দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সর্বত্র ক্ষমতার রদবদল ও নানা ধরনের সংস্কার হচ্ছে। তাহলে কেন বাদ পড়বে শোবিজ অঙ্গন? এতোদিন বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি কিংবা নেটিজেনদের কটাক্ষ পর্যন্ত থাকলে এবার ফ্রন্ট লাইনে চলে এসেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ বনাম সংস্কারকামী শিল্পীদের অবস্থান!
‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ হলো ছোটপর্দার শিল্পীদের সংগঠন। ছোটপর্দায় যারা অভিনয় করেন তাদের অধিকার আদায়, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও সমস্যা সমাধানে কাজ করে এই সংগঠন। আর সংস্কারকামী শিল্পীরা হলেন সদ্য গড়ে ওঠা একটি গোষ্ঠী। বললে ভুল হবে না, সে সকল শিল্পীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে তাদের মধ্যে একাংশ হলো এই সংস্কারকামী শিল্পীরা।
এমন নয় যে অভিনয়শিল্পী সংঘের কেউ ছাত্রদের পক্ষে রাজপথে দাঁড়াননি। কিন্তু এই আন্দোলনে অভিনয়শিল্পী সংঘের যে ভূমিকা রাখার দরকার ছিলো না তারা পারেননি বলেও সম্প্রতি কথা উঠেছে। এমনকি এই সংগঠনের কোন কোন শিল্পী সরাসরি ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান করেছেন। ফলে অভিনয়শিল্পী সংঘ আস্থা হারিয়েছে খানিকটা। যার ফলে এই সংগঠনের কিছু সংস্কার দাবি করছে একদল শিল্পী।
তারই প্রেক্ষিতে একটু আগে ফেসবুকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন লিখেছেন, ‘আজ (৭ সেপ্টেম্বর) পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার সময় আমরা সমমনা সংস্কারকামী পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা বসেছিলাম এবং পারস্পরিক আলোচনা এবং সেখানে উপস্থাপিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আমরা চাই দেশের মানুষ সেই সিদ্ধান্তগুলো জানুক এবং নিজেদের মতামত জ্ঞাপন করুক।’
এরপর বাঁধন জানান সেই মিটিংয়ে তারা পাঁচটি বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেগুলো উল্লেখ করে বাঁধন যা লিখেছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘আমরা ফাইনালি পাঁচটি বিষয় সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
১. অভিনয় শিল্পী সংঘ বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকবার আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তাদের চিঠি পাঠাই। এরপর তারা জানান যে শুধুমাত্র সংগঠনের সদস্য ছাড়া কারও সঙ্গে তারা বসবেন না। কিন্তু আমরা সকল সাধারণ পেশাদার অভিনয়শিল্পীরা একসাথে আলোচনা করে সংস্কার করতে চেয়েছি। তাই আজ ৭ তারিখ আমরা তাদেরকে চায়ের দাওয়াত দিই। কিন্তু তারা ফিরতি চিঠিতে জানান যে সংগঠনের সদস্য যারা নন তাদের সাথে আলোচনা করবেন কিনা সেটা সাধারণ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানাবেন। সংস্কারকামী শিল্পীদের সংগঠনভুক্ত ‘সদস্য’ কিংবা ‘অ-সদস্য’ এই সকল শব্দ ব্যবহার করে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। আমরা তাদের বলতে চাই, বাংলাদেশের সকল অভিনয়শিল্পীকে ‘সদস্য’ ও ‘অ-সদস্য’ এই ধরনের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিতে না দেখে ‘অভিনয়শিল্পী’ হিসেবে দেখুন। আপনাদের সাথে কথা বলার অধিকার যেন সবাই পায় সে ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে এবং যে ঘটনা আপনারা আমাদের সঙ্গে ঘটিয়েছেন তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেবেন।
২.পরিবর্তনশীল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনমুখর বাংলাদেশে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলি, কার্যকরী সদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মধ্যে যারা একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান নিয়ে এবং সমস্ত মানবিক প্রসঙ্গগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে অমানবিক-অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন, তাদের সবাইকে পুরো জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের সাথে বসতে হবে।
৩. উল্লেখিত এক এবং দুই নম্বর প্রস্তাবে যদি তারা অনীহা প্রকাশ করেন তাহলে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে (পারলে আজ বা কালকের মধ্যে) বর্তমান কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং সকলকে পদত্যাগ করতে হবে।
৪. পদত্যাগ পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন রিফর্মেশন কমিটি গঠন হবে এবং সেই কমিটির আওতায় আগামী ৬ মাস সময়ের মধ্যে আমাদের সংস্কার প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই সংগঠনটিকে কিভাবে আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সকল পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরা যায় তা বাস্তবায়ন করার ব্যবস্থা করবে। পরবর্তী নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং পরিবেশ তৈরি করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে।
৫. আমরা সংস্কারকামী সমন্বিত সাধারণ অভিনয়শিল্পীবৃন্দের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃশ্যমাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আহ্বান জানাচ্ছি যে- আসুন আমরা একযোগে আমাদের সকল অভিনয়শিল্পীর স্বার্থ, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে যে সংগঠন সেই ধরনের একটি সংগঠনের রূপরেখা প্রণয়ন করি। আসুন সবাই মিলে কথা বলা শুরু করি এবং নতুন করে বৈষম্যহীন একটি সংগঠন নির্মাণে একসঙ্গে এগিয়ে যাই।’’