মাদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা!

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাফা কবির, মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, তানজিন তিশার নাম উঠে এসেছে মাদককাণ্ডে

সাফা কবির, মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, তানজিন তিশার নাম উঠে এসেছে মাদককাণ্ডে

মাদকসংশ্লিষ্টতা নিয়ে তোলপাড় চলছে শোবিজ অঙ্গনে। মাদকাসক্ত মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই এখন এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, শোবিজের অনেকেই শুধু মাদক সেবন নয়, মাদক কারবারেও জড়িত। ফলে মাদকসংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে- এমন আতঙ্কে ভুগছেন তাদের অনেকেই। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাকে হঠাৎ করেই সরিয়ে দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা নানাভাবে তাদের প্রভাব খাটাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তলবের জন্য ব্যবস্থা নেবেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সুনিধি নায়েক

সূত্র জানায়, মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে তথ্যপ্রমাণসহ সাফা কবির, মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া, তানজিন তিশা এবং সুনিধি নায়েকের নাম বেরিয়ে আসে। একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিয়মিত মাদক সংগ্রহ করে আসছিলেন। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিজ্ঞাপন

অনেক পরিচিত নায়ক, নায়িকা ও মডেল মাদক সেবন এবং মাদক কারবারে জড়িত বলে জানা গেছে। ঘটনা প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএনসি ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, দীপকে গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাফা ও টয়া ব্যক্তিজীবনেও খুব ভালো বন্ধু

ডিএনসিসহ একাধিক সূত্র বলছে, গত ৪ ডিসেম্বর এডি রাহুল সেনের নেতৃত্বে রমনা সার্কেলের একটি দল গুলশান ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রেট্রাহাইড্রো ক্যানাবিনলযুক্ত কুশ, ক্যানাবিনলযুক্ত ক্যান্ডি, তরল ক্যানাবিনয়েড, ম্যাজিক মাশরুম, মাদক বিক্রয়ের অর্থসহ তিন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার কাজী মারুফুল ইসলাম রাজ (২৬) এবং ইসমাইল বেপারী (৩০) গুলশান এবং সাকিব নঈম (২৭) ধানমন্ডি এলাকার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হয়েছে।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া কাজী মারুফুল ইসলাম রাজ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেন। তিনি গুলশানের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার কাছে শোবিজ অঙ্গনের অনেকের মাদক সম্পৃক্ততার খবর মেলে। তবে এর আগে ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন অরিন্দম রায় ওরফে দীপ (২৬)। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি, কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে দুই দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডারসংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়। চ্যাটিংয়ের কয়েকটি ছবি এ প্রতিবেদকের কাছেও রয়েছে।

তানজিন তিশা

সূত্র বলছে, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগের ছায়াতদন্ত করছিল একাধিক সংস্থা। মূলত তাকে অনুসরণ করতে গিয়েই একই চক্রের সন্ধান পান তদন্তসংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে দীপ গ্রেপ্তারের পর তার সেলফোনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাফা, টয়া, তিশা এবং গায়িকা সুনিধির নাম সেভ করা দেখেই চোখ কপালে ওঠে সংশ্লিষ্ট অনেকের। দীপের সেলফোনেই তাদের নিয়মিত মাদকের অর্ডার দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় সেই সেল নাম্বারগুলো ওই অভিনেত্রীদের, যা নিশ্চিত হন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

শোবিজ অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তির মত, শোবিজ তারকারা প্রথমে স্লিমিংয়ের জন্য ইয়াবাসহ বেশ কিছু বিদেশি মাদক নিয়ে থাকেন। একপর্যায়ে তারা আসক্ত হয়ে পড়েন। গত ১০ বছরে মিডিয়া অঙ্গনে কাজ শুরু করেছেন, তাদের বেশির ভাগই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের নিয়মিত মাদক প্রয়োজন হয়। এদের আবার অনেকে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। তাদের বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ভাইরালও হয়েছে। তবু তারা নির্বিকার। জানা গেছে, বনানী মাঠের পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্ট, বনানী প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট এর কাছাকাছি একটি ভবনের রুফটপের সিসা বারে নিয়মিত মধ্যরাতে মাদক সেবন করেন শোবিজের অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রী। গুলশান পিংক সিটির পেছনে একটি রেস্টুরেন্টেও নিয়মিত মাদক নেন অনেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী। ডিএনসি এবং বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও বিষয়টি অবগত। তবে রহস্যজনক কারণে তাদের নীরব থাকতে দেখা যায়।

সাফা কবির

সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ২৭ আগস্ট রাত ৩টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এবং গুলশান-১ এর মাঝামাঝি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অভিনেতা শরিফুল রাজ, খায়রুল বাশার, জুনায়েদ বোগদাদী ও অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। একাধিক সংস্থার সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তারা নেশাগ্রস্ত ছিলেন। শরিফুল রাজ নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তারা গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া গত ১০ বছরে শোবিজ অঙ্গনে আসা অনেকেই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই সেবনের পাশাপাশি মাদক কারবারেও জড়িয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান এবং বনানীকেন্দ্রিক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকেই এমডিএম, এলএসডি এবং কুশ নামের উচ্চ আসক্তিসম্পন্ন মাদকের দিকে ঝুঁকছেন। চোরাইপথে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, থাইল্যান্ডসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এসব মাদকের চালান আসছে। স্ল্যাপচ্যাট, মেসেঞ্জার বা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে এগুলো বিক্রি করা হয়। গোপনীয়তার জন্য বিভিন্ন সাংকেতিক নামে এসব মাদক বিক্রি করা হয়। যেমন এমডিএম ‘ই’ নামে, এলএসডি ‘অ্যাসিড’ এবং এক ধরনের তরল গাঁজা টিএসসি নামে কেনা-বেচা হয়। ইলেকট্রিক সিগারেটের মতো ভেপ আকারে তরল গাঁজা সেবন করা হয়। এসব নতুন পুরাতন মাদকে শোবিজের অনেকেই আসক্ত। উচ্চাকাঙ্ক্ষী তারকারা দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য মাদকের কারবারে ঝুঁকছেন। ব্যবসা করতে করতে একসময় নিজেই সেবক হয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রেমে ভাঙন বা সংসারে ভাঙনের কারণেও অনেক নায়িকা মাদকে ঝুঁকছেন।

মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া

এদিকে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে এখনো কেউ কোন কথা বলেননি। শুধু টয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে এখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে ডাকা হয়নি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।