ভালো মানের চলচ্চিত্র, ভালো নির্মাতা ও নির্মাণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভালো রিভিউ ও প্রশংসার জোয়ার। তবু কেন পর্যাপ্ত দর্শক সাড়া মিলছে না তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্টার সিনেপ্লেক্স। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও পাওয়া গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
স্টার সিনেপ্লেক্স এর পক্ষ থেকে এর বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “কোন এক বিচিত্র কারণে হলে দর্শক সংখ্যা আশানুরূপ নয়। সর্বশেষ ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রটির পর থেকে এ কাণ্ড ঘটছে। শুধু যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ বা ‘কালবেলা’ চলচ্চিত্র দু’টি তা নয়, ‘মিশন এক্সট্রিম’-এর ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছি দর্শক প্রত্যাশা অনুযায়ি নেই।”
কান চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে আসা চলচ্চিত্রটির অধিক প্রচারণায় দর্শক কি কোন কারণে হোঁচট খেয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে মেসবাহ বললেন, “শুধু ফেসবুক কেন্দ্রিক দর্শক নয়, অফলাইনেও প্রচারণা হয়তো প্রয়োজন।”
চলচ্চিত্র ‘মিশন এক্সট্রিম’ এর পরমর্শকারী প্রযোজক ও পরিবেশনা উপদেষ্টা জাহিদ হাসান অভির মতে, করোনা মহামারির দীর্ঘ বিরতির পর দর্শকের সিনেমা হলে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠতে সময় লাগছে।
সে প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘করোনার বাস্তবতায় মিশন এক্সট্রিমের দর্শক সাড়া সন্তোষজনক। চলচ্চিত্রটি সিনেপ্লেক্স নির্ভর নয়, সারাদেশের পঞ্চাশটি হলে মুক্তি পেয়েছে।”
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগে বড়পর্দায় মুক্তি পায় রাশিদ পলাশ পরিচালিত ‘পদ্মাপুরাণ’। করোনা মহামারির পর বড়পর্দায় এটি প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পায়। একই সময় জেমস বন্ডের ‘নো টাইম টু ডাই’ও বড়পর্দায় আসে। দর্শকও সাড়া দিয়ে হলে ফেরে। সে দর্শক কোথায়?
রাশিদ পলাশের মতে,“ দেখুন, করোনা মহামারির পর বড়পর্দায় ‘পদ্মাপুরাণ’কে দারুণ স্বাগত জানিয়েছে দর্শক। এরপর রেহানা মরিয়ম নূরকেও। কিন্তু তারপর থেকেই দেশি-বিদেশি বেশ কিছু ভালো চলচ্চিত্র একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ায় আমার ধারণা, দর্শক বিভাজিত ও দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এটা খুব শিগগিরই কেটে যাবে-এমনটাই প্রত্যাশা।”
লেখক ও সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী এ প্রসঙ্গে বলেন, “ডিসেম্বর মাস মানুষের নানা ব্যস্ততা, ছুটি একটু অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে।শিশুদের নতুন স্কুলে ভর্তি ও বই কেনা নিয়ে বেশ খরচার মৌসুম এটি। অনেকেই শীতের ছুটিতে বাড়ি ফেরে। তাই দর্শক একটু কম হতে পারে। তবে, এটিই যে কারণ তা নাও হতে পারে।”
চলচ্চিত্রের অফলাইন প্রচারণায় আগে পাড়ায় মহল্লায় মাইকিং সিনেমার প্রচার করতো সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ।এখন আর তেমনটা দেখা মিলছে না। সিনেপ্লেক্সও যে তা করছে না সে দায়ও স্বীকার করে নিলেন মেসবাহ।
তার আশা, একটু ধীরে হলেও মুখে মুখে ভালো চলচ্চিত্রের খবর দর্শকের কানে হয়তো পৌঁছাবে।
এদিকে দর্শকদের উৎসাহিত করতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দুই চলচ্চিত্র নূরুল আলম আতিকের চলচ্চিত্র ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’র জন্য ৫০শতাংশ ছাড়ে টিকিট বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানায়, মহান বিজয় দিবসের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টার সিনেপ্লেক্সের পক্ষ থেকে থাকছে তিনটি বিশেষ আয়োজন- বিজয়ের সিনেমায় থাকছে ৫০% ছাড় অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাগুলো দেখতে আপনি পাবেন টিকেটে ৫০% ছাড়। এছাড়াও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী এবং র্যাফেল ড্র’র আয়োজন করা হবে।
১৪-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে।