মিয়ানমার সংকট: বহুপক্ষীয় সংলাপে সমাধান খোঁজার তাগিদ

  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্রন্টে মিয়ানমারের সরকারি সেনাদের পরাজয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দেশটির রাখাইন প্রদেশের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সবশেষ নিরাপত্তা চৌকির পতনের পর নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। বিরাজমান অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বহুপক্ষীয় সংলাপে এই সংকটের সমাধান খুঁজতে বাংলাদেশকে তৎপর হওয়ার তাগিদ এসেছে।

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার’র মঙ্গলবারের সম্পাদকীতে উঠে এসেছে এমন পর্যবেক্ষণ।

বিজ্ঞাপন

সম্পাদকীয়তে দৈনিকটি বলছে, ‘মিয়ানমারে সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘাত বাংলাদেশের জন্য নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আরাকান আর্মি সম্প্রতি দাবি করেছে যে তারা কৌশলগত পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মংডুতে মিয়ানমারের শেষ সেনা ফাঁড়িটি দখল করেছে, যার ফলে বাংলাদেশের সাথে ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে রাখাইন রাজ্যে তার সীমান্তে চলমান সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে জোর দিয়ে বলেছে যে তারা আরাকান সেনাবাহিনীর মতো নন স্টেট অ্যাক্টরদের সাথে আলোচনা করতে পারে না।’

‘পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন গত ১৯ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডে একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মিয়ানমারের পরারাষ্ট্র মন্ত্রীকে এই তাগিদ দেন। তিনি এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতি জোর দেন। তিনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না করে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কারণে গত সাত বছরে অন্তত ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করার সত্ত্বেও অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়েছে। স্পষ্টতই, পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল এবং বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। সীমান্তে সংঘবদ্ধ চক্রের দুর্নীতি রোহিঙ্গাদের আগমনকে সহজতর করে এবং মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। অতএব, সরকারের জন্য এই সমস্যাগুলি আরও বাড়ানোর আগে জরুরিভাবে সমাধান করা জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, ‍ ‍‍‍‍‍‘বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পূর্ণভাবে থমকে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কতদিন তাদের আশ্রয় দিতে পারে? বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা। রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক বোঝা বহন করছে তা দিন দিন আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সংঘাতের কারণে বাংলাদেশ এবং বৃহত্তর এ অঞ্চলের জন্য আরও অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতা বৃদ্ধি আবারও মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে সংগঠিত সহিংসতার পুনরুজ্জীবনের শঙ্কা তৈরি করেছে। যেটি ২০১৭ সালে তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশকে অবশ্যই তার সীমান্ত সুরক্ষিত করার বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।’

বহুপক্ষীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে এতে আরও বলা হয়েছে, ‘একই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায়, সরকারের উচিত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের স্বার্থে মিয়ানমারের জান্তা এবং বিভিন্ন বিদ্রোহী দলকে সংলাপের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে রাজি করানো।’