বাণিজ্য মেলা থেকে: জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২০। এবার মেলার ২৫তম আসর বসেছে। শুরু থেকেই মেলার প্রায় সব স্টল-প্যাভিলিয়নেই বিভিন্ন রকমের ছাড় দেয়া হচ্ছে। মেলার শেষের দিকে এর পরিমাণ আরও বেড়েছে।
অর্ধেক দামে কিংবা একটির সঙ্গে অনেকগুলো পণ্য ফ্রি’র মত বিভিন্ন রকম অফারের জোয়ার চলছে মেলায়। পণ্যভেদে দেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৮ বছরের ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি অথবা রিপ্লেসমেন্ট। একটি পণ্যের সঙ্গে একটি, তিনটি, পাঁচটি কোথাও কোথাও ১০টি পর্যন্ত ফ্রি থাকছে।
এমনসব বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে মেলায় পণ্য বিক্রির জাল পেতেছে কতিপয় প্রতারক। বিক্রি বাড়াতে অফারের নামে তারা ক্রেতাদের সঙ্গে করছেন প্রতারণা। আর অসচেতন ক্রেতারাও না বুঝে এসব পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ পণ্যগুলো কিনে হচ্ছেন প্রতারিত।
এছাড়াও চড়া দামে নিম্নমানের খাবার বিক্রির অভিযোগতো আছেই। অসাধু এসব ব্যবসায়ীদের ধরতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এ পর্যন্ত অভিযানে মোট ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভোক্তা অধিকার থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
মেলায় বিভিন্ন প্রতারণা ও অনিয়মের জন্য দুইভাবে জরিমানা করে থাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং অধিদফতরের পরিচালিত নিয়মিত অভিযানে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর আরও জানায়, অধিদফতরের পরিচালিত নিয়মিত অভিযানে হক এন্টারপ্রাইজ, এস এম এন্টারপ্রাইজ, ডিজনি ইতালি, মেসার্স থাই কর্নার, বেস্ট বাই, ফরেন প্যাভিলিয়ন, লেকমি, নাদিয়া ভ্যারাইটিজসহ ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। আর ৪৩টি মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এস এস ট্রেড, হাজীর বিরিয়ানি, ইগলু আইসক্রিম, রংপুর মেটাল, নাহার এন্টারপ্রাইজসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালাক ফাহমিনা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রতিদিন দুটি টিম ভাগ হয়ে মেলায় অভিযান পরিচালনা করছি। যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ক্রোকারিজের সংখ্যাই বেশি। এরা নিম্নমানের পণ্যে বিদেশি ও ব্র্যান্ডের পণ্যের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করছেন। এছাড়া অনেক পণ্যে মূল্য না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমাদের অস্থায়ী ক্যাম্প খোলা রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাবারের স্টলগুলো আগের তুলনায় একটু সংযত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য স্টলে বিরুদ্ধে রোজই কোন না কোন অভিযোগ আসছে।
ভোক্তা অধিকার গবেষণাগারের পরীক্ষক রিয়াদুল ইসলাম বলেন, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) একজন নারীর অভিযোগ পেয়েছি তিনি একটি টিভি কিনে একটি ওভেন ফ্রি পেয়েছেন। পরে বাসায় নিয়ে দেখেন ওভেন আর কাজ করছে না। ওই স্টলের কর্মকর্তারা আমাদের উপস্থিতিতে ওই নারীকে টাকা ফেরত দেন। এগুলো মৌখিক ভাবেই আমরা নিষ্পত্তি করছি। এমন অভিযোগ আমরা রোজই পাচ্ছি। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অভিযোগ একটু কমেছে।
জরিমানার শিকার হওয়া একটি স্টলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা যেসব পণ্য বিক্রি করছি সেগুলোর দাম উল্লেখ করেই বিক্রি করছি এবং ভালো পণ্যই বিক্রি করছি। কিন্তু বাসায় গিয়ে টেস্ট করে অনেক ক্রেতা পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আমরা তো পণ্যটি দেখিয়েই ক্রেতার কাছে বিক্রি করছি।