জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই স্নাতক চতুর্থ বর্ষের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। ফলে মাস্টার্স শেষ পর্বে কোনো বিভাগে আসন খালি নেই ফেনী কলেজে। ফলে প্রিলিমিনারি পাস করা শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স শেষ পর্বের ফাইনালে ভর্তির আবেদন করতে পারছেন না। এতে অনিশ্চিয়তার মুখোমুখি কলেজের ৪৭৭ জন শিক্ষার্থী।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তি ডিসেম্বরেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯-২০ সেশনের প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারির ২৪ তারিখ। এর মধ্যে মাস্টার্সের দুই ধাপে ভর্তি ইতিমধ্যে শেষ। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রিলিজ স্লিপের আবেদন শুরু হয়েছে যার শেষ সময় ৫ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কোন শিক্ষার্থী আবেদন করতে না পারলে মাস্টার্স এ ভর্তি হতে পারবেনা তারা।
প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনলাইনে তারা কোন আবেদন করতে পারছেন না। প্রাথমিক আবেদন করলেও কলেজের আসন খালি না থাকাতে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না। তারা বলছেন, রিলিজ স্লিপের আবেদন শুরু হয়েছে অথচ মেধাতালিকার জন্যও তারা আবেদন করতে পারেন নি। শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীর কোন কলেজে আবেদন করা যাচ্ছে না। ভর্তি হতে হলে কুমিল্লা কিংবা ঢাকা কোন কলেজে ভর্তি হতে হবে।
এ বিষয়ে কলেজের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রতি বছর প্রিলি ও মাস্টার্সের ভর্তি একই সাথে হয়ে থাকে। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি আগে সম্পন্ন করেছে। ফলে নিয়মিত যারা অনার্স শেষ করেছে তারা ভর্তি হয়েছে।কিন্তু প্রিলিমিনারির ফলাফল দেয়া হয়েছে অনার্সের ভর্তির পর। ফলে কলেজের কোন বিভাগেই আবেদন করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। সবগুলো বিভাগের কোটা সম্পন্ন দেখানো হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, নিয়মানুযায়ী একই সাথে আবেদন করা হলে এক বিভাগে যতগুলো আসন রয়েছে তা থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং সে শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু এবার আবেদন প্রক্রিয়া আলাদা হওয়াতে প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছেনা। এছাড়া যেসকল বিভাগে আসন খালি রয়েছে সে বিভাগেও আবেদন করা যাচ্ছেনা।
ফেনী কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের মাস্টার্স পর্যায়ে বাংলা বিভাগে ৯০ টি, ইংরেজি বিভাগে ৫০টি ইতিহাস বিভাগে ৫০টি,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১০০টি, দর্শনে ৫০টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১৫০ টি সমাজকর্মে ১৫০ টি,অর্থনীতিতে ১৫০টি, হিসাব বিজ্ঞানে ১৬০টি, ব্যবস্থাপনায় ১৬০টি, পদার্থবিজ্ঞানে ৫০টি, রসায়নে ৫০টি, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে ৫০ টি, প্রাণীবিদ্যা বিভাগে ৫০ টি এবং গণিত বিভাগে ৫০ টি আসন রয়েছে। যা ইতিমধ্যে বেশিরভাগই পূরণ হয়ে গেছে।
সমাজকর্ম বিভাগের নুরুল করিম নামে একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবার প্রিলির ফলাফল আগে দেয়া হয় পরে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফল দেয়া হয়।এরপরে আবেদনের নোটিশ দেয়। কিন্তু এবার অনার্সের আগে ফলাফল ঘোষণা করে ভর্তির নোটিশ ও দিয়ে দেয়া হয়েছে এতে প্রিলির শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেনা।অনলাইনে কলেজের নাম ও দেখা যাচ্ছেনা।
তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি একজন হলে ফেনীর বাইরে গিয়ে ভর্তি হতে পারতাম কিন্তু এ সমস্যা প্রতিটি শিক্ষার্থীর। সবাই তো বাইরে যেতে পারবেনা। এ বিষয়ে আমাদের দাবি আমাদের যেকোন মূল্যে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।’
ফাহিমা আক্তার ফেন্সি নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ৩২০ টাকা খরচ করে প্রাথমিক আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখন বলছে রিলিজ স্লিপে আবেদন করতে হবে তবে রিলিজ স্লিপে ফেনী কলেজের কোন নাম ই নেই।ফলে আমরা ভর্তি অনিশ্চয়তায় রয়েছি। বিষয়টি সামধান করে ভর্তির সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তিনি।’
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মোক্তার হোসেইন বলেন, শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সামাধানে কলেজ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। এখানে শিক্ষার্থীদের ভুল নেই, তারা ফলাফল পেয়েছে দেরীতে ফলে আবেদন করতেই পারছেনা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি বিষয়টি যাতে দ্রুত সামধান করা যায়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন সেলের সচিব সহকারী অধ্যাপক ড. আলী জাফর চৌধুরী বার্তা-২৪ কে বলেন, ফেনী কলেজের যে আসন সংখ্যা সেটি সম্পন্ন হয়ে গেছে যার কারণে প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছেনা। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে জানে না, অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছে। প্রচলিত যে নিয়ম রয়েছে সেটি অনুযায়ী ভর্তি হতে হবে। আসন খালি থাকলেই কেবল ভর্তির সুযোগ মিলবে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম বার্তা২৪ কে বলেন,মাস্টার্স প্রিলিমিনারির শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পারছেনা কারন ফেনী কলেজের কোটা সম্পন্ন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একটি ভর্তি নিয়েছি, এতে অনার্সের যারা আবেদন করেছে তারা ভর্তি হয়ে যাওয়াতে সিট ফাঁকা নেই।ফলে প্রিলিমিনারির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ভর্তির নিয়মানুযায়ী কলেজে সিট যতগুলোই থাকুক শিক্ষার্থী যে কলেজের প্রথম পর্যায়ের আবেদনের পর সে শিক্ষার্থী সেই কলেজেই ভর্তির সুযোগ পাবে। এখন আসন পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়াতে প্রিলিমিনারি শিক্ষার্থীরা সুযোগ টা পাচ্ছেনা। তবে বিষয়টি অবগত যেহেতু হয়েছি এ বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বসে আলোচনা করে কি করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।