বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা জানান, আমাদের অবস্থান কেবল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়।
রোববার (৩১ মার্চ) সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীরা যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরোধী। সেই জায়গা থেকে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে রাজনৈতিক চর্চায় জড়িতদের বিরোধিতা করে আসছে। বুয়েটের বাইরে বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে না বরং তাদের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে, ২৮ মার্চ রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় নিয়ম অমান্য করে বুয়েটের ভেতরে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে 'অনুপ্রবেশ' করার। ক্যাম্পাসে, হলে কিংবা ক্লাসে কারও ওপর কোনোরকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এ অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যাচার।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমাদের ৬ দফা দাবির, প্রথম দাবিতে যার কথা উল্লেখ রয়েছে, ইমতিয়াজ রাব্বি, সে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদপ্রাপ্ত এবং ইতোপূর্বে সে তার পদ সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি। তার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে এই পরিচয় ব্যবহার করে। সে এবং তদসংশ্লিষ্ট আরও ছাত্ররা যদি রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করে ক্যাম্পাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে পারে, তাহলে অতিসত্বর বুয়েটে সম্পূর্ণগতিতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা কেবল সময়ের ব্যাপার, এ আশঙ্কা থেকেই এ আন্দোলন।
বুয়েটের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করেন। জাতীয় দিনগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক উদযাপন ও অংশগ্রহণ এবং সম্যকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিই এর প্রমাণ। এটি প্রমাণ করার জন্য আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসের সব সাধারণ শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্তকে অবমাননা করে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই।
দ্বিতীয় আরেকটি ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আমরা যেমন সক্রিয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তেমন সক্রিয় নই।
উল্লেখ্য, ছাত্রদল যখন ২০২১ সালে আহ্বায়ক কমিটি দেয় তখন তীব্র আন্দোলন হয়। কিন্তু সেই কমিটির সবাই সাবেক শিক্ষার্থী বিধায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় ছিল না কর্তৃপক্ষের। ওই সময় আমাদের তৎকালীন র্যাগব্যাচের অফিসিয়াল পেজ থেকে দেওয়া বিবৃতির প্রমাণও রয়েছে।
বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না বরং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। এদের কর্মকাণ্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের (সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী) লাগানো বিভিন্ন পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। তাদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট না। আমাদের ইনস্টিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে সর্বপ্রথম ডিএসডব্লিউ স্যারকে ভার্চুয়ালি এই মর্মে ইনফর্ম (অবহিত) করা হয়।
এ ব্যাপারে ডিএসডব্লিউ স্যারের কাছে যথাযথ পদক্ষেপ আহ্বান করা হয়। পরবর্তীতে ভিসি স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, এ ব্যাপারে বুয়েট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের এদের বিরুদ্ধে পুলিশে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা হিজবুত তাহরীরের নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয়, সে জন্য আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ!
যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে, তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিতভাবে আহ্বান জানাই এবং এটি আমাদের পূর্বের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। সে সময়ে 'ইন্টারভ্যাল ১৮'-এর ফেসবুকে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেওয়া হয় যা, বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজ থেকেও প্রচার করা হয়।
আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এরকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাবো।
এই প্রসঙ্গ আমরা আহ্বান জানাবো, ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্টকে, যিনি দাবি করেছেন তাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে, তিনি যেন প্রমাণসহ বুয়েটে শিবিরে যুক্তদের তালিকা প্রকাশ করেন। আমরা সেক্ষেত্রে তাদের তাৎক্ষণিক নিষিদ্ধ করার দাবি জানাবো।
সবশেষে, আমরা বলতে চাই, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা নিষিদ্ধ। কমিটি দেওয়া ছাড়াও ক্যাম্পাসে শোডাউন, রাজনৈতিক সংগঠনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ যেখানে বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ, সেখানে রাত ৩টায় একটা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতার দলেবলে প্রোগ্রাম করা অবশ্যই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সাংগঠনিক রাজনীতির প্রভাবে ঘটা ঘটনা এটি।
বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখিত যে, প্রধানমন্ত্রী বুয়েটের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে কখনোই সম্মান করেনি বরং ২০২২ সালে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা বুয়েটে সমাবেশ/মিছিল করে হামলার হুমকি দেয়।
ছাত্রলীগের উদ্দেশে তারা জানান, দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরেও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ফের ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধুমাত্র একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই, আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি, ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। আমরা শপথ করছি, সব রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।