যা বেট’, আগামীকাল মঙ্গলবার প্রাচ্যনাটের পরিবেশনায় নাটক ‘পুলসিরাত’, বুধবার আপস্টেজের পরিবেশনায় ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, বৃহস্পতিবার নাট্যদল প্রাঙ্গনেমোরের পরিবেশনায় ‘ঈর্ষা’ মঞ্চস্থ হবে।
এছাড়া আগামী শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের প্রাক্তন ও বর্তমান নাট্যকর্মীদের পুনর্মিলনীর মাধ্যমে নাট্য পার্বণ শেষ হবে। এদিন গীতিকার ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিকুজজামানকে ‘গুণীজন’ সম্মাননা এবং আহম্মেদ কবীকে নাট্যজন সম্মাননা প্রদান করা হবে।