অর্থনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে যা চান ব্যবসায়ীরা, জানালেন আমিন হেলালী



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে, ২০২৪) পৌনে ৩ ঘণ্টার বৈঠক করেছেন ১৫ সদস্যের ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতির অস্থিরতা-সহ নানা প্রসঙ্গে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির অস্থিরতা কাটিয়ে একে ভারসাম্যপূর্ণ করতে তাদের পর্যবেক্ষণ ও দাবি তুলে ধরেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। দীর্ঘ সময় ধরে ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ব্যবসায়ী নেতাদের কথা শুনেছেন এবং সেইসব বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

বৈঠকের সামগ্রিক বিষয়াবলী নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে বিস্তৃত আলাপচারিতায় এফবিসিসিআই’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দশদিশা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন হেলালী জানিয়েছেন, চলমান অস্থিরতায় অর্থনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তুলে ধরা প্রত্যাশার কথা। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

আমিন হেলালী: দেশের ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকটা সেক্টরের এসোসিয়েশন লিডারদের নিয়ে ১৫ সদস্যের টিম গত ১৬ মে (২০২৪) বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে আমরা এফবিসিসিআই এর পক্ষ থেকে দেখা করেছি। সেখানে আলোচনায় যে বিষয়গুলো ছিল..সবচাইতে বড় কথা হল, তিনি সকল ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকদের নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসেছেন। সেখানে তিনি আমাদের পৌনে ৩ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেকটি কথা তিনি শুনেছেন। প্রথমতঃ, এটি হচ্ছে একটি ইতিবাচক দিক। প্রতিটি সমস্যাই তিনি এড্রেস করেছেন। সমস্যাগুলো নিয়ে তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন, নেবেন-বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

বার্তা২৪.কম: আলোচনায় কোন বিষয়গুলো প্রধান্য পেয়েছিল...

আমিন হেলালী: যেমন ধরুন-সুদের হার নিয়ে আমরা উনাকে বলেছি, অর্থনৈতিক এই অবস্থার মধ্যে যে আপনারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) স্মার্ট ফর্মুলা বাতিল করে সুদের হারকে বাজারভিত্তিক করে দিলেন, এখন কি অবস্থা হবে? আমরা তো ব্যবসায়িক প্ল্যান করতে পারব না। লাগামহীন হয়ে যাবে। গভর্নর বললেন যে, ‘না, তা হবে না। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা বাবদ ৭-৯ পার্সেন্ট খরচ আছে।’

গভর্নর ধারণা করছেন সুদের এই কম্পিটিশনের মাধ্যমে ১২ পার্সেন্টের বেশি বাড়বে না। যদিও বাড়ে বা কেউ যদি বাড়াতে চায় মার্কেটে তাহলেও ১৪ পার্সেন্টের বেশি কেউ বাড়াতে পারবে না। এটা উনি আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউ এটাকে ১২ পার্সেন্টও করতে পারবে, ৯ পার্সেন্টও করতে পারবে- যার যার কস্টিং অনুসারে তারা সুদ হার নির্ধারণ করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখানে আশ্বস্ত করেছে এটাই যে, যতই বাড়ুক ১৪ এর ওপরে যাবে না। অন্যদিকে ডলার রেট ১১৭ টাকা নিয়ে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ইফ দেয়ার ইজ এনি আন্ডারহ্যান্ড ডিলিংস...সঙ্গে সঙ্গে উনাকে (গভর্নর) কমপ্লেইন করতে বলেছেন, তিনি সরাসরি অ্যাকশনে যাবেন।

বার্তা২৪.কম: এসএমই’র ১% সার্ভিস চার্জ রহিতকরণ ও একক গ্রাহক ঋণসীমা নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে...

আমিন হেলালী: এসএমই’র ক্ষেত্রে সব ব্যাংকগুলো ১% সার্ভিস চার্জ কেটে নিয়ে যাচ্ছিল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে-এনিয়ে অনেক দিন ধরে আমরাও কথা বলে আসছিলাম, অস্পষ্টতা কাটছিল না। তবে এই মিটিংয়ে তিনি আমাদের স্পষ্ট করলেন, এমএমই’তে ১ পার্সেন্ট যে সার্ভিস চার্জ কেটে নেয় এখন থেকে আর কাটতে পারবে না। এটা অলরেডি রহিত করেছে। একক গ্রাহক ঋণসীমা যেটি ১৫% ছিল, আমাদের দাবি ছিল ৩০% করে দেওয়ার জন্য। সেই জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘৩০ পার্সেন্ট না, ২৫ পার্সেন্ট করতে পারব। এর বেশি করা যাবে না, কারণ তাহলে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়ে যাবে।’ কমপ্লায়েন্সে থাকতে হলে ২৫% ম্যাক্সিমাম, সেটা তিনি শিগগিরই প্রজ্ঞাপন দিয়ে দেবেন।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে ডলার ডিভ্যেলুর কারণে যেসব বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে, সেখানে রেগুলেশনের মাধ্যমে যার যত ক্ষতি হয়েছে-কারও হয়ত ১০ কোটি টাকা হল, কারও ৫ লাখ টাকা বা কারও ৫০০ কোটি টাকা হল..ডলার যখন ৮৫ টাকা ছিল সেটা ১১০ টাকা করার পরও যখন লস হওয়া শুরু হল, তখন পেমেন্ট দিতে হয়েছে বেশি-ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে যা লস হয়েছে তা আলাদা ভাবে দীর্ঘমেয়াদী পেমেন্টের ব্যবস্থা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন। কিস্তির ক্ষেত্রে ৬ মাসের যে বিষয়টি ছিল তা ৩ মাস করেছে, আমরা সেটিকে আবারও ৬ মাস মেয়াদী করতে বলেছি। গভর্নর বলেছেন, আন্তর্জাতিক যে কমপ্লায়েন্স আছে তাতে স্ট্যান্ডার্ড ৩ মাসের বেশি করা যায় না। আমরা জানিয়েছি, এতে আমাদের সমস্যা হয়ে যাবে, ঋণখেলাপি বেড়ে যাবে। তিনি এ বিষয়ে বলেছে, নতুন কি কৌশল করে এই অসুবিধা নিরসন করা যায় তা তিনি দেখবেন।

বার্তা২৪.কম: এসএমই’তে কমপ্লায়েন্স সুবিধা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী বলছে?

আমিন হেলালী: বর্তমানে সবার জন্য ব্যাংকিং যে পলিসি এসএমই’র জন্যও তাই। কিন্তু এসএমই’র স্টেকহোল্ডার যাঁরা তারা তো কর্পোরেটদের মত কমপ্লায়েন্স এর সুবিধা নিতে পারছে না। তাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। বিষয়টিও তিনি (গভর্নর) সিরায়াসলি দেখবেন বলেছেন, কিভাবে এসএমই-দের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা বা কমপ্লায়েন্সের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন তৈরি করা যায়। তিনি জানালেন, এসএমই’র জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৫ হাজার কোটি টাকা আছে। কিন্তু আমরা বলেছি, এই ২৫ হাজার কোটি টাকা থাকলে কি হবে-২৫ টাকাও তো এসএমই ভোগ করতে পারবে না-যে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন আছে তার কারণে প্রকৃত স্টেকহোল্ডারা তা পারবে না। বড়রাই এসএমই সেজে একাই এগুলো ভোগ করে ফেলবে। গভর্নর আমাদের কথা বিবেচনায় নিয়েছেন এবং বলেছেন, উনি বিষয়টি দেখবেন, কি কৌশল নিয়ে এসএমই-কে বিকশিত করা যায় স্মল এবং স্টার্টআপ-দেরকে নিয়ে।

বার্তা২৪.কম: গভর্নর ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই দীর্ঘ আলোচনায় আপনারা কতটা আশ্বস্ত হতে পেরেছেন?

আমিন হেলালী: প্রতিটি বিষয়ে তিনি (গভর্নর) আমাদের কথা শুনেছেন এবং কথা বলেছেন, আমি মনে করি এটি পজেটিভ দিক। উনি আরও একটি কথা মেনশন করেছেন, ‘দেখুন, বেসরকারি খাত যদি না টিকে থাকে, তাহলে আমাদের কাজটা কি? আপনাদের যদি সঠিক গ্রোথ হয়-তাহলে সরকারের ট্যাক্স বাড়বে। ট্যাক্স বাড়লে উন্নয়ন বাড়বে, আমরা যারা চাকুরি করি আমাদের বেতন বাড়বে। এগুলো মাথায় রেখেই আমরা চেষ্টা করছি’-এগুলো বলেছেন।

আমরা মনে করি, সরকারি লোক যারা আছেন তারাই কিন্তু পলিসি ড্রাফট করেন। বেসরকারি খাতের সঙ্গে কথা বলে যদি পলিসি হয়; তাহলে তা ওয়ার্কেবল হয়। আমি মনে করি এগুলো পজেটিভ দিক। আমরা আমাদের সমস্যা নিয়ে বার বারই মিটিং করতে পারব। সমাধান উভয় পক্ষ মিলে কিভাবে করা যায় সেই রাস্তাও বের করা যাবে।

বার্তা২৪.কম: আইএমএফ’র পরামর্শেই বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মূল্য একলাফে ৭ টাকা বাড়াতে বাধ্য হয়েছে শেষ মুহূর্তে এসে, এই দাবি করছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রশ্ন হচ্ছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমদানি-রফতানিতে প্রভাব কতখানি পড়ছে?

আমিন হেলালী: কথাটা ফেলে দেওয়ার মত নয়। আমরা যেহেতু নিম্ন আয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে এখন মধ্যম আয়ে গ্রেজুয়েশন নেব; একারণে আমাদের ওপর অনেক কমপ্লায়েন্স ভর করছে। এটা ভয় পেলে হবে না। নিয়মের মধ্যে চললে কিন্তু সব সময় লাভবান হওয়া যায়। যদি নিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশের প্রধান সম্পদই হচ্ছে মানবসম্পদ। আমরা নিয়ম যদি পালন করতে পারি, আমাদেরকে কেউ পিছে ফেলতে পারবে না। আমাদের কাছে আসতেই হবে। পৃথিবীর সর্বত্রই মানবসম্পদের সংকট, তাদের কাজের লোক নেই। আমাদের কাজের লোক আছে। নিয়ম আমাদের পালন করতেই হবে, আমি নিজেও তা এডমিট করি।

বার্তা২৪.কম: অর্থনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে বড় সংকটটি কোন জায়গাতে বলে মনে করেন?

আমিন হেলালী: আমরা এফবিসিসিআই এর পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমাদের এসোসিয়েশন-চেম্বারকে কমপ্লায়েন্স করতে। হ-য-ব-র-ল ভাবে অর্থনীতি এই জায়গায় আসছে। অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। আমাদের যে রেভিনিউ, এনবিআর এর যে রেভিনিউ কালেকশন-তাদের টার্গেটই ৭ %। বাস্তবায়ন কতটুকু হবে কে জানে? আমরা এতবড় একটা অর্থনীতির দেশ। স্ট্যান্ডার্ড হল মিনিমাম ২২-২৩%। নেপালের মত দেশে ১৪-১৫%। এটা কার ব্যর্থতা? আমি মনে করি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, এনবিআর এর ব্যর্থতা এটা। ২০০৯ সালে ৯০ বিলিয়নের অর্থনীতি ছিল, তখন তাদের যে পরিকল্পনা ছিল, তারা (এনবিআর) এখনও সেখানেই আছে। বর্তমানে অর্থনীতির আকার হয়েছে ৪৭০ বিলিয়ন। এনবিআর সেই জায়গায় তাদের জাল বিস্তার করতে পারেনি। সেই জায়গাগুলো আয়ত্বে আনতে পারেনি কারণ হয়ত তারা রেভিনিউ কালেকশনের চাপে থাকে। যারা রেভিনিউ দেয় তারা খোঁজে খোঁজে তাদের কাছেই যায়। বর্তমানে আয়কর সাবমিট করেছে মাত্র ৩৭ লাখ। এর মধ্যে ২১ লক্ষ সরকারকে কর দিয়েছে।

বার্তা২৪.কম: এনবিআর’র বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ আবারও প্রকাশ্যে এল। সম্প্রতি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ব্যবসায়ী নেতারা এর প্রতিকারও দাবি করেছেন। গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি এসেছে কী?

আমিন হেলালী: গভর্নর এবিষয়ে বলেছেন, আপনারা যারা কাঁচামাল আমদানিকারকদের জন্য ডলারের কোনো কমতি পড়বে না। আমরা গভর্নরকে সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, যারা প্রতারণা করে টাকা নিয়ে গেছেন ব্যাংক থেকে এবং বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, আপনি তাদের চিহ্নিত করুন। আমরা আপনাকে সহযোগিতা করব। আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা আপনার সঙ্গে আছি।

তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে সরকার প্রধানের। আমি কারও চোখ রাঙানি দেখতে পারব না। কারোর যদি এ সংক্রান্ত কিছু ধরা পড়ে, ছাড় দিব না। তিনি বলেছেন, টুকটাক এদিক-সেদিক হবেই, মেজর যে ঘাপলা ছিল তা পুরোপুরি স্টপ আছে। মানি লন্ডারিংয়ের যে কয়েকটি ঘটনা, ওভার ইনভেস্টমেন্ট...যে জিনিসের দাম ১০০ ডলার, তার অনুকূলে ৩০০ ডলার এলসি করে; ২০০ ডলার পাচার ঘটনাও অনেক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের চিহ্নিত করেছে বলে জানানো হয়েছে। ওই জায়গাগুলো যেন আর ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়, অতীতে যা হয়েছে তা আছে নথিভূক্ত কিন্তু ভবিষ্যতে আর হবে না, একথা বলেছেন গভর্নর।। আমাকে উনাকে বলেছি, এগুলো লিস্ট করেন এবং আমাদেরকেও দেন। আমি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্তরেও এসব কথাগুলি বলি, কারণ আমাদের অধিকার আছে, কেননা আমরা সঠিকভাবে ব্যবসা করতে চাই। দোষ নিতে চাই না।

বার্তা২৪.কম: এনবিআর’র হয়রানিতে রফতানিখাত বাধাগ্রস্ত হয় এই অভিযোগ রয়েছে...

আমিন হেলালী: পূর্বেও উল্লেখ করেছি, ৯০ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতির যে কাঠামামো ছিল, যে প্ল্যান ছিল- তা দিয়ে ৪৭০ বিলিয়নের অর্থনীতিকে কন্ট্রোল করতে চাইলে হবে? আপনার সক্ষমতা আছে ১০০ টাকা ডিল করার, কিন্তু যদি আপনার হাতে হাজার টাকা আসে তা কিভাবে আপনি ডিল করবেন? সেটা ব্যবস্থাপনা করতে আপনাকে নিশ্চয়ই সিস্টেম করতে হবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪৭০ বিলিয়ন ডলার নয়; যেহেতু আমি ফেডারেশনে সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ওঠাবসা করি তারই প্রেক্ষিতে বলছি, আমাদের ইনফর্মাল যে অর্থনীতি যা রাষ্ট্রীয় হিসাব নিকাশের মধ্যে আসছে না। ঘুষ-দুর্নীতি বা অন্যান্য ইস্যু, রোজার সময় আমরা যে জাকাত দিই-এসব কোনো রাষ্ট্রীয় হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে না। আমি মনে করি, আমাদের অর্থনীতির যে বহুবিধ মাত্রা আছে, অর্থনীতিবিদদের থিওরি সেখানে কাজে লাগছে না। তারা এসব বিষয় বিবেচনায় আনছেন না। এগুলোকে যদি মেইনস্ট্রিম করতে পারি, তাহলে আমাদের বাজেট আট লক্ষ কোটি কেন হবে; আমি মনে করি ১৬ লক্ষ কোটি হবে। রেভিনিউ ইনকাম যদি ৩ লক্ষ কোটি থেকে বাড়িয়ে আট লক্ষ কোটি হয়-তাহলে অনায়াসেই ১৫ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট করতেই পারি। এনবিআর কঠোর হচ্ছে শুধু যারা দৃশ্যমান ব্যবসার মধ্যে আছে তাদেরকে প্রতি। নতুন যারা আসছে তারা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। কেউ নতুন একটা ব্যবসা খুলবে, নতুন কোন স্টার্টআপ আসবে-তখন তারা (এনবিআর) যেসব নিয়ম-কানুনের ফর্দ লাগিয়ে দিচ্ছেন-সেই ভয়ে এখন আর কেউ বিনিয়োগে যাচ্ছে না। এনবিআর’কে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনায় আসতে হবে। যেটা হয়ে গেছে তাকে কিভাবে সারফেইসে আনবে সেটা চেষ্টা করুক, ডিস্টার্ব না করুক। সবাই ইনকাম ট্যাক্সটা দিতে চায়। কেউ হয়ত ৭ বছর ধরে কাজ করে, সেও চাইবে ট্যাক্স দিয়ে স্বচ্ছ হয়ে যেতে। কিন্তু যখনই কেউ দিতে যাবে, তখন হয়ত সংশ্লিষ্ট কেউ বলবে-‘আপনার বিগত দিনের সবকিছু অডিট হবে। সব ফেরত দিতে হবে। তারচেয়ে আসেন দেওয়ার দরকার নেই। একলা একলা ডিল করে ফেলি।’-আপনি যা ইনকাম করে খরচ করে ফেলেছেন তার ওপর যদি করারোপ করে তাহলে কেউ কর দিতে আসবে না। তাই এনবিআরকে করদাতাবান্ধব হতেই হবে।

গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আধুনিকায়নে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আধুনিকায়নে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব

গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আধুনিকায়নে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব

  • Font increase
  • Font Decrease

পাম্প অচল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি খালের ডাইক নষ্ট হয়ে যাওয়া ও পলি জমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১.৪২ লাখ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য জমির পরিমাণ নেমে এসেছে ৯৫.৬২ হাজার হেক্টরে।

ক্রমেই সক্ষমতা কমতে থাকা দেশে এক সময়ের সর্ববৃহৎ এই সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১.৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ দেওয়া হয়েছে, যা এর পরের দুই অর্থবছরে ছিল ৪০ হাজার হেক্টরের মতো।

চলমান সমস্যার সমাধান করে খুলনা জেলার সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রাণ ফেরাতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে পরিকল্পনা কমিশনে “গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন” শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে প্রস্তাবটি পুনর্গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশের আলোকে পুনর্গঠন করা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে আসলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপউবো)।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুলনা বিভাগের চার জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের ১৩টি উপজেলাকে সেচের আওতায় এনে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৫৪ সালে হাতে নেওয়া হয় জিকে সেচ প্রকল্প।

১৯৫৫-৫৬ সালে শুরু হয়ে জিকে প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শেষ হয় ১৯৬৯-৭০ সালে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করা হলে এর আওতায় আসে প্রধান তিনটি খাল, ৪৯টি শাখা খাল ও ৪৪৪টি উপশাখা খাল।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রধান পাম্পের দুটিই বর্তমানে অচল অবস্থায় রয়েছে। নিয়মিত মেরামত কাজের মাধ্যমে অন্য একটি পাম্প সচল রাখা হয়েছে। তা ছাড়া সময়ের সঙ্গে এই সেচ প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, শুষ্ক মৌসুমে প্রধান খালগুলোর পানি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ মিটার নিচে চলে গেলে প্রধান পাম্প কাজ না করায় সাবসিডিয়ারি পাম্প ব্যবহার করা হয়।

তবে ২০০৪-০৫ সালে নষ্ট হয়ে যাওয়া সাবসিডিয়ারি পাম্পগুলো মেরামতের অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় পানির স্তর নিচে গেলে সেচ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

নতুন প্রকল্পটির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বলা হয়েছে, সেচ প্রকল্পের ৪৯টি শাখা খালের মধ্যে ২০টির ডাইক সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায় সেগুলো দিয়ে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। বাকি ২৯টির ডাইক আংশিক নষ্ট।

অন্যদিকে ৪৪৪টি উপশাখা খালের মধ্যে ২০৮টিই পলি মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উপশাখা খালগুলো দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

সব মিলিয়ে জিকে সেচ প্রকল্পের বর্তমান সেচযোগ্য এলাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৬১৬ হেক্টরে।

প্রকল্পের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জিকে সাবসিডিয়ারি পাম্প হাউজ নির্মাণের পাশাপাশি পাম্প হাউজের উৎস মুখ থেকে প্রধান সংযোগ খাল পুনর্খনন।

ভেড়ামারা উপজেলার প্রধান সড়ক থেকে সাবসিডিয়ারি পাম্প হাউজ পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।

জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান খালগুলোর পুনরাকৃতিকরণ, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সেচ খাল খনন এবং পানি নিস্কাশন খালও পুনর্খনন করা হবে।

সবগুলো খাল পুনর্খনন করা হলে সেচযোগ্য এলাকা আগের পরিমাণে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রকল্পের প্রস্তাবে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও খাল ভরাট হওয়া, পাম্প নষ্ট হওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি আগের মতো কার্যকর নেই। নতুন করে খাল খননসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে আবার জিকে সেচ প্রকল্পটি সবার কাজে লাগবে।

তিনি জানান, পিইসি সভায় বেশকিছু সুপারিশ দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সব সুপারিশ প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রস্তাবটি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে একনেকে উপস্থাপনে করা হতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

;

সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ, এটিএম বুথে টাকার স্বল্পতা ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বুধবার (২৪ জুলাই) ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, বাকি টাকা নিয়েছে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ধার নেওয়া এই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে থাকা হিসাবে ঘাটতি ও নগদ জমায় (সিআরআর) ঘাটতি হিসেবে ব্যবহার করে অনেক ব্যাংক। আবার অনেক ব্যাংক নগদ টাকা নিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটায়। সাম্প্রতিক সময়ে নগদ টাকার চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। ব্যাংক শাখার পাশাপাশি এটিএমগুলোতেও নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবারের ব্যাংকিং কার্যক্রমের পর পাঁচ দিনের ছুটি শেষে গত বুধবার ব্যাংকগুলো খুলেছে। শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির পর রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিন দিন সাধারণ ছুটি ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সহিংস হওয়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বুধবার (২৪ জুলাই) বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এই নিলামে ৭ দিন মেয়াদী রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদী রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদী রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা দেয়া হয়।

এছাড়া, বুধবার ১৮০ দিন মেয়াদী অ্যাসিউরড রেপোর আওতায় তিনটি ব্যাংককে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং ১ দিন মেয়াদী অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্টের আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদী ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় একটি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে পাঁচটি ইসলামী ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে বুধবার ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সাতদিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৪ দিন মেয়াদে সুদহার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদী টাকা ধারের সুদহার ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ ছাড়া, অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে।

এছাড়া ইসলামী ধারার ব্যাংকের মুনাফার হার সাড়ে ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২৮ দিন মেয়াদী ইসলামী ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত ধরা হয়েছে।

;

আন্দোলনের পর গ্যাস সংকটে ব্যাহত শিল্প উৎপাদন



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: গ্যাস কূপ

ছবি: গ্যাস কূপ

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানী ঢাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকায় গ্যাস সংকট আবারও বেড়ে গেছে। যেখানে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ পাওয়ার কথা সেখানে পাওয়া গেছে আড়াই থেকে ৪ পিএসআই।

জেনারেটর চালাতে গেলে কমপক্ষে ৬ পিএসআই চাপ প্রয়োজন। সেই চাপ না থাকায় অনেক বিড়ম্বনায় শিকার হন শিল্পো উদ্যোক্তারা। কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে বন্ধ থাকা শিল্প কারখানা খুললেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেক এলাকায় গ্যাসের চরম সংকটের খবর পাওয়া গেছে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তবে ঢাকার তুলনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা ভালো থাকার খবর পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকায় অবস্থিত একটি শিল্প কারখানার জেনারেল ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করাল শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, জেনারেটর চালাতে গেলে কমপক্ষে ৬ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) চাপ প্রয়োজন হয়। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাড়ে ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। বিকেলের পর সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া, গাজীপুর এলাকায় ৪ থেকে ৫ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ পাওয়া গেছে। আমাদের সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ১৫ পিএসআই চাপ পাওয়ার কথা। চাপ কম থাকায় যানবাহনে গ্যাস দিতে সময় লাগছে বেশি এতে করে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৩ থেকে ৪ পিএসআই চাপ থাকলে সিলিন্ডারে এক-তৃতীয়াংশের বেশি লোড হওয়ার কথা না। তবে যদি একটু সময় নিয়ে সিএনজি দেওয়া হয় তাহলে কিছুটা বেশি পাওয়ার কথা।

একদিকে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন কমে আসছে, অন্যদিকে আমদানিকৃত গ্যাসের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যেতে। মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। উৎপাদন কমতে কমতে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। সংকট সামাল দিতে বিদেশ ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এলএনজি আকারে) গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।

দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানি করা হয়। ঘুর্নিঝড় রিমালে সামিট গ্রুপের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই এফএসআরইউটি (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারাদেশেই তার প্রভাব পড়েছে। ১৫ জুলাই নাগাদ চালু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মেরামত না হওয়ায় এখনও সার্ভিসের বাইরে রয়েছে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ৩০ জুলাইয়ের দিকে আসতে পারে। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে অনেক ঝুঁকি। সমাধান হচ্ছে ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল। আমাদের সেদিকে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরশীল হতে চাই না, তবে সবপথ খোলা রাখতে চাই। এজন্য এলএনজি আমদানির পাশাপাশি দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জোর দেওয়া হচ্ছে। ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছি এতে সাড়ে ৬শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়বে, আবার একই সময়ে কিছু কূপের উৎপাদন কমে যাবে। আরও ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে লক্ষ্য ছিল শতভাগ বিদ্যুতায়ন, আমরা সফল হয়েছি। এখন লক্ষ্য হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। এটা করতে হলে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

মজুদ বিবেচনায় সবচেয়ে বড় গ্যাস ফিল্ড বিবিয়ানার উৎপাদন প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ১৫ নভেম্বর গ্যাস উত্তোলন করা হয় ১৩৩৪.৯ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের বছর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর উৎপাদন নেমে আসে ১২৪৬.৮ মিলিয়নে। আর বর্তমানে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুটের আশপাশে রয়েছে। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন হ্রাসের জন্য অনুসন্ধানে স্থবিরতাকে দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

;

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায়

বেনাপোলে ৬ দিনে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি শত কোটি টাকা



সিনিয়র করেসপন্ডডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: বার্তা২৪, বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম৬ দিন বন্ধে ক্ষতি শত কোটি টাকা

ছবি: বার্তা২৪, বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম৬ দিন বন্ধে ক্ষতি শত কোটি টাকা

  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তদের নাশকতার কারণে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থেকে এবং শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটির টাকার মতো অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় সরকার ১শ ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ফের চালু হওয়ায় বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের আমদানি, রফতানি বাণিজ্য ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম কিছুটা শুরু হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) থেকে বাণিজ্য কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।

এর আগে কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা ডাটা সেন্টারে আগুন দেওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) থেকে সারাদেশে বিচ্ছিন্ন ছিল ইন্টারনেট পরিষেবা।

এদিকে, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের দুইদিকে প্রায় ৩ হাজার ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছিল। ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় এসব ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে বেনাপোল স্থলবন্দরে।

ভারত থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক অমিত জানান, ইন্টারনেট চালু হওয়াতে তারা বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন। গত ৬ দিন পেট্রাপোল বন্দরে আড়াই হাজারের বেশি ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল বলে জানান তিনি।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সচল হওয়ায় আটকে থাকা পণ্য বন্দর থেকে খালাস শুরু হয়েছে। তবে কাজে খুব ধীরগতি। ইন্টারনেট স্বাভাবিক না হলে বাণিজ্য পুরোদমে চালানোর সুযোগ নেই।

আমদানিকারক সাহেব আলী জানান, গত চারদিনে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জরুরি কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ থাকায় শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। অনেকের ধারণা, এসবের ক্ষতি ১শ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৬শ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি ও ২শ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি হয়ে থাকে।

আমদানি পণ্য থেকে দিনে সরকারের রাজস্ব আসে ৩০ কোটি টাকার মতো। গত ৬ দিন আমদানি বন্ধে প্রায় ১শ ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কমেছে। এছাড়া আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ৬০ হাজার মেট্রিক টনের মতো।

বড় ক্ষতির মুখে পড়ে রফতানি বাণিজ্যও। করোনার ক্ষতি না কাটতেই আবার বাণিজ্যে এই ক্ষতি আগামী বছর রাজস্ব আয় ও আমদানি বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানিয়েছেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সার্ভার বিকল ছিল চারদিন। এতে বন্দরের স্বাভাবিক বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে।

বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ায় তারা কিছুটা বাণিজ্যিক কাজ সম্পাদন করতে পারছেন। ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুত পণ্য খালাস নিতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

;