গত দুই বছর ধরে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বায়োপিক। যেটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু’ বলেই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে আসছে শুরু থেকে শেষ অবধি।
তবে বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মদিনে এসে বদল হলো এর নাম। জানা গেলো, ছবিটির নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’।
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন ভারতের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল।
ছবিতে বঙ্গবন্ধু হিসেবে আরিফিন শুভ ও শেখ হাসিনা সেজেছেন নুসরাত ফারিয়া। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করবেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে, খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সাহেরা খাতুন), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), প্রার্থনা দীঘি (ছোট রেনু), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া), মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান), এলিনা (বেগম খালেদা জিয়া) ও জায়েদ খানকে (টিক্কা খান)।
এই ছবিতে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিলো জ্যোতিকা জ্যোতির। পরপর দু’বার সিলেক্ট হওয়ার পরও শেষমেষ বাদ পড়ে যান তিনি। কিন্তু কেন তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে ছবিটি থেকে সেটি আজও জানতে পারেননি তিনি।
ছবিটির পোস্টার প্রকাশের একদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি ছবি দিয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট শেয়ার করেছেন জ্যোতিকা জ্যোতি। যেখানে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, “পোস্টার রিলিজ হলো, শিগগিরই হয়তো মুক্তি পেতে যাচ্ছে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব’ চলচ্চিত্র। জাতির পিতাকে নিয়ে এই চলচ্চিত্রটির জন্য অশেষ শুভকামনা থাকলো। খুব অপেক্ষায় আছি চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য। যেহেতু একটু যোগসূত্র ছিলো আমার এই সিনেমার সাথে তাই শেষ পোস্টটি দিয়ে জীবনের এই পর্বের ইতি টানছি।”
“মুলত আমি আমার সাদৃশ্য খুঁজে পাই #শেখ হাসিনা চরিত্রের সাথে। গঠন এবং মানসিকতা দুইদিক থেকেই। আমার স্ট্রাগল, এটিচ্যুড, নাক, হাসি, মুখের আদল (যদিও এখন মুটিয়ে গেছে) যেন অনেকটাই মেলে। সেই প্রিপারেশন নিয়েই অডিশন দিতে গেছিলাম শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব’ প্রজেক্টে। সেদিন অডিশন নিয়েছিলেন এই সিনেমার কাস্টিং ডিরেক্টর আর এক টেবিল বাংলাদেশি নতুন-পুরানো আমলা। কাস্টিং ডিরেক্টর আমাকে রেনু (বঙ্গমাতা) চরিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালেন, পছন্দ করলেন। রাতে হোয়াটস আ্যাপে আরো কিছু ছবি চাইলেন। আমি সকালেই আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধুকে অনুরোধ করে বাসায় নিজেই রেডি হয়ে ছবি তুলে পাঠালাম।আমি জানলাম ওনারা #রেনু কে পেলেন। এই ছবিগুলোই আপনারা অনেকে দেখেছেন অনলাইনে, পত্রপত্রিকায়। আবার অডিশনের ডাক পড়লো শ্যাম বেনেগালের সামনে।যদিও সেদিন অডিশনে না যাওয়ার জন্য কড়াভাবে আমাকে দূরে রাখা হয়েছিলো অডিশনের বাংলাদেশি টেবিল থেকে।কিন্তু কাস্টিং ডিরেক্টর এবং ডিরেক্টর স্বয়ং যখন আমার নাম ধরে খুঁজছেন তখন আমাকে জানানো হলো এবং গিয়ে হাজির হলাম। সামনে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল এবং এক টেবিল নতুন-পুরানো বাংলাদেশি আমলা। ভারত টিম হাসিমুখে আমাকে টিকমার্ক দিলেও, বাংলাদেশী টিমের মুখে সেই কলমের কালি যেন ছাই হয়ে উড়ে পরলো! কিছুদিনের মধ্যেই আমি বাদ পরলাম।”
“কান্নাভরা চোখ, রুদ্ধ গলা, কাঁপা কাঁপা বুক আর এলোমেলো পায়ে এই যাদুর শহরে আমি এদিক সেদিক ছুটলাম কিছুদিন।কোন কিছুরই কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। এতটাই আপসেট ও মরিয়া হয়েছিলাম যে ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবো, অডিশনের ছবিগুলো দেখাবো। নিশ্চই তিনি তার মাকে চিনে নেবেন। কিন্তু তার কাছে এই কাজে যাওয়া কতটা সঠিক হবে বুঝতে পারছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারী, আমার শ্রদ্ধেয় সিনিয়র জানালেন এই চলচ্চিত্রের পুরো দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড: গওহর রিজভী। তার সাথে যোগাযোগ করতে।তিনি ভালো মানুষ, সঠিক সাজেশন দিতে পারবেন। কলিজা ভরা সাহস আর জেদ নিয়ে যোগাযোগ করলাম তাঁর সাথে, একগাদা অভিযোগ নিয়ে তার সামনে হাজির হলাম। আমার অডিশনের ছবি দেখে তিনিও বিস্মিত হলেন। আমার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুর জন্য সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন তিনি অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন, নেক্সট মিটিংয়ে আলোচনায় বিষয়টি তুলবেন। তিনি আরো জানালেন প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন একদম স্বাধীনভাবে পরিচালকের ওপর সব ছেড়ে দিতে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে। তারপর আর কি বলবো। ঘাটে ঘাটে কত জল গড়ালো...আমলাতন্ত্রের কাছে হেরে গেলো সব নির্দেশনা...ক্ষমতা!”
“দুঃখ/মজার ব্যাপার হলো এই সিনেমার শ্যুটিং শুরুর ১৮দিন আগে আবারো আমার সাথে যোগাযোগ করা হলো, আবারো সিলেক্ট করা হলো। ৩দিন পর এগ্রিমেন্ট। ৫দিন পর জানলাম আমি আবারো বাদ!!”
“অডিশনের পর আবার দেখা হয়েছিলো পরিচালক শ্যাম বেনেগালের সাথে, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১। ২বার সিলেকশন থেকে বাদ পড়ার পরও তার কারণ অজানা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছিলো। সাহস করে বলেই ফেললাম তাকে, জানতে চাইলাম কারণ। তিনি বললেন আমি নাকি সেসময় অন্য প্রজেক্ট নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম! মানে তাকে বলা হয়েছিলো আর কি!!!”
“আমি আবারো দুঃখ ভুলে সোজা হলাম। আবারো নিজেকে বুঝালাম আমার জন্য যা বরাদ্দ দুনিয়াতে, তার বেশী আসলে হবে না। মাঝে শুধু একটু টানাপোড়েন! এখন আমি সামলে উঠেছি। বরং মনে হচ্ছে যা হয় ভালোর জন্যই হয়।”