গভীর অন্ধকারে পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 09:15:41

এক বছর দরপতনের পর অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ইতিবাচক কোনো সংবাদ না থাকায় বিনিয়োগকারীদের সব প্রত্যাশা মাটিতে ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে নতুন বছরে লেনদেন হওয়া দিনগুলোতে সূচক ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের মূলধন উধাও হয়েছে ১৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন পুঁজি হারানোর হাহাকার। নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে আরও বেশি পুঁজি হারানোর।

বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ কর্তৃপক্ষ এবং সরকার মহলের কেউ বলতে পারছে না পুঁজিবাজার ভালো হবে কিনা। ফলে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এমডি নিয়োগ নিয়ে গ্রুপিং। তাতে বাজারে সংকট আরও বেশি বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা ও তারল্য সংকটে গভীর অন্ধকারে থাকা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে এখনই উচিৎ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। প্রয়োজন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট জায়গায় সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। না হলে দেশের পুঁজিবাজার নিঃশেষ হয়ে পড়বে।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর পরিচালক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেই লস। আর ব্যাংকের সুদের হার বেশি। ফলে বিনিয়োগকারী কম ঝুঁকিতে বেশি লাভে ব্যাংকে বিনিয়োগ করছে।

তিনি বলেন, টানা এক বছর দরপতনে গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মাসহ ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। পাশাপাশি আইপিওতে আসা কোম্পানির লক ইন শেয়ারগুলো ফ্রি হওয়ার চাহিদার তুলনায় শেয়ার বেশি সাপ্লাই হয়েছে। আর খারাপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় প্যানিক হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন। ফলে মন্দার কবলে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে আস্থা ও তারল্য সঙ্কটে তলানিতে থাকা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল গ্রামীণফোন এবং বিটিআরসির দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি, সরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করাসহ ১১ প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে দিয়েছে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ।

বাকিগুলো হচ্ছে-পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা, টি-বন্ডের লেনদেন যথা শিগগির চালু করা, ডিএসই এবং পুঁজিবাজারের লেনদেনের ওপর কর কমানো, অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বাজার উন্নয়নে আইসিবি ও অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিশ্চিত করা, বাজারে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন এবং ঋণ প্রস্তাবের বিশেষ বিবেচনা।

কিন্তু অর্থমন্ত্রী এই দাবিগুলোর কোনোটাই যৌক্তিক মনে করেননি। তাই সান্ত্বনা স্বরুপ ডিএসইর পর্ষদকে বলেন, আমরা যৌক্তিক কারণগুলো বিবেচনা করবো।

ডিএসইর আরেক পরিচালক বলেন,পুঁজিবাজারে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী বিএসইসির কশিনার এবং ডিএসইর নেতাদের পছন্দ করেন না। এই কারণে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। তিনি বলেন, বর্তমান বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং তিন কমিশনার পদত্যাগ করলেই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

ডিএসইর তথ্য মতে, নতুন বছরে ৬ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ চার কার্যদিবসেই বড় দরপতন হয়েছে। তাতে সূচক কমেছে ২২৪ পয়েন্ট। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। লেনদেন হয়েছে গড়ে ২শ কোটি টাকা। আর তাতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ১৩ হাজার ১২৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার টাকা হারিয়েছে। এর মধ্যে বুধবার ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৫৩ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো মধ্যে দাম বেড়েছে ৫১টির, কমেছে ২৪৯টির অপরিবর্তিত রয়েছে ৫১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। একইভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বিনিয়োগকারীদেরও ক্ষতি হয়েছে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর