বিজ্ঞপ্তির ২ বছরেও শেষ হয়নি শেকৃবির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সিফাতুল্লাহ আমিন, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-11-29 18:00:34

রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) বিভিন্ন বিভাগে স্থায়ী শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রেক্ষিতে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও শিক্ষক নিয়োগের এই প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।

নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় ভুক্তভোগী হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নিয়োগপ্রার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের জন্য প্রকাশিত ৮২ জন শিক্ষক নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক হিসেবে ২ জন, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ৩ জন, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৩৩ জন এবং প্রভাষক হিসেবে ৪৪ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা উল্লিখিত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ এর প্রকাশিত নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পূর্বেই ২৮ মার্চ ২০২৩ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং ইনস্টিটিউটে স্থায়ী শূন্য পদের জন্য ৩৪ জনের আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। মূলত শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতায় ২ বছর অতিক্রান্ত হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছি না। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে নিয়োগ কিছু দিনের মধ্যেই হতে পারে। আবার প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘয়িতও হয়ে যেতে পারে যেহেতু সামনে নির্বাচন রয়েছে । তবে আমরা সর্বোচ্চ যোগাযোগের চেষ্টা করতেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রভাষক প্রার্থী বলেন, প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে দিন যাপন করছি। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রয়েছি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার। ২ বছর দীর্ঘ সময়, এতটা সময় পেরিয়ে গেলও এখনো প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবশ্যই দুশ্চিন্তার এবং উদ্বেগজনক। তাছাড়া আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে অন্য কোনো চাকরির প্রস্তুতি নেয়নি। কেননা আমাদের রেজাল্ট ভালো এবং নিজেদের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাসী হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছি।এখন প্রতিনিয়ত এভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় সন্দিহান অবস্থায় রয়েছি কি হবে। তাছাড়া অনেকের পারিবারিক অবস্থা খুব ভালো না, দ্রুত আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। সবকিছু মিলিয়ে আমরা এতটুকুই প্রত্যাশা করছি দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক অন্যথায় জানানো হোক আর কত সময় আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

আরেক নিয়োগপ্রার্থী বলেন, সিজিপিএ এবং যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়ে আমি শুরু থেকেই প্রত্যাশিত ছিলাম। আমি নিজেকে শুধু এই পেশার জন্য যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রচণ্ড অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছি। আসলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে না পারলে আমার আর কোনো উপায় থাকবে না। এলোমেলো কিছু হলে অনেকে আত্মাহত্যাও করে ফেলতে পারে। আমরা শুধু এতটুকুই চাই যে নিয়োগ প্রক্রিয়া একটু দ্রুত হোক। অপেক্ষার প্রহর প্রতিনয়ত আমাদের এবং আমাদের পরিবারের জন্য দীর্ঘতর হচ্ছে।

এএসভিএম অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তিতে মোট শিক্ষক নিয়োগের একটা বড় অংশ এএসভিএম অনুষদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের। আসলে আমাদের অনুষদের বেশ কিছু ডিপার্টমেন্ট একজন কিংবা দুইজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এভাবে ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করা শিক্ষকদের জন্য যেমন অতিরিক্ত চাপ এবং কষ্টের কাজ। তেমনি অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও ভুক্তভোগী হয়ে যায়। অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাদের দুই লেভেল কিংবা তিন লেভেল পর্যন্ত কোর্স রয়েছে। তাহলে একজন শিক্ষক এতগুলো লেভেলের ক্লাস কিভাবে নিবেন। আবার পরীক্ষা নিবেন নাকি পরীক্ষার খাতা দেখবেন। আসলে এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য জটিল অবস্থা তৈরি হয়। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই সমস্যাগুলো থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো বলেই প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক অলক কুমার পাল বলেন, শিক্ষক নিয়োগের বিষয় নিয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয়েছে । কিন্তু সরকারের অন্যান্য দফতরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঠিক কবে নিয়োগ হবে বলতে পারবো না তবে তিন দিন আগেও এবিষয় নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। প্রত্যেক সপ্তাহে আমাদের প্রতিনিধি যোগাযোগ করছে এবং প্রক্রিয়া দ্রুত করার চেষ্টা করছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রার্থীদের একটু ধৈর্য রাখতে হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যুক্ত হতে গেলেও কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর