শেকৃবিতে অপরূপ শীতের সকাল

, ক্যাম্পাস

সিফাতুল্লাহ আমিন, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-01 14:31:49

ষড়ঋতুর সৌন্দর্যে ভরা বাংলাদেশের অন্যতম ঋতু শীতকাল। ইতোমধ্যে সারা দেশে শীত তার আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ঢাকায় কম শীত পড়লেও রাজধানীর ছোট্ট গ্রাম নামে খ্যাত গাছপালায় আচ্ছাদিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের আমেজ বিরাজ হয়েছে।

এখানে শীতের সকাল কিছুটা ভিন্ন রকমের। সকাল হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণা খামার মাঠে ফসলের যত্ন নিতে ছুটে চলেন গবেষণারত শিক্ষার্থীরা।

গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরা টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরব ক্যাম্পাসে সবাইকে গ্রামীণ জীবনযাত্রা মনে করিয়ে দেয়। আলস্যের চাদর ও কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পূর্ব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে যখন ব্যস্ত, আলতো সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করে, তখন অনেকেই চলে আসেন ব্যবহারিক ক্লাস করতে।

গবেষণা মাঠে ফসলের যত্ন নিতে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন, এই আধুনিক প্রতিযোগিতার যুগে, শহরের যান্ত্রিক পরিবেশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ আলাদা। বিভিন্ন রকম ফুল-ফল গাছের সমারোহ যেকোনো মানুষকে মুগ্ধ করে। গবেষণা মাঠে ডুকলেই খালি পায়ে হাঁটা ও শিশির পায়ে লাগা অনুভূতিটা ভীষণ সুন্দর। গ্রামের মেঠোপথের কথা মনে পড়ে যায়।

শীতের সকালে ব্যবহারিক ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীরা।

শীতের সকালে ব্যবহারিক ক্লাস করতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয় তবে যখন ক্লাসে আসি তখন এই মুক্ত, সুন্দর, নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে পারি। খুব ভালো লাগে। গ্রামে মায়ের হাতের শীতকালীন পিঠাপুলি মিস করি।

অনেকেই ফজরের নামাজ পড়ে ব্যায়াম করার জন্য ক্যাম্পাসে শরীরচর্চা করেন। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ দৌড়ে পরিভ্রমণ করেন। কাক ডাকা শীতের ভোরে ক্যাম্পাস নির্জন না থেকে সকলের কর্ম চঞ্চলতায় মুখরিত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে খামার বিভাগের কর্মচারীরা নানা ধরনের চারা লাগানো ও তাদের যত্ন নেওয়ায় ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ জমি প্রস্তুত করেন, কেউবা ফসলের আগাছা পরিষ্কার করেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য সিজনের চেয়ে শীতকালে ফলন ভালো হয়। টাটকা সব সবজি উৎপাদন হচ্ছে এখানে। এসব সবজি স্বল্পমূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা কিনে নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং চত্ত্বর ঘুরে দেখা যায়, সবজায়গা ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে গেছে। আবাসিক হলগুলোর আঙিনার সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে ফুল গাছের যত্ন নেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন শোভাবর্ধনকারী গাছ লাগানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতের সকাল যেন অনেকটা গ্রামবাংলার চিরায়ত সেই শীতের সকালের অনেকটা প্রতিচ্ছবি।

কৌলিত্বত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মো. আব্দুল হেলাল কাফি গবেষণা করছেন বেগুনের ৫৮টি জাতের জীনগত বৈচিত্র্য, জৈব রাসায়নিক উপাদান পর্যবেক্ষণ, উচ্চ ফলনশীল এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা সম্পন্ন হাইব্রিড ভ্যারাইটি তৈরি করা নিয়ে।

তিনি বলেন, প্রতিটি গবেষকের কাছে গবেষণার মাঠ, গবেষণাগার এগুলো আবেগের জায়গা। শীতের সকাল হোক কিংবা কাঠফাটা রোদ অথবা বৃষ্টিভেজা দিন, সকালে উঠেই প্রথম কাজ থাকে মাঠ পরিদর্শন করা। গবেষণা মাঠের প্রতিটি গাছকে নিজের সন্তানের মতই মনে হয়। তাদের ভালো রাখতে প্রতিনিয়ত আমাদের কর্মজজ্ঞ লেগেই থাকে। আমাদের সম্মানিত শিক্ষবৃন্দ প্রতিনিয়ত আমাদের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। আমরা আশাবাদী, আমাদের এই গবেষণা দেশ, দেশের মানুষ এবং আমাদের কৃষক ভাইদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

উদ্ভিদ ও কৌলিত্বত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. হারুনুর রশিদ সুমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণা খামারে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ফসলের গবেষণা চলমান রয়েছে। গবেষণারত শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে গবেষণা করছেন। তবে গবেষণার বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। সরকারিভাবে আরও বেশি বাজেট বরাদ্দ হলে গবেষণার সুযোগ সুবিধা আরও বেশি বর্ধিত করা যাবে।

এ বিষয়ে চীফ ফার্ম সুপারিন্টেন্ডেন্ট কৃষিবিদ মো. শামসুল হক সাগর বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় গবেষণা খামারে তিনটি মৌসুমে ফসল নিয়ে গবেষণা হয়। শীতকালীন ফসল ফুলকপি, বাঁধা কপি, লাউ, ভুট্টা, সরিষা, ধান, গম, টমেটো, মরিচ, পিয়াজ, বেগুন সহ বিভিন্ন ফসল নিয়ে বর্তমানে আমাদের খামারে মোট ৮০ টি গবেষণা চলমান আছে আরও ১৬ টি গবেষণা সামনে শুরু হবে। খামারে গবেষণায় উৎপাদিত ফসল খামারেই জমা দেওয়া হয় যা খামার কর্তৃক বাজারে সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হয় এবং কিছু ফসল ওই সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হয়। তিনি আরও জানান, খামারে চুরি ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর