১৯ বছরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
আঠারো পেরিয়ে উনিশ বছরে পদার্পণ করেছে লালমাই পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে, বাংলাদেশের প্রাচীনতম শিক্ষাভূমি কুমিল্লার ময়নামতির শালবন বৌদ্ধবিহারের খুব কাছ এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
ভৌগলিকভাবেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এটি। দেশের প্রধান দুই মহানগরী ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান হওয়ায় কেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধা বেশ ভালো। এমনিতেই লালমাই অঞ্চল বেশ নিরিবিলি, বড় শহরের জঞ্জাল বেশ দূরে হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির জায়গা এখানকার শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্নে প্রশাসনিক ভবনের সাথে মাত্র দুইটি একাডেমিক ভবন ছিল৷ ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কুবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ৮ মে জাতীয় সংসদে আইন পাশ হয় এবং ২৮ মে সেই আইন কার্যকর হয়।
২০০৭ সালের ২৫ মে মোট চার অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রথম এই ব্যাচে ১৫ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন ২৬৫ জন।
বর্তমানে ৫০ একরের দৃশ্যমান এই ক্যাম্পাসে চারটি একাডেমিক ভবনে ছয়টি অনুষদের কার্যক্রম চলছে। অনুষদগুলো হলো- কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, প্রকৌশল অনুষদ এবং আইন অনুষদ। অনুষদগুলোর অধীনের বিভাগগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, লোকপ্রশাসন, প্রত্নতত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, মার্কেটিং, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, আইন, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ফার্মেসি, এবং পরিসংখ্যান বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো সম্পূর্ণ আবাসিক নয়। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি হল আছে এখানে। ছেলেদের তিনটি হল হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল। মেয়েদের দুইটি হল হলো- শেখ হাসিনা হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল। এছাড়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের থাকার জন্য আছে চারটি ডরমিটরি। চালু হয়েছে নতুন গেস্ট হাউজ৷ শ্রেণিকক্ষ, আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসজুড়ে আছে দ্রুতগতির ওয়াইফাই সুবিধা।
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রমের উন্নয়নে দরকার ভালো একটি লাইব্রেরি। বর্তমান ক্যাম্পাসে জায়গার স্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যা পরেও উন্নতমানের পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনের পাঁচ তলায় লাইব্রেরি পাশে নতুন ভাবে চালু হয়েছে আলাদা রিডিং রুম।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্টদের অনেকদিনের দাবি ছিল আরো বড় পরিসরের একটা ক্যাম্পাসের৷ সেই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের জন্য প্রায় এক হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করে। বর্তমানে কার্যক্রম চলা ৫০ একরের ক্যাম্পাসের দুই থেকে তিন কি.মি. অদূরেই প্রায় ১৯৪.১৯ একরের নতুন ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চলমান আছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯তম বছরে পদার্পণের ভিশন নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'প্রতিবছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে থাকি। এবছর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মেরিট বৃদ্ধির জন্য ভাইস চ্যান্সেলর স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড চালু করেছি। উন্নত মানের শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গবেষণা করার সময় ভাবতে হবে তা যেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হল গবেষণা।
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চমানের জার্নালে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করলে নতুন জ্ঞান তৈরি হবে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে সুনাম সৃষ্টি হচ্ছে, তা যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য কোয়ালিটি এডুকেশন এবং কোয়ালিটি রিসার্চের গুণগত মানের প্রতি নজর দিচ্ছি। আমাদের যে ভিশন তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।'