কোটা আন্দোলন, কারফিউ, ইন্টারনেট, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দেশের যখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ভাইরাল উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী। চ্যানেল আইয়ের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে এক অতিথির ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হয়েও অসম্ভব ধৈর্যের প্রমাণ দিয়েছেন এই উপস্থাপিকা। এই ব্যাপারটিই নেটিজেনদের মন ছুঁয়ে গেছে। সেই অনুষ্ঠানের কয়েকটি ক্লিপিংস এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। এই ঘটনা নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন দীপ্তি।
কী ঘটেছিল সেদিন?
আমি সঞ্চালকের চেয়ারে যখন বসি তখন অতিথিকে সম্মান করে দর্শক যে জিনিসগুলো জানতে চায় সেই প্রশ্নই করার চেষ্টা করি। সেদিনও তাই করেছি। এটাই হয়তো মানুষ ভালোভাবে নিয়েছে। সবাই প্রশংসা করছে। তবে আমি খুব মহান কিছু করিনি।
দর্শকের একটিই প্রশ্ন, এতো ধৈর্য কিভাবে এ উপস্থাপিকার?
আমার বাসায় কিংবা অনুষ্ঠানে যে মানুষটি অতিথি হয়ে আসেন, তিনি আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তি। তাই তাকে আমি সর্বোচ্চ সম্মানটাই দেওয়ার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে তার আচরণ আমাকে প্রভাবিত করে না, কখনও করেনি আগামীতেও করবে না। সবসময় চেষ্টা করি যেন নিজের জায়গাতে ঠিক থাকতে পারি। সেদিনও চেষ্টা করেছি, পেরেছি কি না জানি না।
ধৈর্য ধারণ করা মানে কিন্তু এটা বোঝায় না, আমি বোল্ড কিংবা সাহসী নই। বরং আমার মনে হয়, একটি শক্তিশালী কথা চিৎকার করে না বললেও সেটা শক্তিশালী। অন্যদিকে যদি কথাটি অসত্য কিংবা দুর্বল হয়, তাহলে সেটা চিৎকার করে বললেও সেটা দুর্বলই থেকে যায়। আমি দায়িত্ব নিয়ে চ্যানেল আই’কে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করে কাজ করি। সেদিনের টক শোতেও আলাদা কিছু করিনি। পেশার প্রতি দায়বদ্ধতাটুকুই পালন করেছি। তবুও যারা এই পর্বটি বা যে কোনও পর্ব দেখে প্রশংসা করেছেন, তাদের প্রতি ভালোবাসা। অনেকে আমাকে অভিনন্দন দেওয়ার জন্য ফোন করছেন, কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। কারণ যখন কাজ করি, কখনই সেই সময় অন্য কোনদিকে আমি ফোকাস করতে পারি না।
আপনার উপস্থাপনার প্রশংসা করছে সবাই। নিজেকে কিভাবে গড়ে তুলেছেন?
আমি বলবো না খুব ভালো উপস্থাপক হয়ে গেছি। তবে দর্শক যেহেতু পছন্দ করছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এটা আসলে একদিনে হয়নি। ছোটবেলা থেকেই একটা চর্চার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বাবা-মা দারুণ সংস্কৃতিমনা মানুষ। বাবা আবৃত্তি করতে ভালো। ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি শিখেছি ও চর্চা করেছি। স্কুল, কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগীতা করেছি। নানা সাংস্কৃতিক এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি দীর্ঘদিন ধরে। দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে আমার সবচেয়ে সহায়ক সঙ্গী হয়েছে বই। যখনই সময় পাই বই পড়ি। আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি প্রেজেন্টারের বই পড়া উচিত। কারণ বই আমাদের মেধা বাড়াতে সাহায্য করে আবার উপস্থাপনার জন্য এ বিষয়টি খুবই উপকৃত।
আপনি আলোচনায় আসার পর আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতে চাইছে অনেকে...
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায়। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের বিভাগে ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। চ্যানেল আইতে কাজ করেন অনেকদিন হলো। উপস্থাপনার পাশাপাশি পাশাপাশি লেখিলেখি করি। ২০২১ সালে অমর একুশে বইমেলায় আমার লেখা প্রথম বই ‘দীপ্ত কৈশোর’ প্রকাশ করে মাতৃভাষা প্রকাশনী।