জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে হল কক্ষে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্ট, হল ওয়ার্ডেনের উপস্থিতিতে তল্লাশি চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে হল থেকে পালাতে সাহায্য করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত তিনজন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের হাসানুজ্জামান (৪৫তম ব্যাচ), সাগর সিদ্দিকী (৪৬ ব্যাচ) এবং বোটানি বিভাগের সাব্বির হোসেন (৪৭ ব্যাচ)। এরা ৩ জনই ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। এদের মধ্যে সাগর সিদ্দিকী ছাত্রলীগের হল কমিটিতে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ছিলেন।
এদিকে কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, রোববার সকাল আটটার দিকে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান সাভার মডেল থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের রান্না ঘরের তালা ভেঙে মোস্তাফিজ রাত সোয়া ১টায় পালিয়ে যায়। এসময় অভিযুক্তকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে দেখা যায় তারই বিভাগের বন্ধু ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান ও বিভাগের ছোট ভাই ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং বোটানি ৪৭তম ব্যাচের সাব্বিরকে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদেরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তারা অভিযোগ স্বীকার করে নেয়।
এর আগে, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণে অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)।
তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। এর প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনেন তিনি। পরে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা।
এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। মামুনের কথা মতো তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী নারী। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভিতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নারী সাভার থানায় দেওয়া তার এক জবানবন্দিতে বলেন, 'মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার জিনিসপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। আমি জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।'
ভুক্তভোগী সেই নারী বলেন, 'এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে'।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, 'ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, সে একটি জঘন্যতম কাজ করেছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ঘটনা শুনেছি, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের নিয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলে এসেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুর রাসিক বলেন, ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।