পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় ২৮ লাখ বিনিয়োগকারী

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 01:07:28

চলমান দরপতনে আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারে এখন রক্তক্ষরণ চলছে বাজার সংশ্লিষ্টদের। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দরপতন এখন ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে আরেক দফা ধসের রূপ নিয়েছে। নতুন এ ধসে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর এখন একটাই প্রত্যাশা, ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে নতুন ধসের শুরু হয়েছে। সেদিন থেকে ২০ এপিল পর্যন্ত মোট ৫৬ কার্যদিবস উভয় বাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ কার্যদিবস উত্থান আর ১৯ দিন পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। 

তাতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজি হারানোর ভয়ে চরম আতঙ্কে আছেন। আর তাতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোরও লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারে এই রক্তক্ষরণের জন্য দায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ২০১০ সালের পর টানা আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না করে নিজের চেয়ারম্যান পদটি স্থিতিশীল রাখতে ব্যস্ত রয়েছেন। 

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সব ধরণের দুর্নীতিকে প্রশ্নয় দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য সঠিত কমিশন বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কেড়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছে। আর তার খেসারত দিচ্ছে বাজার।

ব্রাক ইপিএলের বিনিয়োগকারী ইমতিয়াজ আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘২৪ বছর ধরে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ সময়ে অনেক চেয়ারম্যানকে আসতে যেতে দেখেছি। কিন্তু বর্তমান কমিশনের মতো কোনো কমিশন দেখিনি।’

তিনি বলেন, ‘এ কমিশনের আমলে গত আট বছরের যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। তার বেশির ভাগ কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।’

বিএসইসির বর্তমান কমিশনের মদদে ২০১০ সালের মতোই আবারও অবৈধ প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের আরও একটি বাজার তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গত আট থেকে নয় বছরের পুঁজিবাজারে ভালো কোনো কোম্পানি আসেনি। বরং এ সময় বাজারে শতাধিক কোম্পানির বেশির ভাগই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ভালো শেয়ারের সরবরাহ না থাকায় বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় প্লেসমেন্ট ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।’ এছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টরের নেতিবাচক অবস্থারও পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে দরপতনের প্রতিবাদে ব্রোকারেজ হাউজ ছেড়ে আবার রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা। আর তা দেখে সরকার পক্ষ থেকে কমিশনকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেবল সজাগ হয়েছে। তারা বাজারের সমস্যা নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টএক্সচেঞ্জের পাশাপাশি বাংলাদেশ মাচেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তবনা কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। কমিশনও এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা দূর করতে হবে। নতুন ফান্ডের যোগান দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সংস্কার, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সময় সীমা বাড়ানো ও প্লেসমেন্ট বাণিজ্য বন্ধসহ পুঁজিবাজারে জন্য বিশেষ প্রণোদনার ডিএসইর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছি কমিশনকে।

কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থে প্রস্তাবনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন বলে ডিএসইকে আশ্বাস দিয়েছেন।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য মতে, দুই পুঁজিবাজারে ২৮ লাখ ৪৭ হাজার বিনিয়োগকারী রয়েছে। বাজারের এই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা একটাই, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর