গত ৮ মার্চ স্থানীয় সময় বিকেল ৪:৪৫ এ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের স্যান হোসে শহরের হ্যামার থিয়েটার সেন্টারে ইউএস প্রিমিয়ার হলো বাংলাদেশী নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু নির্মিত ওয়ান শট মুভি 'নট আ ফিকশন'-এর।
অস্কার কোয়ালিফাইং উৎসব সিনেকুয়েস্ট ফিল্ম এন্ড ভিআর ফেস্টিভ্যালে নিজের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার প্রদর্শনী শেষে সঞ্চালকের আমন্ত্রণে মঞ্চে ওঠেন নির্মাতা সিজু। এর পর সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে সিনেমা নিয়ে কথা বলা শেষে পুরো হল ভর্তি দর্শকদের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা মেলে ধরেন তিনি।
এই ঘটনার পরে কানাডা, মেক্সিকো, চীন, কলম্বিয়া, ইতালি, সাউথ কোরিয়া-সহ নানান দেশ থেকে আসা নির্মাতা, কলাকুশলী এবং মার্কিন দর্শকদের করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো থিয়েটার।
নিজের সিনেমার ইউএস প্রিমিয়ার প্রসঙ্গে নির্মাতা সিজু জানান, 'হলিউডের অস্কার কোয়ালিফাইং এই উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আয়োজিত শর্টস প্রোগ্রাম ওয়ান এ জায়গা করে নিয়েছে সিনেমাটি। প্রিমিয়ার শেষে নানান দেশের নির্মাতা, কলাকুশলী এবং দর্শকেরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন সিনেমাটি নিয়ে। মাত্র ১০০ ডলারেরও কম বাজেটে নির্মিত ওয়ান শট এই সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আগ্রহ দেখাচ্ছেন দর্শক, সমালোচকেরা।
সিনেকুয়েস্টের এবারের আসরে একমাত্র ওয়ান শট ফিল্ম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি।
এবারের উৎসবে অংশ নিয়েছেন ৪৫ টি দেশের নির্মাতা, কলাকুশলীরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে সঞ্চালক তাকে জিজ্ঞেস করেন, পুরো সিনেমাটি ঠিক কি কারনে গাছের দৃষ্টিভঙ্গিতে নির্মাণ করলেন তিনি?
জবাবে নির্মাতা জানান, বাজেটের অভাবে এমনটা করেছেন তিনি। কেননা মূল সিনেমায় একটা জিপ গাড়ির প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু শ্যুটিং এর সময়ে এই গাড়ির বাজেট ছিলো না তার কাছে। তাই তিনি পুরো ব্যাপারটা ভিজ্যুয়ালি না দেখিয়ে শুধুমাত্র সাউন্ড ডিজাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছবিটির শ্যুটিং করেন তিনি, তখনো ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় সাউন্ড ডিজাইনার, কালারিস্ট, সিজিআই আর্টিস্টদের সঙ্গে পরিচয় ছিলো না তার। বাজেট এবং যোগাযোগের অভাবে প্রায় ২ বছর রাশ ফুটেজটা নিজের ল্যাপটপেই ফেলে রাখেন তিনি।
এরপর দেশের প্রখ্যাত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ পাবার পরে ছবিটির কাজ আবারও শুরু করেন তিনি। ছবিয়ালে যুক্ত হবার পরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার বিজয়ী সাউন্ড ডিজাইনার রিপন নাথ এবং রনি সাজ্জাদ যুক্ত হন এই ছবির সঙ্গে এবং বিনামূল্যেই করেন পুরো ছবির কাজটি। এ ছাড়া এডিট এর কাজ করেন লিওন রোজারিও এবং কালার করেন রাশেদুজ্জামান সোহাগ।
সিলিকন ভ্যালির প্রাণকেন্দ্রে চলমান এই উৎসবের বেস্ট ড্রামাটিক শর্টস বিভাগে নট আ ফিকশন এর প্রিমিয়ারের শো এর পরে সবাই বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ছবিটি নিয়ে। আগামী ১৭ মার্চ রাত ৯ টায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া থিয়েটার সেন্টারর উৎসবের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হতে যাচ্ছে।
এই উৎসবে বেস্ট ড্রামাটিক শর্টস বিভাগে পুরষ্কার পেলে ছবিটি সরাসরি কোয়ালিফাই করবে পৃথিবীর সবচাইতে বড় উৎসব অস্কারে।
প্রসঙ্গত, সিজুর সঙ্গে এই ছবির সহ-প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার, সাংবাদিক এবং গোল্ডেন গ্লোবসের সম্মানিত ভোটার সাদিয়া খালিদ রীতি।