২৪ বছর আগে শরতের এক স্নিগ্ধ সকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে নেমে এসেছিলো শোকের ছায়া। সালমান শাহ নামে এক নক্ষত্রের পতনে সিনেমা জগতে নেমে এসেছিলো শূন্যতা। যে শূন্যতা চলে যাওয়ার ২৪ বছরেও হৃদয়ে হাহাকার তোলে। তার কর্মগুণে এখনও দর্শকদের হৃদয়ে চির অম্লান।
মাত্র ২৫ বছরে ঢালিউডে জনপ্রিয়তার ইতিহাস গড়া সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াপাড়ায়। বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, মা নীলা চৌধুরী করতেন রাজনীতি, একাধিকবার সংসদ নির্বাচনও করেছেন।
সালমান পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। একই স্কুলে তার প্রথম ছবির নায়িকা মৌসুমীও তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমণ্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও ধানমণ্ডির ড. মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। ১২ আগস্ট ১৯৯২ সালে তিনি তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন।
সালমান শাহর অভিনয় জীবন শুরু হয় বিটিভিতে, ১৯৮৫ সালে। হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় 'কথার কথা' নামক একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হতো তখন। সে অনুষ্ঠানের একটি গানে মাদকাসক্ত এক তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮৫ সালে বিটিভির ‘আকাশ ছোঁয়া’ নাটকের মাধ্যমে তার অভিষেক হয় টিভি নাটকে। ‘এরপর পরে দেয়াল’ (১৯৮৫), ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’ (১৯৮৫), ‘সৈকতে সারস’ (১৯৮৮), ‘নয়ন’ (১৯৯৫), ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ (১৯৯৬) নাটকেও অভিনয় করেন।
'নয়ন' নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। ‘প্রেমযুদ্ধ’ ও ‘ঋণশোধ’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেন তিনি।
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় সালমানের নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। মুক্তির পর দর্শক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল ছবিটি। পাশাপাশি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছিল।
এরপর ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘দেনমোহর’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান, ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘আনন্দ অশ্রু’র মতো ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
সালমানের মৃত্যু-সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল দেশ ও বিদেশের নানা পত্রিকায়। বিবিসি, এমনকি বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছিলো তার মৃত্যু-সংবাদ। ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয় সালমান শাহ ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা তারকা। ২৫ বছর বয়সী এই অভিনেতার মৃত্যুতে সারা দেশ কীভাবে শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন ও কয়েকজন তরুণীর আত্মহত্যার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
ধুমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটেছিল তার। মাত্র চারটি বছর ছিল তার অভিনয়জীবনের ব্যাপ্তি। কিন্তু এই চারটি বছরে যা করে গেছেন, রেখে গেছেন, মৃত্যুর ২৪ বছরেও তার শূন্যস্থানটা কেউ পূরণ করতে পারেনি।