আন্তর্জাতিক বাজার দর বিবেচনায় এলপিজির স্বয়ংক্রিয় দাম নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি। প্রতিমাসে সৌদি আরামকোর রেটকে ভিত্তি ধরে উঠানামা সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিয়াম মিলনায়তনে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণ বিইআরসির শুনানিতে এই প্রস্তাব করা হয়। বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
কারগরি কমিটি সকল এলপিজির অভিন্ন রেট করার পক্ষে মতামত দিয়েছে। এতে বলা হয়েছি সরকারি কোম্পানির বাড়তি মুনাফা ক্রসসাবসিডি আকারে দেওয়া যেতে পারে। কারিগরি কমিটির এই প্রস্তাব মেনে নিলে গ্রাহক সরকারি এলপিজি কিনলে প্রতি বোতলে এই টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। যা সাবসিডি তহবিল নামে একটি সরকারি তহবিলে জমা থাকবে। যেখান থেকে পরে সাবসিডি বা ভর্তুকি দেয়া হবে। উল্লেখ্য সরকারি কোম্পানি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি পেয়ে থাকেন। এ কারণে তাদের এলপিজির দর তুলনামূলক কম।
তবে ক্যাবের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। ক্যাব উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, মাসে মাসে মূল্যবৃদ্ধির এই প্রস্তাব বিইআরসির আইনের সম্পূর্ণ লংঘন। সম্প্রতি সংসদে আইন করে বছরে একাধিকবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে তাও এভাবে নিশ্চিতভাবে মাসে মাসে মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগকে সমর্থন করে না। তাই কমিশন এধরনের চিন্তা পুনঃবিবেচনা করবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, এইভাবে সরকারি কোম্পানির দাম বাড়িয়ে ফান্ড করা যায় না। এটি অযৌক্তিক। কোম্পানি বাড়তি এই দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে কিনে সেটি আগে বিবেচনায় নিতে হবে।
মূল্যহার নির্ধারণ প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল সাড়ে ১২ কেজি দাম ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা প্রস্তাব করে। তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি সারাদেশে একই মূল্যে বিক্রির সুবিধার্থে এর সঙ্গে ক্রস সাবসিডি ফান্ডের অর্থ যোগ করে ৯০২ টাকা করার প্রস্তাব করে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিত প্রস্তাবে বর্তমানে প্রতিকেজি ১০৪ টাকা ৯৩ পয়সা হিসাবে বিক্রি হচ্ছে বলে উল্লেখ করে। বিইআরসি এই মূল্য ৭২ টাকা ২৪ পয়সা সুপারিশ করে।
এছাড়া ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার খুচরা পর্যায়ে ১২৫৯ টাকা করার প্রস্তাব করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যা কারিগরি কমিটির বিবেচনায় ৮৬৬ টাকা হতে পারে বলে মত দিয়েছে। এছাড়া ৩৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২৫২৫ টাকা, ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩২৪৬ টাকা করার প্রস্তাব করে কারিগরি কমিটি।
সরকার কোম্পানির পক্ষে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ফজলুর রহমান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল দামের প্রস্তাবের উপস্থাপনা করেন। এরমধ্যে ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্স এর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
অটোগ্যাস মালিক সমিতির মহাসচিব (প্রস্তাবিত) হাসিন পারভেজ বলেন, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মিলে এই স্টেশন করছেন। দামের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।
এদিকে শুনানিশেষে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আগামী সাতদিনের মধ্যে লিখিত মতামত দেয়া যাবে। এরপর আবার ছোট পরিসরে বসে দামের বিষয়ে মূল্যায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত দামের আদেশ দেবে কমিশন।