[উর্দু কবিতার উজ্জ্বল ঐতিহ্য কয়েক শতাব্দীর। কিন্তু মির তকি মির, মির্জা গালিব, ইকবাল, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, আহমেদ ফারাজ—উর্দু ভাষার মহিমান্বিত কবিরা সবাই পুরুষ। সব ভাষাতেই অবশ্য কবিতায়, সাহিত্যে, শিল্পে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষেরই আধিপত্য ছিল, তবে অনেক ভাষাতেই প্রাচীন আমল থেকেই দু-চারজন বিখ্যাত নারী কবির সন্ধান মেলে। উর্দু ভাষায় উল্লেখযোগ্য নারী কবিদের পাওয়া যায় বিংশ শতাব্দীতে এসে।
আদা জাফরি, জেহরা নিগাহ, কিশওয়ার নাহিদ, ফাহমিদা নিয়াজ প্রমুখ নারী উর্দু ভাষার কবি হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাব্যসাফল্য অর্জন করেছেন পারভিন শাকির। তার কবিতা অনবদ্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
উর্দুভাষার এই অনন্য আধুনিক কবি পারভিন শাকির পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে। অল্প বয়স থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন। কবিতা ও গদ্য দুটোই লেখেন তিনি। পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ‘বীণা’ এই কলমি নামে আগে লিখতেন তিনি। পেশায় প্রথমে শিক্ষকতা করতেন, পরে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।
পারভিন শাকিরের প্রথম কবিতার বই ‘খুশবু’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে। বেশ সুনাম অর্জন করে এটি। এরপর ক্রমে তার অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয় : ‘সদ-বার্গ’ [জলাভূমির ফুল] (১৯৮০), ‘খুদ কালামি’ [ নিজের সাথে আলাপ] (১৯৯০), ‘ইনকার’ [ অস্বীকার] (১৯৯০) ও ‘কাফ-ই-আয়না’ [আয়নার কিনারা]। সব রচনাই প্রশংসিত হয়। তার কলামগুলো সংকলিত হয় ‘গোশা-ই-চাশম’ [চোখের কোণা] নামে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭৬ সালে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পদক ‘দ্য প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ লাভ করেন। তার কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হয় ‘মাহ-ই-তামাম’ [পূর্ণ চাঁদ] নামে।
উর্দু কবিতার ঐতিহ্যশীল রচনা প্রকরণ গজল লেখেন তিনি। তার লেখা গজল মেহদি হাসান, নুসরাত ফতেহ আলি খান প্রমুখ বিখ্যাত শিল্পী গেয়েছেন। তার গজলে ঐতিহ্যিক বিষয় ও ভঙ্গির সাথে আধুনিকতাকে মিশিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি আজাদ নজম অর্থাৎ মুক্তছন্দের কবিতা রচনা করেন। তার বিষয়বস্তুতে রোমান্টিক ভাবধারা যেমন আছে তেমনি সমকালীন বিভিন্ন বিষয়, নারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনার বয়ান, সামাজিক বিষয়-আশয় ইত্যাদি রয়েছে। কবিতায়, একজন নারী হিসেবে, তার ব্যক্তিত্ব বড় চমৎকার ফুটিয়ে তোলেন তিনি। ‘আমি’ কথাটি তিনি উর্দু ভাষায় স্ত্রী-লিঙ্গেই লেখেন, যা উর্দু কবিতার ঐতিহ্যে ছিল না। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, ইঙ্গিতময়তা, বাকসংক্ষেপ ইত্যাদির বিশিষ্ট প্রয়োগ আছে তার কবিতায়।
‘সে তো সৌরভ, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
ঝামেলা ফুলটি নিয়ে, ও কোথায় যাবে?’
এখানে অবিশ্বস্ত প্রেমিককে সুরভির সাথে আর প্রেমিকাকে ফুলের সাথে উপমিত করা হয়েছে। এরকম অজস্র প্রয়োগ আছে তার কবিতায়। প্রচলিত ইংরেজি শব্দ (যেমন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর) অনায়াসে প্রয়োগ করেন তার কবিতায়। উর্দু কবিতায় তার অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এখন অবধি তিনি উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ নারী কবি।
পারভিন উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছিলেন। ইংরেজি ভাষাতত্ত্ব ও ইংরেজি সাহিত্যে তিনি দুইটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পিএইচডি করেন। আবার পরে ব্যাংকিংয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে উত্তীর্ণ হন ও তারপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে লোকপ্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি এক ডাক্তারকে বিয়ে করেছিলেন ও তাদের একটি পুত্রসন্তান হয়। কিন্তু বিয়েটা টেকেনি। বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছিল।
১৯৯৪ সালে তার মৃত্যু ঘটে দুর্ঘটনায়। ইসলামাবাদে অফিসে যাবার পথে তার গাড়ি একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে পড়ে। এই ঘটনার পরিণতিতেই তিনি মারা যান। যেই রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটে পরে তার নামকরণ হয় পারভিন শাকির রোড। ইসলামাবাদেই তার সমাধি অবস্থিত।
গলন্ত সন্ধ্যায়
এই গলন্ত সন্ধ্যায়
সবকিছু মিলিয়ে যায়
তোমার পোশাকের ঘ্রাণ
আমার স্বপ্নের কুঁড়িগুলো
সবকিছু মিলিয়ে যায়
দৃষ্টি স্থগিত...
কিছুক্ষণের মধ্যে
দিগন্তে জাগবে একটি তারা
তোমার দিকে তাকাতে
অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে...
তোমার হৃদয় স্মরণ করবে তখন
একটি স্মৃতির প্রতিধ্বনি
একটি বিচ্ছেদের কাহিনী
একটি অসমাপ্ত মুহূর্তের কথা
না ফোটা স্বপ্নের, না বলা কথার...
আমাদের দেখা হওয়া দরকার ছিল
অন্য কোনো সময়ে
যখন স্বপ্নপূরণ হতে পারত
ভিন্ন আকাশের নিচে
ভিন্ন পৃথিবীতে
আমাদের দেখা হওয়া দরকার ছিল...
তোমার ভাবধারা
আমার প্রতি তোমার ভাবধারা যেন-বা তেমন
যেমন থাকে তূখোড় কূটনীতিকের
কোনো তরুণ সাংবাদিকের প্রতি
—প্রত্যেকটা কথায় আশার ইঙ্গিত,
সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে রাখা,
প্রতিটা শব্দ সাবধানে সুপরিমিত,
(উদ্ধৃতির তোড়ে বিষয়টাই হারিয়ে গেছে)।
তার কোনো কথাই তীরের মতন
ফিরে গিয়ে বিদ্ধ করবে না তাকে,
(যেন তাকে অনুতাপ করতে হয়)।
প্রত্যাবর্তন
চোখদুটো নমিত
কণ্ঠস্বর ক্লান্ত
কথা বলছে ভেঙে ভেঙে
চোখের পাপড়িতে জমে আছে ধুলো
রোদে পোড়া চেহারা।
আলুঝালু মাথাটি নত করে
এসেছে অনেক আগে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু।
হৃদয় প্রলুব্ধ হয়ে উঠল তার হাতটি ধরতে,
একছুটে গিয়ে তার মুখে চুমু খেতে,
আর কখনো তাকে একা চলে যেতে না দিতে।
কিন্তু আমার গভীর হতে কেউ বলে উঠল :
এই সবকিছুই ছলনা, মিথ্যা ভান,
কখনো বিশ্বাস করো না
কখনো বিশ্বাস করো না।
ভাগ্য
আমি সেই বধূ যাকে বাসররাত্রিতে
ঘোমটা উঠিয়ে কেউ বলেছিল,
‘আমার যা কিছু আছে সবই তোমার,
শুধু আমার হৃদয়টা বাদ দিও।’
বিমোক্ষণ
আমার কাঁধে তার মাথাটি রেখে আজ
সে কারো জন্য তার মনভরে কেঁদেছে।
সৌন্দর্য
পুরো একটি জীবন দরকার
সৌন্দর্য কী তা বুঝতে,
কারণ মেয়েরা নিজেদের মেলে দেয় না
ক্ষণিক দেখায়।
আরোগ্য
আর কোনো ফুল নাই
আমার কামনার জ্বলন্ত বাগানে,
এটা তো পাতা ঝরবার ঋতু।
তবু একান্ত ইচ্ছার একফোঁটা শিশির
এখনো আমার দুচোখ ভরে রয়েছে,
ঝিকমিকে তারার মতন,
যে ছড়ায় আলো
তোমার হাঁটবার অন্ধকার অলি-গলিতে;
নিঃশব্দে তোমার কানে-কানে সে
তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছে।
যে তুমি ভালোবাসো
সদ্যফোটা ফুলের সুরভি,
আর মৃদুমন্দ বাতাস,
নীরব নদীতে ধীরে প্রবহমাণ স্বচ্ছ পানি,
আর জীবনের উজ্জ্বল বর্ণমালা,
সু্স্থ হয়ে উঠবে তুমি—
রয়েছে ওরা প্রতীক্ষায়,
বসন্তের নতুন সকাল
তোমার হাসিমাখা দৃষ্টি দেখবার অপেক্ষায় আছে।
বিদায় চিহ্ন
সে গিয়েছে চলে,
কিন্তু যখন সে এখানে ছিল
তখনকার একটি তরতাজা মুহূর্ত
লটকে রয়েছে
আমার হাতের পিঠে,
আমার জীবনে,
বাঁকা চাঁদের মতন।
তোমার নাচের সাথী
নাচের সময়
যার কাঁধের উপর
রেখেছ তোমার মাথা
আমিও একদা তার আশ্রয়ে ছিলাম।
পার্থক্য কেবল এই,
সন্ধ্যা হবার আগেই আমি পরিত্যক্ত হয়েছি,
আর তুমি এই মিথ্যা নিরাপত্তায় রইবে
ভোর পর্যন্ত।
পিকনিক
আমার বন্ধুরা সৈকতের অন্য কোথাও হাসছে,
আর আমি বসে আছি এখানে, গুনে যাচ্ছি ঢেউ,
লিখছি—তার উপরে আবার লিখছি—তোমার নাম এই বালুকাবেলায়...
স্বীকারোক্তি
তোমার চিত্রটি আমার দৃষ্টিকে উদ্বেলিত করল।
দীর্ঘ রজনী পার হলো, আমি
আবিষ্ট হয়ে পড়লাম তোমার প্রতিকৃতিতে।
তারপর সেই মুহূর্ত এলো, যখন আমি
ধীরে ধীরে রাখলাম আমার ঠোঁট
তোমার ছবিতে...
বৃষ্টি
বৃষ্টিতে কেন তুমি একা একা শিহরিত হচ্ছো,
ও মেয়ে?
আলিঙ্গন করো তাকে যার উষ্ণতা জাগানো প্রেমে
তোমার শরীর ও মন হবে সিক্ত।
আর কোনো বৃষ্টি নাই যেটি
প্রেমের বৃষ্টির চেয়ে বড়,
যার পর বিচ্ছেদের উজ্জ্বল রঙধনু
বর্ণের রহস্য নিয়ে ঝলমল করে উঠবে।
আমার শরীরের ভাবসাব
আমি সেই দিনের জন্য আকাঙ্ক্ষা করি যেদিন তুমি
আমার প্রতি আবিষ্ট হবে,
যখন দুনিয়া ভুলে গিয়ে তুমি
গভীর আবেগে আমার অভাব অনুভব করবে,
আর আমার স্বল্পভাষিতা নিয়ে অভিযোগ করবে না।
তখন হয়তো আমি ভুলে যাব অন্য সব
লেনদেন আর দায়দায়িত্ব
যেন আমি তোমার বাহুতে আমার জগতকে অনুভব করতে পারি,
আমার শরীরের ভাবকেই আমাকে পরিচালনা করতে দিতে পারি।
সেই মুহূর্তে সব সীমাপরিধির বাইরে
যখন আমরা নেকাব ও পাগড়ির প্রথা প্রত্যাখ্যান করি,
আসো আমরা আমাদের ভাগ্য পরীক্ষা করি,
আর নিষিদ্ধ ফলের স্বাদ চুরি করি।
চাঁদ
আমাদের সকলে যাত্রী,
একই ভাগ্য নিয়ে আছি আমরা সবাই।
তবু আমি একা আছি এই পৃথিবীতে
আর সে রয়েছে একা ওই আসমানে।
অসারতা
তার জগৎ বড়ই সরল, বড় বেশি
আলাদা আমার থেকে
খুবই স্পষ্ট তার স্বপ্ন
আর ইচ্ছাগুলো।
কথা বলে সে খুব কম।
আজ ভোরে লিখেছে সে,
“আমি দেখলাম
চমৎকার কিছু ফুল আর
তোমার কথা মনে পড়ল।”
হাহ! আমি জানি
আমার বুড়িয়ে যাওয়া মুখ
কোনো অর্কিড পুষ্প নয়...
কিন্তু আমি কিভাবে এই ইচ্ছা করি,
যে আমি বিশ্বাস করব
যা কিছুই বলুক সে,
অন্তত ক্ষণিকের জন্য।
অভিযোগ
বরাবর অভিযোগ করত সে,
‘আমাদের চারপাশে এত-এত মানুষ
আমাদের নিজেদের জন্য সময়ই নাই।
মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে,
বছরের প্রথম তুষারপাতে,
পূর্ণিমা রাতে,
সন্ধ্যার সৌরভে,
ভোরের মিষ্টি ঠান্ডায়,
আমি তোমার সাথে একা থাকতে চাই,
কিন্তু মনে আমার বেদনা কেবল।’
আজ আমাদের দুজনার মাঝে আর কেউ নাই,
হাত একটু নাড়ালেই সে আমাকে ছুঁতে পারে।
কিন্তু কত-কত মৌসুম এলো আর গেল,
কিন্তু অমন কথা আর বলে না সে।
তার কাছে যাওয়া আমার জন্য কঠিন কিছু না,
কিন্তু সত্যি ব্যাপার হলো,
তার কণ্ঠস্বরে ভাবাবেগ গেছে কমে
কথার ধরনটাও আগের মতন নাই আর;
যদিও সে একই গান গায়,
কিন্তু তার হৃদয় শীতল হয়ে গেছে।
আমরা সবাই ড. ফস্টাস
কোনো না কোনোভাবে আমরা সবাই ড. ফস্টাস,
কেউ তাদের আত্মাকে বেচে
আবেগ-অনুভূতির জন্য,
আবার পরিস্থিতি যখন তাদের ধোঁকা দেয়
কেউ-বা তাদের চোখ বন্ধক রাখে
স্বপ্ন বেচার জন্য,
কেউ-বা পুরো মনটাই বিনিময় করে।
আসলে নির্ধারণ করা দরকার
যুগের মুদ্রাটা কী।
কিছু বিশ্লেষণ হতে জানা যায়
জীবনের বাণিজ্যিক এলাকায়
আজকের ক্রেতারা
সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে
আত্মসম্মানের জন্য।
দ্বিপদীগুচ্ছ
১
সে তো সৌরভ, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
ঝামেলা ফুলটি নিয়ে, ও কোথায় যাবে?
২
তারা জেদ ধরেছে, দিনের আলোয় জোনাকি পোকা ধরে দিতে হবে,
একালের ছেলেমেয়েরা অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গেছে।
৩
ঘুম থেকে জেগে উঠলাম আমি, এতে কি তোমার কিছু আসে-যায়?
হাওয়া আমার দরজা ধাক্কাচ্ছে, এতে কি তোমার কিছু আসে-যায়?
৪
আমি মরে গেলে লোকে কখনো কি ভুলে যাবে?
আমার শব্দগুলো আমার অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেবে।
৫
বাতাসের মতো তার যাযাবর জীবনযাপন
ঝঞ্ঝার মতো সে চলে যাবে উড়িয়ে নিয়ে।
৬
সত্যি কথা বলব আমি, আর যাব হেরে;
মিথ্যা বলে সে নির্বাক করবে আমারে।
৭
আমার কাঙ্ক্ষিত ছিল শুধু একজনই, যখন তাকে পেলাম না
প্রার্থনা হতে আমার হাত নেমে গেল, এমনকি কী যে চাইছিলাম তাও ভুলে গেলাম।
৮
হাঁটার কোনো শক্তি নাই, থামাও অসম্ভব
প্রেমের সফর আমাকে নির্জীব করে দিয়েছে।
৯
তরতাজা প্রেমের নেশা আমার শরীরে ও মনে,
আবার ফুলের মৌসুম এসেছে আমার বাগানে।
১০
আরো কিছুক্ষণ তাকে দেখতাম,
হায়, চোখের পানিতে সেই সুখ সইল না।
১১
সে এখন অন্য কারো তাতে কী?
আমার সাথে তো তার শুরুই হয় নাই।
১২
যেখানে তোমার খুশি বাতাসের মতো ঘুরে বেড়াও,
আমার কল্পনার ডানা কাটা গেলে তোমার কী আসে যায়?
১৩
মেয়েদের দুঃখ আজব, আরো আজব তাদের সুখ;
হাসতে থাকে তারা অথচ কাজল ভিজে যায়।
১৪
প্রিয় হে, তোমার সাথে একশর্তে প্রেমের খেলা খেলব,
যদি আমি জিতি আমি তোমাকে পাব, যদি হেরে যাই তবে আমি তোমার হব।
১৫
রাতে আমার হৃদয়ে এমন ব্যথা জাগল,
ভোর পর্যন্ত আমি অস্থির হয়ে থাকলাম।
১৬
মিলন—পুনর্মিলনের প্রতিশ্রুতি—বিচ্ছেদ;
হঠাৎই কত কিছু ঘটে গেল!
১৭
আমি জানি বাতাসের দিকে তুমি চোখ রাখো,
কিন্তু এ কেমন কথা যে একটু দেরিও করলে না!
১৮
আমার মতোই চাঁদ গলে যাচ্ছিল
ঘুমের ঘোরে চলছিল সারারাতভর।
১৯
অনেককাল ধরে আমার আমার দুঃখ একা,
খোদা, আমার অশ্রু ঝরাচ্ছে কে?
২০
তার সব ইচ্ছা আমি পূরণ করতে চাই, শুনতে চাই তার সব কথা;
আমি তাকে শিশুর মতো হাসতে দেখতে চাই।
২১
তোমার কথা ভাবলে আমি আলো দেখতে পাই,
মনে হয় স্মৃতিগুলো চাঁদে পরিণত হয়েছে।
কু-বা-কু ফেইল গেয়ি
সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের প্রেমকাহিনী,
ফুলের সুরভি ছড়ানোর মতো সে আমাকে ভালোবেসেছিল।
কী করে বলি যে সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছে,
সত্য হলেও সে তো বড়ই লজ্জার কথা।
যখনই সে গেছে কোথাও, ফিরেছে আমার কাছে ফের,
এটুকু ভালোই মনে সান্ত্বনা জাগায়।
তোমার হৃদয়ের মতো তোমার সাথীও ঋদ্ধ থাকুক,
বিরহের রাত কখনো তোমাকে ধ্বংস না করুক।
যখনই সে আমার তপ্ত কপালে তার হাত রাখত,
আরোগ্যের অনুভূতি জাগত আমার আত্মার গভীরে।