আধুনিক পোলিশ কবিতার কথা বলতেই যাদের নাম সর্বাগ্রে মনে পড়ে আমাদের, তাঁদের মধ্যে আছেন চেশোয়াভ মিউয়াশ, ভিস্লাভা শিম্বর্স্কা, তাদেউশ রোজেবিচ, জ্বিগনিয়েভ হেরবার্ট প্রমুখ। এঁদের মধ্যে দুজন তো নোবেল পুরস্কারই পেয়েছেন, চেশোয়াভ মিউয়াশ (১৯৮০) ও বিস্লাভা শিম্বর্স্কা (১৯৯৬); বাকি দুজনও নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন একাধিকবার। এঁদের হাতে যুদ্ধোত্তর পোলিশ কবিতার যে-শক্তিশালী ধারাটির সূচনা হয়েছিল তার অগ্রযাত্রা এখনো সমান অব্যাহত। এঁদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পরবর্তী প্রজন্মের অনেক মেধাবী কবিই বিশ্বকবিতার অঙ্গনে সদর্পে বিচরণ করছেন, যার মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত এবং নন্দিত অবশ্যই আদাম জাগাইয়েভস্কি (জন্ম. ১৯৪৫)।
দর্শনশাস্ত্রের ছাত্র আদাম পোল্যান্ডে শিক্ষাজীবন শেষ করে বেশ কিছুদিন অধ্যাপনা করেন এবং এক পর্যায়ে বার্লিন হয়ে ফ্রান্সে থিতু হন। সেখানে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, সাহিত্যের শিক্ষকতা করেন। ২০০২ সালে তিনি পোল্যান্ড ফিরে আসেন এবং বর্তমানে সেখানেই, ক্রাকাউ শহরে বসবাস করছেন। তাঁর কবিতা পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং তিনি Neustadt International Prize for Literature (2004), Heinrich Mann Prize (2015), Princess of Asturias Award (2017)-সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সাহিত্যপুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রধান ও শক্তিমান কবি হিসাবে স্বীকৃত জাগাইয়েভস্কি, তাঁর কবিতায় এক নতুনতর, ইঙ্গিতধর্মী ভাষাভঙ্গিতে নৈঃশব্দ্য, নির্বাসন, নিঃসঙ্গতা, স্বপ্ন, মৃত্যু, ইতিহাস, অসীমতা ও আত্মচেতনার মতো সূক্ষ্ম, সংবেদনাময় বিষয়ভাবনাকে উত্থাপন করেন অবলীলায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: Tremor (1985), Mysticism for Beginners (1997), World Without End: New and Selected Poems (2002)। এছাড়া Two Cities: On Exile, History and the Imagination (1995) নামে তাঁর একটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং Another Beauty (2000) শিরোনামে একটি আত্মজৈবনিক রচনাও রয়েছে।
[কৃতজ্ঞতা : মাসরুর আরেফিন]
উজ্জ্বল মুহূর্তকে মিলিয়ে যেতে দিয়ো না
উজ্জ্বল মুহূর্তকে মিলিয়ে যেতে দিয়ো না
আলোকিত চিন্তাকে স্থিরতায় স্থায়ী হতে দাও
পৃষ্ঠা প্রায় পরিপূর্ণ এবং আলোর শিখা কম্পমান
আমরা আমাদের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হইনি এখনো
আক্কেল দাঁতের মতো ধীরে বাড়ে জ্ঞান
মানুষের উচ্চতার পরিমাপ হয় আজও
কোনো এক শাদা দরজার দাগে
দূরে ট্রাম্পেটের আনন্দধ্বনি
ও গানের বাণী একটি বেড়ালের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে
যা অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তা কোনো শূন্যতায় হারায় না
আগুনে কয়লা ঠেলে যায় এখনো এক ইঞ্জিন শ্রমিক
উজ্জ্বল মুহূর্তকে মিলিয়ে যেতে দিয়ো না
কোনো এক শুকনো কঠিন পদার্থের গায়ে
সত্যকে খোদাই করে দিতে হবে তোমাকে।
ইংরেজি অনুবাদ: Renata Gorczynski
বিক্ষত পৃথিবীর প্রশংসা করতে চেষ্টা করো
বিক্ষত পৃথিবীর প্রশংসা করতে চেষ্টা করো।
জুনের দীর্ঘ দিনগুলোর কথা মনে রেখো,
বুনো স্ট্রবেরিদের,গোলাপি মদের ফোঁটা আর শিশিরকেও।
পরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা কাঁটাগুল্মদের
যারা নির্বাসনের পরিত্যক্ত ঘরবাড়িকেও ছাপিয়ে যায়।
তোমাকে অবশ্যই বিক্ষত পৃথিবীর প্রশংসা করতে হবে।
তুমি কেতাদুরস্ত প্রমোদনৌকো ও জাহাজদের দেখেছো;
তাদের একটির সামনে রয়েছে দীর্ঘ সফর,
আর বাকিদের জন্য অপেক্ষমাণ নোনা বিস্মরণ।
তুমি শরণার্থীদের অনির্দিষ্ট পদযাত্রা দেখেছো,
তুমি শুনেছো জল্লাদের আনন্দগান।
তোমার প্রশংসা করা উচিত বিক্ষত পৃথিবীর।
আমরা যে-শাদা ঘরটায় একসঙ্গে ছিলাম কিছুটা সময়,
আর পর্দারা তুমুল কেঁপেছিল,তার কথা মনে রেখো।
মনে মনে ফিরে যেও সেই উৎসবে,
যেখানে উপচে পড়েছিল গানের ফোয়ারা।
তুমি শরতে কাঠবাদাম কুড়িয়েছিলে পার্কের ঘাসে
এবং পাতারা তখন পৃথিবীর ক্ষতের ওপর ঘুরপাক খেয়েছিল।
বিক্ষত পৃথিবীর প্রশংসা করো
এবং সারসের খোয়া যাওয়া ধূসর পালকের,
এবং সেই নরম আলোর, মিলিয়ে যেতে যেতেও যা ফিরে আসে পুনর্বার।
ইংরেজি অনুবাদ: Clare Cavanagh