লাইসেন্সধারী নেতার মতো কাজ করব: গোলাম রাব্বানী

বিবিধ, ক্যাম্পাস

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-22 20:55:33

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নতুন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী নিজেকে লাইসেন্সধারী নেতা হিসাবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে লাইসেন্সধারী নেতার মতো শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব।

গত ১১ মার্চ ডাকসুর ভোট গ্রহণে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস নির্বাচিত হন সংগঠনটির এই সাধারণ সম্পাদক। বার্তা২৪.কমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উদ্যোগ আর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমি আমার জায়গা থেকে বলছি, শিক্ষার্থীরা আমার ওপর আস্থা রেখেছে। নিজের স্বার্থে ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব। সেই জায়গা থেকে যেহেতু আমাকে বৈধ ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে; এক ধরনের লাইন্সেসধারী নেতা যাকে বলে, শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার। সুতরাং আমি অবশ্যই তাদের জন্য কাজ করব। কথা দিতে চাই, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেব। সকল ইতিবাচক কাজে, সত্য সুন্দরের পথে নীতি নৈতিকতা রেখে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ডাকসুর নবনির্বাচিত জিএস হিসাবে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেনে, ‘তপ্ত মরুভূমিতে হেঁটে চলা তৃষ্ণার্ত উদ্ভ্রান্ত পথিকের মতো; জলের সন্ধান পেলে যেমনটি হয়, অনুভূতিটা তেমনিই। আমরা সবাই সত্যিকার অর্থে ডাকসুর জন্য, শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্লাটফর্মের জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলাম। বহু আকাঙ্ক্ষা-সাধনার ধন হচ্ছে এই ডাকসু। এই ডাকসু দীর্ঘ ২৮ বছর পর আলোর মুখ দেখেছে। আমরা এই ডাকসুকে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়ার প্রত্যাশা, প্রাপ্তির যে মেলবন্ধন এবং অধিকার বাস্তবায়নের মঞ্চ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।’

ডাকসুর জিএস বলেন, ‘এত দিন ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। শিক্ষার্থীরা ছাত্রনেতা বা সবার নেতা বলার যে অধিকার; ভালোবাসার ম্যান্ডেট দেয়। এখন সবার জন্য কাজ করতে চাই। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে তাদের কথাগুলো সিনেটে গিয়ে বলার জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত।

নির্বাচনের ইশতেহার ধরে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করবেন জানিয়ে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ইশতেহার দিয়েছি, বাস্তবতার নিরিখে, ভেবে চিন্তে দিয়েছি। আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইশতেহারের প্রতিটা পয়েন্ট ধরে বাস্তবায়ন করতে চাই।

‘আমরা অভিষেক হওয়ার পূর্বেই রোকেয়া হলের দু’টি দাবি হল সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছি। মেয়েদের মায়েদের শুক্র ও শনিবার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া, লিফট খোলা রাখা এবং রাত ১০টা পর্যন্ত মূল গেইট খোলা রাখা। বিজয় একাত্তর হলেও ছেলেদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের কাজ করছি।’

ভোট গ্রহণের দিন মধ্যরাতে রোকেয়া হলে ছাত্রীদের আন্দোলন ও উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিল, তারা দেখলো পুরোপুরি ছাত্রলীগের পক্ষে যাচ্ছে, তখন গণপ্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে একটা সেভ এক্সিট তারা খুঁজছিল। সেই এক্সিটের জন্যই তারা একটা নাটক মঞ্চস্থ করলো।’

তিনি বলেন, ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য পরিষদের লিটন নন্দী এবং নুরুল হক নুরসহ ডাকসুর প্রার্থীরা দাবি করেছিল- ক্রস দেওয়া ব্যালেট বাক্স হলের কক্ষে রয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন ও সকলের প্রার্থীদের সামনে কক্ষ খুলে দেয়। দেখলাম, কোনো ব্যালেট বাক্স নেই, তলাবদ্ধ ট্রাঙ্ক ছিল। হল প্রাধ্যক্ষ ট্রাঙ্কের চাবি নুরুল হক নুরকে দিলেন; নুর খুললেন। সেখানে শুধু সিল করা খালি পেপার রয়েছে। তাদের নাটক পূরণ হয়নি, মঞ্চস্থ করতে পারেনি।

তার দাবি, কক্ষের বাইরে গিয়ে ওই ঘটনা নিয়ে কিছু না বলে নুর ও অনিক পালিয়ে যায়। আর নুর পানি খেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে, অভিনয় করে হাসপাতালে যায়। তারা স্টেটমেন্ট না দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। তাদের ‘প্ল্যান এ’ কাজ করেনি; তাই ‘প্ল্যান বি’ দিয়ে ভোটারদের সহানুভূতি পেতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

ডাকসু নির্বাচনে ভোটচুরির মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন গোলাম রাব্বানী। বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের মতো কুয়েট মৈত্রী হলেও ভোট চুরির গুজবে ছড়িয়ে দেয় তারা। ভোটচুরি যদি করা হয়ে থাকে, পেপার ব্যালেট বাক্সে পাওয়া যাবে, সেটা কোনো বস্তায় না। সেখানে ব্যালেট পেপারের রঙের মিল নেই, সিলের মিল নেই। কিন্তু হল সংসদের কিছু ক্রসযুক্ত ব্যালেট পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরেনের মেকানিজম করা হয়ে থাকতো, সেটা নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় ডাকসুকে বাদ দিয়ে নয়। তারা সেখানে নাটকটি করেছে কিন্তু ঠিক মতো মঞ্চস্থ করতে পারেনি। কিন্তু তারপরও তারা সফল, কারণ ভোটারদের মধ্যে যে প্যানিক (ভীতি) তারা ছড়িয়ে দিয়েছে যে, এখানে ভোট চুরি হচ্ছে, মিথ্যা একটি অপপ্রচার সফল করেছে।’

আরও পড়ুন: ‘অস্বীকার করছি না আমি ছাত্রলীগ করেছি’- ভিপি নুরুল হক নুর

এ সম্পর্কিত আরও খবর