রাবিতে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, শঙ্কিত শিক্ষার্থীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 03:00:37

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) একাডেমিক ভবন, প্রশাসন ভবন, হল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসহ ছোট বড় প্রায় ১৫৮টি ভবন রয়েছে। এসব ভবনের মধ্যে কেবল তিনটি ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে বাকি ১৫৫টি ভবন এবং এখানে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বনানী ও চুড়িহাট্টার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৭টি ভবনের মধ্যে ১৭টি আবাসিক হল, ১০টি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি করে আইবিএস ভবন, টিএসসিসি, মিলনায়তন, ডিনস ভবন, সিনেট ভবন, আইবিএ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন। এছাড়া উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বাসভবনসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রায় ১১৫টি আবাসিক ভবন রয়েছে। আর এসব ভবনের মধ্যে কেবল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ১৯টি, মুহম্মদ কুদরত-ই-খোদা ভবনে চারটি ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনে ১১টি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার রয়েছে। আর বাকি ভবনগুলোর কোনটিতেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিভিন্নস্থানে ১৯টি সিলিন্ডার রয়েছে যেগুলোর কোনটিরও মেয়াদ নেই। এর মধ্যে গ্রন্থাগারের মূল ফটকে যে সিলিন্ডার রয়েছে সেটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৯ সালে। পাশে থাকা রেফারেন্স শাখার সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫ সালে। সিঁড়ির পাশে ক্যাটালগিং শাখার সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয় ২০১১ সালে। রিডিং রুমের সামনে রাখা সিলিন্ডারটি মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহম্মদ কুদরত-ই-খোদা ভবনে চারটি ও স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনের বিভিন্ন বিভাগে ১১টি অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার দেখা গেছে। এই দুই ভবনের ১৫টি সিলিন্ডারের মধ্যে চারটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুলাইয়ে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবন, হল ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেখা যায়নি।

যে তিনটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলোর মেয়াদ নাই: ছবি: বার্তা২৪

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত বছরের ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের দুটি ল্যাব ও অফিস কক্ষে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনগুলোতে অগ্নিদুর্ঘটনা নিরসনে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া হলগুলোতে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণে আনার কোন উপায় নেই বলেও জানা যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, 'ক্যাম্পাসের অন্য কোন ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে কিনা জানা নেই। তবে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের কোন ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা। ভবনগুলো যে কাঠামোতে তৈরি করা হয়েছে আগুন লাগলে প্রাণে বাঁচার সম্ভাবনা নেই। সারাদেশে যেভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে এখানে যে হবে না তার নিশ্চয়তা নাই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।'

আবুল কাশেম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'ক্যাম্পাসের ভবনগুলো অনেক পুরাতন। এছাড়া ভবনগুলোতে বৈদ্যুতিক তারের যে লাইন টানানো হয়েছে সেগুলোতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। প্রতিটি হলে শিক্ষার্থীরা বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার করছে। ফলে যেকোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।'

গ্রন্থাগারের একাধিক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'গ্রন্থাগারের ভেতরে যেসব সিলিন্ডার রয়েছে সেগুলোর মেয়াদ নেই। যদি গ্রন্থাগারের কখনো আগুন লাগে তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এছাড়া অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। কেননা গ্রন্থাগারের মূল ফটক ছাড়া বের হওয়ার অন্য কোন পথ নেই। এছাড়া গ্রন্থাগারের ভেতরে এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক লাইন টানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বারবার বলা হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।'

তারা আরও বলেন, 'অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে কিভাবে আগুন নেভাতে হয়, আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। তাই অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'গ্রন্থাগার ও দুই একটি ভবন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন ভবনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। শীঘ্রই অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর