ড. মু. আলী আসগর: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
করোনাভাইরাস হচ্ছে- RNA (Ribonucleic acid) ভাইরাস পরিবার যা মূলত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে (নাক, গলা, ফুসফুস ইত্যাদি) সংক্রমণ করে। করোনাভাইরাসের ভিতরের অংশে RNA থাকে এবং বাহিরের আবরণে লিপিড ও স্পাইক প্রোটিন থাকে। করোনাভাইরাসের বাহিরের আবরণে স্পাইক প্রোটিনগুলো একত্রিত হয়ে মুকুটের মত ট্রাইমারস গঠন করে (তথ্য সূত্র: এডভ্যান্সেস ইন ভাইরাস রিসার্চ জার্নাল)।
ট্রেন্ডস ইন মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, সার্স-কোভ-১ ও মার্স-কোভ ভাইরাসের কারণে সংক্রমণ সীমিত পর্যায়ে আছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৫ নভেম্বর, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, চলমান মারাত্মক সংক্রমক সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
৩০ মার্চ, ২০২০ তারিখের ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কোভিট-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসের (সার্স-কোভ-২) বাহিরের আবরণে ‘‘স্পাইক প্রোটিনগুলো’’ ২০০২-২০০৩ সালের মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশি সন্নিবিষ্ট হওয়ায়, বর্তমানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস দ্বারা মানুষের শ্বসনতন্ত্রের (নাক, গলা, ফুসফুস) কোষের এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (এসিই ২) রিসেপটর প্রোটিনের সাথে শক্তভাবে সংযুক্ত হওয়ায়, কোভিড-১৯ রোগ দ্রুত বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ।
কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী নভেল করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) কিছু মানুষকে মারাত্মকভাবে সংক্রমিত করার ফলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভেন্টিলেশন প্রয়োজন হচ্ছে। পক্ষান্তরে অন্যদের ক্ষেত্রে মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ রোগীর জন্য ঝুঁকির প্রধান ফ্যাক্টরগুলো হলো— ১. বয়স ২. ডায়াবেটিস ৩. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ ৪. ফুসফুসে সমস্যা ৫. ধুমপান ।
১. বয়স
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বা তদুর্ধ. বয়সের কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার তুলনামূলক অনেক বেশি। এই ধরণের বয়স্ক রোগীরা মারাত্মক সংক্রমণের ফলে হাসপাতালে বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) মারা যাচ্ছে। ‘‘দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস’’ জার্নালের গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগে ৮০ বছর বা তদুর্ধ. বয়সের রোগীদের গড় মৃত্যুহার ১৩.৪%; ৬০ বছর বা তদুর্ধ বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৪.৫%; এবং ৬০ বছর বয়সের কম রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১.৪%। সিডিসি প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ক্রনিক অসুস্থতা (যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি) কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণসমূহ বৃদ্ধি করতে পারে।
কোভিড-১৯ রোগের মৃত্যুর জন্য, ক্রনিক অসুস্থতা একমাত্র কারণ নয়; বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াও দায়ী। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ের ক্ষমতা কমে যায়; ফলে তীব্র সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাথমিক অবস্থায় নভেল করোনাভাইরাসকে (SARS-CoV-2) প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়, তখন ভাইরাস বলিষ্ঠভাবে ফুসফুসকে আক্রমণ করতে শ্বাসনালী দিয়ে নিম্নমুখে অগ্রসর হয় এবং ফুসফুসে ভাইরাস মারাত্মক রুপ ধারণ করে (সূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘‘সায়েন্স’’)।
২. ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস মেলিটাস একটি ক্রনিক বিপাকীয় রোগ যার ফলে রক্তে অধিক মাত্রায় গ্লুকোজ (বা ব্লাড সুগার) পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়, টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস। বিশ্বে প্রায় ৯০% ডায়াবেটিস রোগী হচ্ছে, টাইপ-২ এবং বাকি ১০ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত (তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস দেখা দেয় যখন দেহের অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়, শরীর কোন ইনসুলিন উৎপাদন করতে অক্ষম হয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্ক না থাকলেও, টাইপ-২ ডায়াবেটিস মানুষের জীবনযাত্রার (অধিক শর্করা গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম/ব্যায়ামের ঘাটতি) সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি কমন রোগ। মানুষের দেহ যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না এবং উৎপন্ন ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা যায়। সাধারণত অনেকদিন যাবত অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম/ব্যায়ামের ঘাটতির কারণে দেহের ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে পড়ে (যা ‘‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’’ নামে পরিচিত)।
সম্প্রতি ‘‘জার্নাল অফ ইনফেশন’’ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, ১৩টি স্ট্যাডিজের রিভিউয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন, ডায়াবেটিস রোগ থাকার কারণে কোভিড-১৯ রোগের ক্রিটিকাল (জটিল) অবস্থা বা মৃত্যুর সম্ভাবনা, কোন ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যা (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসে সমস্যা ইত্যাদি) না থাকা কোভিড-১৯ রোগীর চেয়ে প্রায় ৩.৭ (তিন দশমিক সাত) গুণ বেশি ছিল।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগটি মারাত্মক হওয়ার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা কিছু সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কোভিড-১৯ রোগীর, ফুসফুসের ক্রনিক প্রদাহ, রক্তজমাট ক্রিয়া বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ সাড়ায় বিশৃঙ্খলা, এবং নভেল করোনাভাইরাস SARS-CoV-2 দ্বারা সরাসরি অগ্ন্যাশয়ের (ইনসুলিন-উৎপাদনকারী কোষগুলির) ক্ষতিসাধন, এগুলো সম্ভাব্য কারণগুলোর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ক্রমবৃদ্ধি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস, কোভিড-১৯ রোগের সাথে লড়াইয়ে জড়িত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যবস্থাগুলোর ক্ষতি সাধন করে (তথ্য সূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘‘লাইভ সায়েন্স’’)। ফলে, কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী করোনাভাইরাস SARS-CoV-2 দ্বারা আক্রান্তের ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের আরোগ্য লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ‘‘জার্নাল অফ ডায়াবেটিস রিসার্চ’’ এ প্রকাশিত রিভিউ আর্টিকেলে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, ডায়াবেটিস ও স্থুলতার কারণে দেহের সংক্রমণের লড়াইয়ে সহায়তাকারী "শ্বেত রক্ত কণিকা" এবং ‘‘বি’’ কোষ উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অধিকিন্তু, করোনাভাইরা, মানবদেহের রক্তের উচ্চ গ্লুকোজ মাত্রা দ্বারা সতেজ ও সমৃদ্ধ হয় (তথ্যসূত্র: ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন)।
ডায়াবেটিক রোগীরা (বিশেষভাবে টাইপ-১ এর ক্ষেত্রে) ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (ডিকেএ) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (ডিকেএ) ঘটে থাকে, যখন রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে, ফলে কিটোনস নামক অম্ল (এসিড) জাতীয় পদার্থ মারাত্মক মাত্রায় দেহে তৈরি হয়। ডিকেএ এর ফলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইটস অনেক কমে যায়। ইলেকট্রোলাইটস হচ্ছে, ইলেক্ট্রিকালি চার্জড খনিজ পদার্থ; যা হৃদপিণ্ড ও স্নায়ুগুলোকে (নার্ভস) ঠিকভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করে।
কোভিড-১৯ রোগের আক্রান্তের ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হলেও, ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণ জনগণের তুলনায় করোনাভাইরাস দ্বারা অধিকতর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাই। রক্তের সুগার ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস উভয় ক্ষেত্রের রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগ মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। রক্তের সুগারের মাত্রা বেশি থাকলে ভাইরাস সংক্রমণের সময় দেহের লড়াইয়ের সক্ষমতা আপোষমুখি হয়ে যায়।
৩. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
আমেরিক্যান হার্ট এসোসিয়েশন প্রদত্ত তথ্য মতে, যাদের হৃদসংবহনতন্ত্রে সমস্যা আছে অর্থাৎ হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁরা সচরাচর হৃদসংবহনতন্ত্রে সমস্যাহীন মানুষের চেয়ে কোভিড-১৯ রোগে অধিকতর মন্দ শারীরিক জটিলতায় ভুগে। ভাইরাস সুস্থ মানুষেরও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত একজন ৫৭ বছর বয়সের মহিলার হৃদপিণ্ডের মাংসপেশী ড্যামেজ হয়ে মৃত্যুর রিপোর্ট পাওয়া গেছে (তথ্যসূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট "লাইভ সায়েন্স")। চীনের উহানে কোভিড-১৯ রোগীদের এক স্ট্যাডিতে, পাঁচজন রোগীর মধ্যে গড়ে একজনের বেশি রোগীর হৃদপিণ্ডের মাংসপেশী ড্যামেজ ঘটেছে।
কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস SARS-CoV-2 ফুসফুসে আক্রমণ করে দেহে অক্সিজেন ঘাটতি সৃষ্টি করে। সেকারণে হৃদপিণ্ড অধিক চাপ বহনের মাধ্যমে পাম্প করে দেহে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবররাহ করে। অধিকিন্তু, ভাইরাস, হৃদপিণ্ডের এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম-২ রিসেপটরে সংযুক্ত হয়ে সরাসরি হৃদপিণ্ডকে আক্রমণ করে।
৪. ফুসফুসে সমস্যা
ফুসফুস করোনাভাইরাস দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হওয়ার সময় দেহের শ্বেত রক্ত কণিকা, কেমোকাইন (Chemokine) নামক ‘‘সিগন্যালিক প্রোটিনকে’’ উন্মুক্ত করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মোলিকুলার সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, কেমোকাইন হচ্ছে, ছোট প্রোটিন (ভর ৮-১০ কিলোডালটনস) যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ও ক্ষতের নিরাময়ে (রক্ত জমাট বাধাসহ নতুন কোষ তৈরিতে) বিভিন্ন ধরণের কোষ থেকে নিঃসৃত হয়।
নতুন কেমোকাইন আরোও অধিক পরিমানে রোগ প্রতিরোধী কোষকে জড়ো করে যা ভাইরাস আক্রান্ত ফুসফুসের কোষগুলোকে মেরে ফেলে (তথ্যসূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ভিত্তিক ওয়েব সাইট ‘‘সায়েন্স’’)। একারণে সৃষ্ট তরল ও মৃত কোষগুলি পুঁজে পরিণত হয়। এটি কোভিড-১৯ রোগের নিউমোনিয়া (ফুসফুসে প্রদাহ)। দুর্বল ফুসফুসের আক্রান্তদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া হঠাৎ করেই অধিকতর খারাপ পর্যায়ে যায়, যাকে বলা হয় অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস)। নিউমোনিয়ার মারাত্মক পর্যায়ে ভাইরাসের তীব্র সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের বায়ুথলিগুলো শ্লেষ্মা, রক্তের শ্বেত কণিকা, তরল পদার্থ ও ফুসফুসের ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষের রাবিশ দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং চরম শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধরনের ক্রিটিকাল সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য রোগীকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়।
৫. ধুমপান
ধুমপান সরাসরি ফুসফুসের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। সেকারণে ধুমপায়ীরা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত নিউমোনিয়া (ফুসফুসের প্রদাহ) ডেভেলপ করে এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট আরম্ভ হয়। অধিকিন্তু ধুমপান অনেক বছর ধরে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে (তথ্যসূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘‘লাইভ সায়েন্স’’)। অতি সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাস- ফুসফুসের যে রিসেপটরে (এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম-২) সংযুক্ত হয়ে ফুসফুস আক্রমণ করে; ধূমপানের ফলে ফুসফুসে এই রিসেপটরের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় এবং ভাইরাসের আক্রমণ আরও সহজতর হয়।
প্রতিরোধ
ফলপ্রসূ কোভিড-১৯ চিকিৎসা উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও জনস হপকিন্স মেডিসিন যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি পন্থাগুলো ( সাবান ও পানি দিয়ে ঘনঘন প্রতিবার অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া, মুখে ও নাকে মাস্ক ব্যবহার করে হাঁচি/কাশি/থুতুর তরল ড্রপলেট থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা, হাত পরিস্কার না করে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ না করা, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, কনুই বক্র করে বক্রস্থানে কাশি দেওয়া, অসুস্থ অবস্থায় গৃহে থাকা) মেনে চলার সুপারিশ করেছেন। ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ ও হ্রাসে ২০২২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত বা সবিরাম সামাজিক শিষ্টাচার (শারীরিক দূরত্ব) অপরিহার্য হতে পারে (তথ্যসূত্র: ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ)।
ড. মু. আলী আসগর: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়