কুবি শিক্ষকের পিএইচডি নথিভুক্তকরণ নিয়ে বিতর্ক, প্রশাসনের দ্বিমুখী বক্তব্য

, ক্যাম্পাস

কুবি করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-12-30 16:34:17

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত  প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর পিএইচডি (ডক্টর অফ ফিলোসফি) ডিগ্রি নথিভুক্তকরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।

নথিভুক্তকরণ কমিটি সুপারিশ না করলেও তার পিএইচডি ডিগ্রি নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানান নথিভুক্তকরণ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির। তবে বিপরীত কথা বলছেন উপাচার্য। সব নিয়ম মেনেই হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো: আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস স্মারকে কাজী ওমর সিদ্দিকীর ডিগ্রির সনদ নথিভুক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে মালয়েশিয়ার পুত্রা বিজনেস স্কুলে (পিবিএস) ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন তিনি। এসময় করোনা মহামারীর কারণে ভিসা জটিলতায় অনলাইনে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট আবেদন করেন কাজী ওমর সিদ্দিকী। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের নভেম্বর মাসে তৎকালীন রেজিস্ট্রার আবু তাহের স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় প্রশাসন।

একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া ৭৬তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫ তম আলোচ্য সূচিতে ভিসা জটিলতার কারণে যে সকল শিক্ষককে অনলাইনে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয় তাদের শিক্ষা ছুটি নীতিমালা অনুযায়ী ক্লাস শুরুর দিন থেকে শিক্ষা ছুটি নীতিমালা অনুযায়ী ছুটি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কাজী ওমর সিদ্দিকী শিক্ষা ছুটি নেননি। তিনি ২০২২ সালে পিএইচডির কাজে ২২ দিন, ২০২৩ সালে ২৮ দিন ও ২১ দিন মালয়েশিয়া অবস্থান করেন।

কাজী ওমর সিদ্দিকী এ ব্যাপারে জানান, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি আমার পিএইচডি ডিগ্রি চলাকালীন শিক্ষা কার্যক্রম কোন পর্যায়ে আছে এবং তা শেষ করার সময়সীমা সম্পর্কে সুপারভাইজার থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর দিয়েছি। তখন প্রশাসন শিক্ষা ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডির কাজে ছুটি নিয়ে মালয়েশিয়াতে গিয়েছি। তখনও আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি।'

এরপর ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৮৫ তম সিন্ডিকেট সভায় বৈশ্বিক করোনাকালীন সময়ে যে শিক্ষকদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঐ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠির মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে সংগৃহীত তথ্যসহ বিষয়টি পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

যে শিক্ষকরা করোনাকালীন উচ্চশিক্ষার্থে অনলাইনে ক্লাস চালানোর অনুমতি পেয়েছেন তাদেরকে কমপক্ষে দুই বছর সরাসরি উচ্চ শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণের শর্ত দেওয়া হয়। নাহয় তাদের অর্জিত এই পিএইচডি ডিগ্রী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে শর্ত দেওয়া হয় পরের বছরের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া সিন্ডিকেটের ৮৬ তম সভায়। এরই প্রেক্ষিতে কাজী ওমর সিদ্দিকীসহ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের আরও দুই শিক্ষক একত্রে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে থাকায় সরাসরি দুই বছর অংশগ্রহণের শর্ত পুন:বিবেচনার জন্য আবেদন করেন। 

পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল ৮৭ তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শুধুমাত্র করোনা মহামারীর সময়ে অনলাইনে পিএইচডি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত শিক্ষকেরদের মধ্যে যাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হতে দুই বছরের কম সময় লাগবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম কোন পর্যায়ে আছে এবং তা শেষ করার সময়সীমা সম্পর্কে সুপারভাইজার থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তবেই এটা নিয়মিত ডিগ্রি হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

জানা যায়, সিন্ডিকেটের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের আলোকে  কাজী ওমর সিদ্দিকী তার সুপারভাইজার থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দেন। এতে, তার সুপারভাইজার তাকে বাংলাদেশে অবস্থান করে তার কাজ সম্পাদনের অনুমতি দেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর তিনি তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৫ নভেম্বর তিনি তার অর্জিত ডিগ্রির সনদ নথিভুক্তকরণের জন্য রেজিস্ট্রার দপ্তরে জমা দিয়েছেন যা বিভাগীয় প্রধান এবং ডিন কর্তৃক সুপারিশকৃত। এই সনদ পরবর্তীতে তার সুপারভাইজার ও পুত্রা বিজনেস স্কুল থেকে ভেরিফাই হয়ে আসে। 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, 'উপাচার্য স্যার আমাকে প্রক্টর বানানোর পর যারা আগের মত অনিয়ম, টেন্ডারবাজি করতে পারছে না তারাই আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমার পিএইচডি ডিগ্রি বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে; যা এক প্রকার ষড়যন্ত্র।'

ডিগ্রি নথিভুক্তকরণ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ডিগ্রি নথিভুক্তকরণের জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। ওনাকে যখন অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে তখন শিক্ষা ছুটি নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা ছুটি নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি নেননি। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট যখন দুই বছর শিক্ষা ছুটি নেওয়ার বিষয় আসে তখনকার বাস্তবতা হচ্ছে ওনার হাতে এত সময় ছিল না। তখন ওনার সম্ভবত পাঁচ মাস ছিল। তখন ওনার সুপারভাইজার থেকে প্রত্যয়নপত্র আনার কথা আসে। তিনি সেটা নিয়ে এসেছেন কিন্তু ওনার পিএইচডির জন্য পাঁচ মাসেও তিনি শিক্ষা ছুটি নেননি। সর্বশেষ তিনি একদিনের জন্য শিক্ষা ছুটি না নেওয়ায় নথিভুক্তকরণ কমিটি এই বিষয়ে সুপারিশ করেননি।'

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘এটা পুরোপুরি আইন মেনেই করা হয়েছে। ৮৬ তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল কমপক্ষে দুই বছর শিক্ষা ছুটি নিতে হবে। তখন বেশ কয়েকজন শিক্ষক ৮৬ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আগে পিএইচডির কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন করে ফেলেছে। তখন তারা কি করবে? তখন ৮৭ তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় সুপারভাইজারের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র আনতে হবে পিএইচডির প্রোগ্রেসের বিষয়ে। ওমর (কাজী ওমর সিদ্দিকী) সেটা করেছে এবং সেখানে তার কাজ শেষ হওয়ার কথা এবং দেশে অবস্থানের ব্যাপারে তিনি কোন আপত্তি জানাননি। ফলে সবকিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে।'

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর