একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বামী-স্ত্রী

, নির্বাচন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী | 2023-12-07 17:18:01

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদধারী হয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন স্বামী-স্ত্রী। তারা হলেন, নরসিংদী-৩ (শিবপুর)’র সাবেক সংসদ সদস্য ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এবং তার স্ত্রী শিবপুর উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী ফেরদৌসী ইসলাম।

রাজনৈতিকভাবে নরসিংদী জেলার জন্য শিবপুর আসনটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। কেননা ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনটি বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্না ভূইয়ার নেতৃত্বে দখলে ছিল ২০০৬ পর্যন্ত। ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দাবী করেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, বর্তমান সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মাহবুবুর রহমান ভূইয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ২৫ বছরের সভাপতি প্রয়াত হারুন অর রশিদ খান।

ওই নির্বাচনে জহিরুল হক ভূইয়া মোহন বিজয়ী হয়। তখন তার প্রতিদ্বন্দী ছিলেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত আব্দুল মান্নান ভূইয়া। তখন তিনি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন। পরবর্তীতে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তারাই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দাবী করেন। তখনও জহিরুল হক ভূইয়া মোহন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করেন। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন।

সে সময় বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সেই ভোটকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ভোট ব্যাংক তৈরী করেন। এছাড়া বিএনপি নেতা ও আব্দুল মান্নান ভূইয়া পরিষদের সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম মৃধাকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করেন। আর বিএনপির ভোট সংগ্রহে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন আরিফ মৃধা। ফলে রাজনৈতিক সমীকরণে খুব সহজেই জয়লাভ করেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

২০১৮ সালের একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। তখনও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে বিএনপির শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় ও পাহাড়ী এলাকায় একটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী এজেন্ট হত্যাকান্ড সিরাজুল মোল্লাকে অভিযুক্ত করে সমালোচনার কারণে পরাজিত হন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের অভিযোগে এবার মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। এই আসনে এবার দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খান কিরন এর ছেলে ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফজলে রাব্বি খান।

এবারও দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। এবার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা কর্তৃক দুজনের মনোনয়নই বৈধ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নধারী ফজলে রাব্বী খান নৌকা প্রতীক পেলেও তিনি প্রথম বারের মতো প্রার্থী হওয়া এবং এলাকায় খুববেশী পরিচিত নন বলে মতামত দেন। আর এবারও বিএনপি নির্বাচনে মাঠে না থাকায় বিএনপির ভোট সংগ্রহের মাধ্যমে জয়ের আশা করছেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

দলীয় লোকজন আরও জানান, সিরাজ মোল্লা শিল্পপতি হওয়ায় যে কোনো কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনায় তার স্ত্রী ও উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী ফেরদৌসী ইসলামকে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম মাঠে না থাকার সম্ভাবনাই বেশী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর