নিষ্প্রাণ ভোটকেন্দ্র!

, নির্বাচন

সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2024-05-21 16:28:06

ভোটকেন্দ্রের প্রাণ যদি হয় ভোটার, তবে সেই ভোটারশূন্য কেন্দ্রগুলোকে নিষ্প্রাণই বলা যায়। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপের চট্টগ্রামের উপজেলা নির্বাচনের বেশিরভাগ কেন্দ্রে শুরু থেকেই ভোটার উপস্থিত কম লক্ষ্য করা গেছে।

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর পর্যন্ত হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হওয়া থেকে কেন্দ্রগুলোর চিত্র ছিল এমন। 

দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ কেন্দ্রে তেমন ভোটার দেখা যায়নি। এসময় ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অলস বসে থাকতে দেখা যায়। যদিও এ কেন্দ্রের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ফটিকছড়ি পৌর সদরের এ কেন্দ্রটিকে নিজেদের ভোট ব্যাংক মনে করে থাকেন প্রার্থীরা।


এই কেন্দ্রটির অদূরে ফটিকছড়ি সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুপুর দেড়টায় গিয়ে কোনো ভোটার দেখা যায়নি। দুপুর ১২টার পর্যন্ত এ কেন্দ্র ১৩ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার।

দুপুর ২টার দিকে সুন্দরপুরের ছিলোনিয়া কেন্দ্রে গিয়েও দেখা মিলে একই দৃশ্যের। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরের কোনো ভোটার পাওয়া যায়নি। একদম নিষ্প্রাণ ছিল এ কেন্দ্রটিও।

কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার মো. রায়হান নাছিম বলেন, 'এ কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৮ জন ভোটার রয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৮৪টি ভোট কাস্ট হয়েছে।'

তবে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বেশ কিছু কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

তিনি বলেন, 'আজকের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। আমরা হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির বেশ কিছু কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। ভোটের পরিবেশ খুবই ভালো। সুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিবেশ ভোটগ্রহণ হয়েছে। এবং জনসাধারণ ভোট দিতে এসেছেন। কিছু কিছু কেন্দ্র কাস্টিং কম হয়েছে, আবার কিছু কিছু কেন্দ্রে বেশি হয়েছে। মহিলাদের কিছু কেন্দ্রে কম, এটি গরম একটি কারণ হতে পারে।'


দুপুরের পর ভোটার আরও বাড়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমাদের ধারণা যে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে মধ্যাহ্ন ভোজের পর ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন। এখন পর্যন্ত যে ভোট কাস্টি হয়েছে সেটা আমার কাছে মনে হয়েছে যথেষ্ট। প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপের এই ভোটগ্রহণের সংখ্যা এখন পর্যন্ত তুলনামূলক ভালো।'

এদিকে নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট অ্যাপের তথ্যানুযায়ী, দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাটহাজারী ১০৬টি কেন্দ্রের বিপরীতে ৪০ কেন্দ্রের প্রদত্ত ভোটের হার মাত্র ১৮ শতাংশ। এছাড়া এই উপজেলায় সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৭ কেন্দ্রে ৮ শতাংশ ভোট পড়ে। একই অবস্থা ফটিকছড়ি উপজেলায়ও।
এ উপজেলায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪২ কেন্দ্রের বিপরীতে ৯৫টি কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের হার ছিল ১৪ শতাংশ। এ উপজেলায় প্রথম দুই ঘণ্টায় ১১০টি কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোটের হার ছিল মাত্র ৬ শতাংশ।

তিন উপজেলার মধ্যে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায় সবকটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাঙ্গুনিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন। এ উপজেলায়ও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি কেন্দ্র প্রদত্ত ভোটের হার মাত্র ৯ শতাংশ।


এবারে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে তিন উপজেলায় মোট ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৭৩৪ জন। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৮ জন। এতে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৩ জন এবং নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৮০৫ জন। অন্যদিকে ফটিকছড়ি উপজেলায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬০৭ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৮ জন, নারী ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৭ জন। আরেক উপজেলা রাঙ্গুনিয়ায় মোট ভোটার ২লাখ ৯৮ হাজার ৬৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৮ হাজার ১২২ জন এবং নারী ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৭ জন।

তিন উপজেলায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৩টি। এরমধ্যে হাটহাজারীতে ভোট কেন্দ্র ১০৬টি, ফটিছড়িতে ১৪২টি এবং রাঙ্গুনিয়ায় ৯৫টি। ভোটগ্রহণে জন্য তিন উপজেলা নিয়োগ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৭৪ জন কর্মকর্তা।

এছাড়াও ৬০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর