মধ্যযুগের ফারসি সাহিত্য পৃথিবীকে দিয়েছিল সূর্যসম প্রতিভা। তৎকালীন সাহিত্যিকরা অতুলনীয় সৃষ্টির প্রাচুর্যে এনে দিয়েছিল সাহিত্যের সমৃদ্ধ প্রান্তর। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহাকবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি। মহাকবি রুমি তার একটি লেখায় একটি গল্প লিখেছেন। গল্পটি ছিল এক চোরকে নিয়ে। মহাকবি রুমি কোনো একদিন তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গেছেন। একদিন সকালে তিনি হাটতে বের হলেন। গ্রামের মাঠের এক বট গাছের নিচে তিনি অনেক লোক সমাগম দেখতে পেলেন। তিনি এক পা, দু পা করে সেখানে পৌঁছালেন। গিয়ে দেখলেন বটগাছ থেকে এক মৃত ব্যক্তির লাশ ঝুলছে। আর লোকজন সবাই জয়ধ্বনি দিচ্ছে। তিনি অবাক হলেন। জানতে চাইলেন আসল ঘটনা কী? একজন ব্যাখ্যা করল- যে ব্যক্তির লাশ ঝুলানো আছে সে একজন বিখ্যাত চোর। সে বিগত বিশ বছর ধরে চুরি করে আসছে। কিন্তু লোকজন তাকে ধরতে পারেনি। আজ ধরা পড়েছে। তাই তাকে মেরে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
মহাকবি কথাটি শুনে দ্রুত চোরটির পায়ে চুমু খেলেন। লোকজন অবাক হয়ে গেল। লোকজন বলতে লাগল এটি আপনি কী করলেন? মহাকবি এবার কী কারণে চুমু খেলেন তা ব্যাখ্যা দিলেন। চুরি কাজটি যদিও খারাপ তারপরও সে এই কাজে লেগেছিল, সেই কারণে বিশ বছর তাকে কেউ ধরতে পারেনি। সে দক্ষ হয়ে গিয়েছিল। তার এহেন কাজের লেগে থাকার জন্য তার পায়ে চুমু খেয়েছি।
উপরোক্ত গল্প থেকে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। মানুষ যদি কোনো কাজে লেগে থাকে তাহলে সে সফল হবেই। তবে ভাল কাজে লেগে থাকলে সফল হওয়ার পর সে সমাদৃত হবে, প্রশংসিত হবে। আর খারাপ কাজে লেগে থাকলে সেখানেও সফল হবে এবং ঘৃণিত হবে। লেগে থাকো। এইবার পারোনি। তার মানে এই নয় যে আর পারবে না। সামনে আরো সুযোগ আছে সেগুলো ভালভাবে কাজে লাগাও। ভাল কাজের সাথে লেগে থাকো। তুমি সফল হবেই। সমাদৃত হবেই হবে।
জীবনে ভাল কিছু পেতে হলে সেই জিনিসটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। মনে করতে হবে ঐ জিনিসটাকে আমি অর্জন করবোই করবো। ক্যারিয়ার তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো চিন্তাই করি না। এমনও দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছে অথচ একটা ভাল মানের সিভি তৈরি করতে পারে না। একটা প্রফেশনাল ভাইভা বোর্ড কীভাবে ফেস করতে হয় সেরকম কিছুই জানে না। শুধু হতাশ থাকে। শুধু রেফারেন্স খোঁজে। তুমি যদি নিজেকে তৈরি করতে পারো তাহলে হতাশও হবে না, কোনো রেফারেন্সও লাগবে না। ইনশাল্লাহ তুমি ভাল করবে।
অনেক সময় দেখা যায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ কোনো সাবজেক্ট নিয়ে অনেকে ভাল পজিশন এ যাচ্ছে। আবার দেখা যায় খুব ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই ভাল সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে পাশই করতে পারছে না।
ভাল ক্যারিয়ার (সরকারি/প্রাইভেট জব, বিদেশে লেখাপড়া বাণিজ্যে উদ্যোক্তা হিসেবে কিছু করা) গড়তে যে কাজগুলো করা উচিত বলে মনে করি:
০১. যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সাবজেক্টই হোক না কেন তা নিয়েই খুশি থাকা। কারণ আমাদের দেশের সবাই তার পছন্দ মত বিষয়ে পড়তে পারে না।
০২. ছাত্রাবস্থায় ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। সম্ভব হলে ক্যারিয়ার বিষয়ক টুকটাক লেখাপড়া করা বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবস্থা করে রাখা। তুমি যে পেশায় যেতে চাও সেই পেশায় যাওয়ার ধাপ বা আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে প্রথম থেকেই চিন্তা করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।
০৩. অনেক চিন্তা করে তোমার পছন্দের দিকটা যেমন- সরকারি/বেসরকারি জব, বিদেশে লেখাপড়া বা নিজ উদ্যোক্তা হিসেবে কিছু করা ইত্যাদি বেছে নিবে। কারণ যে বিষয়টাতে তোমার আগ্রহ কম সেখানে তুমি মজা পাবে না। তাই সেখানে তোমার ভাল করার সম্ভাবনা কম থাকবে।
০৪. কখনও একই সাথে দুই বা ততোধিক ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করবে না। তাহলে এদিকেও পাবে না; ওদিকেও পাবে না, হতাশ লাগবে।
০৫. নিজের কাজটাকে স্বপ্নের মত চিন্তা করবে। তবে হ্যাঁ স্বপ্ন যতটা সহজ তোমার কাজটা হয়তো অতটা সহজ হবে না, কিন্তু অসম্ভব হবে না।
০৬. সবসময় বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখবে। সেই স্বপ্নটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিবে। জানি তুমিই পারবে।
০৭. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর তোমার প্রথম কাজ হবে ছাত্রাবস্থায় যে বিষয়টাকে তুমি ক্যারিয়ার হিসেবে স্বপ্ন বা চিন্তা করেছিলে তার পিছনে দৌড়ানো। সেটা অর্জন না করা পর্যন্ত থামবে না। আজ বা কাল তুমি সেটা অর্জন করবেই করবে। মনে রেখ, ভাল ক্যারিয়ার তৈরি করতে না পারলে সমালোচনা করার মত অনেক লোক পাবে। কিন্তু একটু সাহস যোগানোর মত একজনকেও পাবে না।
আমরা সাধারণত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী থেকে আপ্লুত হই। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছো বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্বপ্ন কেমন ছিল? আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তারা কতটা কর্মঠ ছিল? স্বপ্ন দেখ। স্বপ্নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। কর্মঠ হও। পৃথিবীতে কেউই রাতারাতি হিরো হয়ে গেছে এমন উদাহরণ বিরল। এগিয়ে যাও, জানি তুমিই পারবে।
মো: হামিদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, বিইসিএম বিভাগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।