অবশেষে গ্যাসের মিটারিং পদ্ধতি অনুমোদন, আতঙ্কে জিটিসিএল

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে পেট্রোবাংলা প্রস্তাবিত মিটারিং পদ্ধতি অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসে প্রোরো-রাটা পদ্ধতি বাতিল করে মিটার অনুযায়ী গ্যাসের বিল করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব মোঃ শেখ শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভুতাপেক্ষভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এতোদিন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) পরিমাপ করে নিলেও সরবরাহের সময় পরিমাপের ব্যবস্থা ছিল না। নতুন ব্যবস্থায় সকল স্তরে মিটারিং পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে। এখন থেকে জিটিসিএল যেভাবে মিটার অনুযায়ী গ্যাস বুঝে নিচ্ছে, তেমনি মিটারের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিকে বুঝে দিতে হবে। 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের চিঠিতে সিস্টেম লস কমানোর জন্য অবৈধ সংযোগ ও গ্যাস চুরি বন্ধে কার‌্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয় তা চিহ্নিত করে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে সিস্টেম লস হ্রাসে যারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

মিটারিং পদ্ধতি চালু হওয়া জিটিসিএল (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড) এর আর্থিক লোকসান হতে উত্তরণের জন্য চিঠিতে ৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুচাই কম্প্রেসর স্টেশনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের বিল কে বহন করবে, পূর্বের বিল কিভাবে সমন্বয় হবে সে বিষয়ে বিইআরসির সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত জিটিসিএল ওই পরিমাণ গ্যাসের বিল পরিশোধ স্থগিত রাখা যেতে পারে। 

অবিলম্বে জিটিসিএল এর কনডেনসেট সঞ্চালন চার্জ পুনঃনির্ধারণ করা, যেসমস্ত উচ্চচাপ সঞ্চালন পাইপলাইন জিটিসিএল এর মালিকানায় নির্মাণ হয়নি, সেই সকল পাইপলাইন অপরেশনাল কার‌্যক্রম জিটিসিএল এর নিকট হস্তান্তর পুর্বক সঞ্চালন চার্জ ভাগাভাগি করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। 

অফ ট্রান্সমিশন পর‌্যায়ে মিটার প্রবর্তনের কারণে জিটিসিএল এর যে পরিমাণ কারিগরি সিস্টেম লস হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে কারিগরি সিস্টেম লস অনুমোদনের জন্য বিইআরসির নিকট আবেদন করবে জিটিসিএল। 

এতোদিন জিটিসিএল সিস্টেম লস অন্য কোম্পানির কাঁধে সরিয়ে দিয়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। একই সঙ্গে ভলিয়ম বেশি হওয়ায় সঞ্চালন চার্জ বেশি আদায় করেছে। সেই মুনাফার পাহাড় থেকে প্রতি বছর ২ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রফিট বোনাস পেয়ে এসেছে। পেট্রোবাংলা সরবরাহ পর্যায়ে মিটার বসিয়ে পরিমাপ পদ্ধতি চালু প্রক্রিয়া শুরু করলে সাবেক চেয়ারম্যানের (জনেন্দ্র নাথ সরকার) সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। আন্দোলনের হুমকি এমনকি পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দেয় জিটিসিএল।  

অন্যদিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পাঠানো পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়, জিটিসিএল অফ-ট্রান্সমিশন পয়েন্টের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিসমূহে গ্যাস সরবরাহ করলেও অধিকাংশ অফ-ট্রান্সমিশন পয়েন্টে সরাসরি গ্যাস মিটারিং না থাকায় জিটিসিএল-এর ট্রান্সমিশন সিস্টেমে কারিগরি বা অন্যভাবে গ্যাসের কোন পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব ছিল না। এতে করে বিতরণ কোম্পানিসমূহের পক্ষে প্রকৃত ক্রয়ের পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হতো না ও ট্রান্সমিশন সিস্টেমের লোকসান কিংবা পার্থক্য বিতরণ কোম্পানির নিজস্ব পার্থক্যের সাথে একীভূত হয়ে যেত। বর্তমান প্রবর্তিত পদ্ধতিতে গ্যাস উৎপাদন কোম্পানি, আইওসি এবং আরএলএনজি উৎসসমূহ হতে মোট ২০টি পয়েন্টে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস গ্রহণ করছে এবং ৬৪টি অফ-ট্রান্সমিশন পয়েন্টের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিসমূহে সরবরাহ করছে।

মিটার বসানোর পর গ্যাসের সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো কেনা-বেচার একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জিটিসিএল এর সিস্টেম লস ২.৯৫ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি ২.৯৯ শতাংশ, মার্চে ৩.১০ শতাংশ এবং এপ্রিলে ২.৪১ শতাংশ দেখা গেছে। অন্যদিকে মিটার অনুযায়ী মার্চে (২০২৩) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ১০.৭৮ শতাংশ, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ৬.৩৮ শতাংশ, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ১.৩৪ শতাংশ, কর্নফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২.০৫ শতাশ লোকসান হয়েছে। ৬টি বিতরণ কোম্পানির ১৬১ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস লোকসান ছিল বলে পেট্রোবাংলা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে মিটার অনুযায়ী সিস্টেম লস কমিয়ে আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ২০২২ সালের এক আদেশে বলেছে, গ্যাসের সিস্টেম লস কোন অবস্থাতেই ২ শতাংশের বেশি গ্রহণযোগ হবে না। এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে। বিশ্বের কোথাও ২ শতাংশের বেশি সিস্টেম লস নেই। কিন্তু এতোদিন নানা রকম ফাঁকফোকর দিয়ে চুরি হওয়া গ্যাসকে সিস্টেম লস বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।