নির্বাচিত হলে ই-কমার্স খাতের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) নির্বাচনে অংশ নেওয়া ‘অগ্রগামী’ প্যানেলের লিডার ধানসিঁড়ির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শমী কায়সার।
তিনি বলছেন, নির্বাচনে জিততে পারলে সদস্যদের উন্নয়নে সাপোর্ট সেন্টার করবেন। খাতটিকে শৃঙ্খলায় ফেরাতে যেসব নীতি তৈরির কাজ চলছে, সেইসব নীতি তৈরিতে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করে নীতিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন। একইসঙ্গে সদস্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাও করবেন। খুব শিগগিরই শুরু করবেন ই-কমার্স খাতের ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৫ জুন) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্যানেলের নতুন এজেন্টা বিষয়ে শমী কায়সার বলেন, নীতিমালা পর্যায়ে আমরা নতুন কিছু কাজ করতে চাই। কিছু নীতির সংস্কার ও নতুন কিছু নীতি করতে চাই। এর মধ্যে রয়েছে ‘ক্রস বর্ডার পলিসি’। বাংলাদেশে বসে থাকলেও সারাবিশ্বই কিন্তু আপনার মার্কেট। সে কারণে ক্রস বর্ডার পলিসি প্রয়োজন। তবে এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা তৈরি করতে হবে, এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। ক্রস বর্ডার পলিসি করতে পারলে ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সারাবিশ্বই হবে আমাদের বাজার। নারীদের জন্য আমরা কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনব। কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল গঠনের কাজ চলছে। এর মূল কাঠামো এটুআইয়ের তৈরি, যা বাস্তবায়ন করছে সরকার। ই-ক্যাব তাতে সহায়তা করছে। এছাড়া অটোমেশন ও স্বচ্ছতা বাড়াতে এস্ক্রো সিস্টেমের কাজ চলছে। এর ফুল অটোমেশনের কাজ করছে এটুআই। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে অর্থের লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকবে। আরেকটি বড় জায়গা হবে সেন্ট্রাল লজিস্টিক সেল। এর বাইরে একেবারেই নতুন যে কাজটি করতে চাই, সেটি হচ্ছে বিজনেস সাপোর্ট সেন্টার। আমরা এক বছর ধরেই এর কথা ভাবছি। করেনার মধ্যে দেখেছি, আমাদের অনেক নতুন উদ্যোক্তা এই খাতটিতে যুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, সদস্যদের ডিজিটাল লিটারেসি দরকার। অনেক সময় এনবিআরের কিছু ইস্যু থাকে। এই কাজগুলো আমরা বিজনেস সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে করতে চাই। সদস্যদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য মেম্বারশিপ সাপোর্ট সেন্টার করা হবে। সেটি আমরা সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করে দেবো। করোনার আগে মেম্বারদের সঙ্গে আমাদের যে আড্ডা হতো, আমরা সেক্টর ধরে ধরে প্রতিমাসে একটি আড্ডার আয়োজন করব। ফান্ডিং নিয়েও আমরা কাজ করব।
দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে আইন প্রণয়ন হচ্ছে জানিয়ে শমী কায়সার বলেন, যখন শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছিল, তখন আমরাই বলেছিলাম দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দেওয়া খুব প্রয়োজন। এখন বিশ্বায়নের যুগ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আসবে। এ অবস্থায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য আমরা এরই মধ্যে বাণিজ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। পুরো আইনটি যখন তৈরি হবে, তখন দেশীয় প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা পাবে।
দেশের ই-কমার্স খাত প্রতিদিনই জনপ্রিয় হচ্ছে জানিয়ে শমী কায়সার বলেন, কিছুদিন আগেও প্রতিদিন ২ লাখ ৭০ হাজার ডেলিভারি ছিল। এখন প্রতিদিন তিন লাখ ডেলিভারি হচ্ছে। অর্থাৎ কেনাকাটা কমেনি। আমার মনে হয়, প্রতিদিনই শিল্পটির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তা না হলে ২২ হাজার কোটি টাকার মার্কেট হতো না। কিছু স্ক্যাম হয়েছে, সেটি আমরা কাটিয়ে উঠেছি। এ কারণেই কিন্তু আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি স্ট্যার্ন্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) করেছি। সবাই এখন নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে। আমাদের এখন ইন্ড্রাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং করতে হবে। খুব শিগগিরই আমরা ইন্ড্রাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ শুরু করব।
নিজেদের সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে করোনার সময় প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম ই-ক্যাব সদস্যদের জন্য। ১০০টি কোম্পানির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল, এর মধ্যে ঋণ পেয়েছে ৩৪টি কোম্পানি। তারা নিতে পেরেছে, কারণ তাদের কাগজপত্র ঠিক ছিল। ই-কমার্সকে একটি খাত হিসাবে চিহ্নিত করার কাজটি আমরা করছি। ব্রাক ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের একটি এমওইউ হয়ে আছে। এগুলো বড় অগ্রগতি।
শমী কায়সার আরও বলেন, সদস্যদের উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে নীতি প্রণয়নে সরকারকে যেমন সহযোগিতা করব, পাশাপাশি এই খাতের উন্নয়নে সেই নীতি বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। সদস্যদের ব্যবাসয়িক উন্নয়নে সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
শমী কায়সার ই-ক্যাবের বর্তমান সভাপতি, এর আগেও একবার সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ৯টি পরিচালক পদে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসাবে হ্যাটট্রিক করবেন। আগামী ১৮ জুন ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) নির্বাচনের ভোট হবে। নির্বাচনে এবার ভোটার ৭৯৫ জন।