চৈত্র সংক্রান্তি ১৪২৬
অসুখের চিহ্ন নেই খোলা চোখে, নির্মেঘ আকাশে, ঝকঝকে রোদে
এমন সমূহ বিপদের কথা শোনা ছিল এযুগের যারা বেঁচে আছে
সেবার মধ্যবসন্তে করোনা এলো বাংলাদেশে
এলাকার কুকুরগুলো ক্ষুধার্ত, গৃহবন্দী মজুরের মতো; মধ্যরাতে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে
যেন, জিজ্ঞেস করে পৃথিবীর মানুষগুলো গেল কই
বন্দর, ধুকে চলা মফস্বলসহ শামসুর রাহমানের শহর লকডাউন হয়ে গেল
রাজধানী ছেড়ে যে যার মতো ছুটে পালিয়ে গেল রুবানার শ্রমিকরা
রাষ্ট্রের কল্যাণ, কল্যাণ মাধুকরী, সেব্রিনা ফ্লোরার ব্রিফিং, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া অশুভ সংখ্যা;
সেবার আমরা চৌদ্দশ সাঁতাশে চৈত্র সংক্রান্তির আগের ঘটনা ভাবতে চেয়েছিলাম।
নারী মাকড়সা
আমাকে ফুঁসলে যে এই পাহাড়ি-জংলা-শহরে নিয়ে এসেছে
সে আসলে এক নারী মাকড়সা। পরে তার ছড়ানো ছিটানো গোপন ও প্রকাশ্য
পাতা জাল দেখে বুঝেছি।
যদিও ততক্ষণে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি কোলাহল থেকে
সত্যি বলতে কী অনেক কথাও বলে ফেলেছি।
সন্ধ্যা
জমিয়ে রেখেছি পরে দেখব বলে,
পরে দেখা হবে। আজ এই বিকেলের সোনালি মেঘের রঙ
তোমার কাছে পৌঁছে চলে যাব।
মনে হয় মৃত্যুও কাম্য কিছু নয়, প্রাণের উত্তাপ ছেড়ে
চলে যাবে কেউ। আশাহীন অভিমানে
এমনকি হেমন্তের শিশিরও কিছু বলবে না ডেকে।
দীর্ঘশ্বাস মথিত এই উদ্যানে বিকেলে কে হেঁটে যায়
ঔষধি পদক্ষেপে বিষণ্ন প্রবীণ গাছের হেলে পড়া ছায়ায়!
ঘ্রাণে ঘ্রাণে পুষ্প হাসে। রূপের পাশে দুখি চন্দ্র।
আলগোছে মনের শুকনো নালায় নালায়
শীষ কেটে উড়ে উড়ে যায়। সেও কি তোমাকে চেনে!
সে কি জানাবে কিছু তবু অজানা সংযোজনে? সন্ধ্যায় সন্ধ্যায়
বিপণ্ন আলো হবে আরো একাকিত্ব বিধুর নিঃশ্বাসের সমান!
এক বর্ষা সন্ধ্যায় আজিজ মার্কেটের ঘটনা
বারান্দা ছেড়ে ছোট্ট নর্দমা সৌখিন এক লাফে পার হয়ে—
শেষ-মেশ একটি রিকশা পেয়ে গেল মেয়েটি;
আঁধার বৃষ্টির সন্ধ্যা মাঝ পথে ক’ ফোঁটা বৃষ্টি ধন্য হলো
তাকে ছুঁতে পেরে!
... পিছে ভূত-চোখে চেয়ে আছে মুগ্ধ আজিজ মার্কেট
দোকানের বইগুলো সুখে আছে আজ,
জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে র্যাকে।
ঝড়-বর্ষার রাত, শাহবাগে বন্ধুরা কেউ নেই।
মেসে ফিরে যেতে আজ ভয়ঙ্কর ম্যানহোল,
গোড়ালি ডোবা নর্দমা-চুপচুপে শার্ট-পাজামা—
প্রথমেই সিগ্রেটসহ চা,
মায়া হবে নিঃসঙ্গ আজিজ মার্কেট
একটি রিকশা শেষ-মেশ পেয়ে গেল মেয়েটি
যে এই অপূর্ব রঙিন বর্ষা সন্ধ্যায়
তাকে লেক সার্কাস নিয়ে যেতে রাজি।
বন্ধু
আমি ভেবেছিলাম সে অন্যজন
যার সাথে দেখা হবে বহুদিন পর লুম্বিনী গ্রামে
আমাদের বাড়ির পাশে পুকুরের পাড়ে
শিরিষ গাছের তলায় বসে কথা বলব
দুপুরের পর, রুইয়ের ঝোল দিয়ে ভাত খাব
মায়ের রান্নার প্রশংসা করবে তুমি
বলবে তোমার মায়ের কথা
বাল্যকালের কথায় স্মৃতিকাতর তোমাকে
কিছু বলতে না পেরে হাত ধরে থাকব অনেকক্ষণ