মিশুকে পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ায় অনড় চেয়ারম্যান

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জবি করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 21:45:56

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আবার শুরু হলেও পরীক্ষায় বসতে পারছেন না বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিশু। তাকে পরীক্ষায় বসতে না দিতে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছেন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম।

এদিকে মিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রক্টরিয়াল তদন্ত প্রতিবেদনে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিমকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে রিভিউ প্রতিবেদন জমা দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, গত ২২ মে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সোহান ও মাহমুদুল হাসান মিশুর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম। গত ৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদুল হাসান সোহান ও মাহমুদুল হাসান মিশুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর বাদী, বিবাদী ও সাক্ষীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সহকারী প্রক্টর শিল্পী রানী সাহা ও মো. মহিউদ্দিন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাহমুদুল হাসান সোহানকে সাময়িক বহিষ্কার ও মাহমুদুল হাসান মিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তার একাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার সুপারিশ করা হয়।

মিশু অভিযোগ করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করেই তাদের কোন ক্লাস, পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি বিভাগের চেয়ারম্যান।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোন প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও গত ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় তাকে বসতে দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার হল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এবং তাকে পরবর্তীতে পুলিশে সোপর্দ করা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে বের হতে না দেওয়ার হুমকি দেন জুনায়েদ হালিম।

এ বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর বিভিন্ন একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জবিতে চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের সব একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করে দেন চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম বলেন, মিশুর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কোন সুযোগ নাই। আমি তার বিষয়ে সম্মানজনক কোন সুরাহা পাইনি। আমি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে উপাচার্যের কমাণ্ডের বাইরে যেতে পারি না।

উপাচার্যের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও কেন পরীক্ষা দিতে দেননি – এমন প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ হালিম বলেন, আমি উপাচার্যের কথা মতোই তার পরীক্ষা নেইনি।

এ সময় তিনি বলেন, এটা এমন কোন বিষয় না যে, সাংবাদিকদের ‘কচলাকচলি’ করতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা আজ (সোমবার) উপাচার্যের কাছে ৫৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের প্রতিবেদনে মিশু নির্দোষ ছিল। এখন এ বিষয়ে রিভিউ কমিটি হয়েছে। বিষয়টা উপাচার্য দেখছেন।

রিভিউ কমিটির সদস্য ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিমের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। মাত্র তোমার কাছে শুনলাম। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি প্রজেক্টের জন্য তিনদিনের ছুটি নিয়েছি।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানকে জিজ্ঞেস করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমি কারো সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলব না। তুমি আগামীকাল (মঙ্গলবার) আমার অফিসে আসো, তখন কথা বলব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর