কৃত্রিম মুনাফা দেখাচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 20:50:29

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লোকশানি ব্যাংক। শেয়ার মার্কেটে এ ক্যাটাগরির ব্যাংক হিসাবে দেখানোর মধ্যে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ ও ভাল ব্যাংক হিসাবে গ্রাহক টানতে প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধা নিয়ে মুনাফা দেখিয়েছে এই ইসলামী ব্যাংকটি। বাৎসরিক প্রতিবেদনে নিরপেক্ষ নিরীক্ষা টিম এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে, অন্যদিকে শেয়ারবাজারের  ক্রেতাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ ধরনের প্যাকটিস হলে শেয়ার বাজারে ব্যাংকের উপরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাবে। আর পুরো ব্যাংকি-এ মানুষের বিশ্বাস হারাবে। নিয়ন্ত্রণক সংস্থা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজও কঠিন হয়ে যাবে।

ইসলামী ব্যাংকটি ২০২০ সালে মুনাফা দেখানো হয়েছে ২৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। একই বছরে ব্যাংকটির ৫২১ কোটি ২৩ লাখ খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৩০৫ কোটি ৯৮ টাকা ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা সহ মোট ৩২৫ কোটি ৯৫ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। সে হিসাবে ২৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার মুনাফা থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করলে ব্যাংকটির লোকশান হয় ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ৩২৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ঘাটতি প্রভিশন দুই বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করার সময় নিয়ে কৃত্রিম মুনাফা দেখানো হয়েছে।

আইন অনুযায়ী তিন ধরনের খেলাপি ঋণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা প্রাথমিক মানের খেলা ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, ডাউটফুল বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণের জন্য ৫০ শতাংশ এবং ব্যাড এন্ড লস বা মন্দমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের আমানতের রক্ষাকবজ বা সঞ্চিতি। ব্যাংকের নিট মুনাফা থেকে প্রভিশন করতে হয়। সে হিসাবে ব্যাংকটি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিতব্য ঘাটতি প্রভিশন ও ব্যাংকের অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিতব্য প্রভিশন মিলে ব্যাংকটির মোট ৩২৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এই প্রভিশন ঘাটতি পূরণ না করেই পরিচালন মুনাফাকে দেখিয়েছে। এর ফলে শেয়ার মার্কেটের স্টক হোল্ডারদের ডিভিডেন্ড দিতে হয়েছে, মুনাফা করার জন্য সরকারকে দিতে হয়েছে ট্যাক্স। এ অর্থের পুরোই ব্যাংকের ক্যাশ থেকে দিতে হয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ বছরই ব্যাংকটি এ ধরনের সুবিধা নিয়েছে।

সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে একই নিয়মে প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান থাকলেও কিছু ব্যাংক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে এ ধরনের সুবিধা পাচ্ছে ইসলামী এই ব্যাংকটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলছেন, বিষয়টিতে ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর সমস্যা থাকলেও তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠির মাধ্যমে মাধ্যমে এ ধরনের সুবিধা নিয়ে গেছে। 

কোন ব্যাংককে এ ধরনের সুবিধা দেয়ার ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ কঠিন করা হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, প্রভিশন সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এটা প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প নেই। প্রভিশনের এ রিকোয়ারমেন্টের অর্থ হলো ব্যাংককে ঝুঁকিমুক্ত করা। এখানে ডিপোজিটরদের স্বার্থ রয়েছে স্টক হোল্ডারদের স্বার্থ রয়েছে, প্রভিশনিংয়ের মাধ্যমে তাদের স্বার্থকে ঝুঁকিমুক্ত করা হয়। অতিরিক্ত মুনাফা দেখিয়ে ট্যাক্স দেখানো হলো, স্টক হোল্ডারদের ডিভিডেন্ট দিলো। এর ফলে ব্যাংক থেকে টাকা চলে গেলো। এতে পুরাতন শেয়ারের মূল্য বাড়লো, নতুনরা শেয়ার কেনার মধ্য দিয়ে প্রতারিত হলো। এটা মিসগর্ভমেন্ট। এর ধরনের প্যাকটিস হতে থাকলে শেয়ার মার্কেটেরে ব্যাংকের যে কনফিন্ডে তা থাকবে না। ফাইনান্সিয়াল সিসটেমের উপর কনফিন্ডেসের ঘাটতি দেখা দেবে।

কোন ব্যাংক যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে অনুমতি নিয়েই প্রভিশন ঘাটতি পূরণ না করে এমন সুবিধা নেয়, চিঠির মাধ্যমে অনুমতি নেয় তাহলে সেক্ষেত্রে সুশাসণের কতটা ব্যত্যয় ঘটবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের এই সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, এখানে স্বচ্ছতা প্রয়োজন। কোন যুক্তিতে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সবাইকে জানতে হবে। তা নাহলে তো লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর